দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়
পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে রাহুল