Breaking News
Home / TRENDING / নীতিশের মতো মমতাও আবার এনডিএতে! চলছে জল্পনা

নীতিশের মতো মমতাও আবার এনডিএতে! চলছে জল্পনা

‘ঝড়ের ঠিকানা- পর্ব ১১’

সঞ্জয় সিংহ   :

(জনপ্রিয় এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক  সঞ্জয় সিংহের স্মৃতিসরণিতে অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ) : 

সিপিএমের সন্ত্রাস মোকাবিলাকে সামনে রেখে একদা বিজেপি-র হাত ধরেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় বিজেপির পায়ের তলায় রাজনৈতিক মাটি তৃণমূলনেত্রী শক্ত করেছিলেন বলে অনেকেই তাঁকে এখনও কটাক্ষ করেন। এখন বিজেপি-র বিরুদ্ধে তাঁর ‘ রনংদেহি’ ভাবমূর্তি দেখেও অনেকেই সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “এসব ওপর ওপর রাগ দেখানো। ভিতরে ভিতরে পুরনো জোট সঙ্গীদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া আছে।”
কেন মমতা-বিরোধীরা এসব বলেন তা তাঁদের ব্যাপার। তবে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতিশকুমারের বিজেপি-র ঘরে প্রত্যাবর্তনের পর, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ভবিষ্যতে কোন পথে হাঁটবেন তা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। কিন্তু নীতিশকুমার আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে এক নন, এটা মাথায় রাখা দরকার। যে সময় মমতাদি বিজেপি-কে সমর্থন করেছিলেন বা জোট সঙ্গী হয়েছিল তৃণমূল, তখন বাংলার শাসনভার তাঁদের হাতে ছিল না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার পুরনো জোটসঙ্গী বিজেপি-র দিকে হাত বাড়াবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন বা জল্পনা তৈরি হওয়ার পিছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দিল্লি গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার পর্ব চলে। এই সাক্ষাৎকার একেবারেই শিষ্টতা ও সৌজন্যের ব্যাপার। কিন্তু ইদানীং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রবল আক্রমণ মমতাদি করছেন। দিল্লিতে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়েছে ২৫ জুলাই। ঠিক তার ৪ দিন আগে ধর্মতলায় দলীয় সমাবেশ থেকে মমতাদি হুংকার দিয়েছেন, “বড়দাকে ২০১৯ সালে সরাতে হবে।” আগামী ৯ অগস্ট থেকে ৩১ অগস্ট ‘বিজেপি ভারত ছাড়ো’ কর্মসুচি পালনের ডাকও তিনি দিয়েছিলেন ওই সমাবেশে। কিন্তু দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে দিদির সাক্ষাতে সেই তিক্ততার কোনও ছায়া কেউ দেখেনি।
তৃণমূলনেত্রী অবশ্য স্পষ্ট বলেছেন, “দার্জিলিং ও রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। দার্জিলিং এবং বন্যা পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো আমার সংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।” একেবারেই ঠিক কথা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পরেই নীতিশকুমার যে ভাবে লালুপ্রসাদের আরজেডির হাত ছেড়ে বিজেপি-র ঘরের দিকে রওনা দিয়েছেন এবং এনডিএ বিরোধী ১৮ দলের জোটের নড়বড়ে অবস্থা দেখেই রাজনৈতিক মহলের একাংশের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে এমনও আশঙ্কা করেছেন ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে ১৮ দলের জোট টিকবে তো!
কেন এমন আশঙ্কা? প্রথমত, ১৮ দলের জোটে সিপিএম-কে নিয়ে তৃণমূলনেত্রীর অবস্থান। ধর্মতলায় সমাবেশ থেকেই মমতাদি আওয়াজ তুলেছেন, সিপিএমকে বাংলা ছাড়া করতে হবে। তার ওপর গত ২৫ জুলাই দিল্লিতে রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য ফের প্রার্থী হওয়ার জন্য মমতাদিকেই ধরেন। বাংলা থেকে রাজ্যসভায় ৬ আসনের মধ্যে ৫টিতে তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছে। ষষ্ঠ আসনের জন্য তাঁকে মনোনীত করতে মমতাদিকে অনুরোধ করেন প্রদীপবাবু। তৃণমূল এবং কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রদীপবাবুর অনুরোধে মমতাদি এসএমএস করেন সনিয়া গান্ধীকে। বাম নয়, তাঁর ‘স্বাভাবিক সঙ্গী’ যে কংগ্রেস এই বার্তা দিতেই মমতাদি প্রদীপবাবুর অনুরোধ মেনেছেন বলে সূত্রের খবর। ফলে, ১৮ দলের জোটের মধ্যেই মমতা দূরত্ব তৈরি করছেন বলে বামেদের একাংশের অভিযোগ। অর্থাৎ বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্রে শান দেওয়ার শুরুতেই তা নষ্ট করেছেন তৃণমূলনেত্রী বলে তাঁদের অভিমত।
আর এই প্রেক্ষিতেই নতুন করে বিজেপির পরোক্ষ রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করার চেষ্টা চালান হল বলেও ওই বাম নেতারা অভিযোগ করছেন। এই প্রসঙ্গে তাঁরা টেনে এনেছেন ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সালের ইতিহাস। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পরে মমতাদি বিজেপি-র দিকে তাঁর সমর্থনের হাত বাড়িয়েছিলেন এবং ১৯৯৯-তে এনডিএ সরকারের রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন। ফলে, তাঁর বিজেপি প্রীতি নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ চর্চা শুরু করেছেন। এনডিএ-র সঙ্গে ত্যাগ করার পরে মমতাদি অবশ্য সবিস্তারে বলেছিলেন কেন তিনি বিজেপির-র সঙ্গী হয়ে এনডি-র শরিফ হয়েছিলেন। আর কেনই বা এনডিএ ছেড়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল করেছিলেন। রাজ্যে তখন সিপিএমের র্দোদণ্ডপ্রতাপ। সেই শক্তিশালী সিপিএমের সন্ত্রাস রুখতে মমতাদির বড় ভরসা ছিলেন আটলবিহারী বাজপেয়ী। মমতাদি বার বার বলেন, “অটলজিকে আমি শ্রদ্ধা করি।” কেন্দ্রে তাঁর নেতৃত্বে এনডিএ সরকার তখন। তাই মন্ত্রিসভায় যোগ না দিয়ে বাইরে থেকে এনডিএ সরকারকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয় সদ্য প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল। দলের সাংসদ ছিলেন সাত। মমতাদির ব্যাখ্যা ছিল, সেদিন কার্যত রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় এনডিএ সরকারকে সমর্থন করেছিলেন তাঁরা। সেই সরকার স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ১৩ মাস। ১৯৯৯ সালে আবার ভোট হয় এবং তৃণমূলের সাংসদ সংখ্যা ৭ থেকে বেড়ে হয় ৮। তৃণমূল এবার এনডিএ সরকারে যোগ দেয়। মমতাদি রেলমন্ত্রী হন। এবার কী বললেন মমতাদি? বললেন, “সেইসময় জনাদেশ ছিল সরকারে যোগ দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।”
তহলকা-কেলেঙ্কারির প্রতিবাদ জানিয়ে ১ বছর ৫ মাসের মধ্যে সেই মন্ত্রীসভা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন মমতাদি। পরে আবার যোগ দিয়েছিলেন। ২০০৪ লোকসভা ভোটের আগে আবার বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন তিনি। তারপর থেকে অহি-নকুল সম্পর্ক। বিশেষ করে ২০১২ সালে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা তৃণমূলের হাতে আসার পর বিজেপি-র সঙ্গে তিক্ততা অনেক বেড়েছে মমতাদির। কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত যেমন বাম আমলে ছিল, এই আমলেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
অবশ্য গত ২৫ জুলাই মোদী-দিদি সাক্ষাতের পর এবং নীতিশকুমারের লালু-সঙ্গ ত্যাগের ঘটনায় অন্য রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে আবার চর্চা শুরু হয়েছে। কিন্তু নীতিশকুমারের সঙ্গে দিদির একদা আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক ছিল। তিনি নীতিশের পথে কখনই হাঁটবেন না বলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেরই ধারণা। কারণ, এখন বিজেপি-ই তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ। রাজনৈতিক অসম্ভব বলে কিছু হয় না বলে বিশেষজ্ঞরা বলেন। বিশেষ করে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের লেখ-চিত্র দেখে হলফ করে কেউ বলতে পারবেনা, শেষ পর্যন্ত জল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
এনডিএ ছাড়ার পর আবার তৃণমূলনেত্রীর সেই ঘরে ফেরার সময় কী হয়েছিল তা আগামীবার শোনাব।

 

লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

আরও পড়ুন :-

ভারত বনাম ভারতের লড়াই, জিতবে কে!

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *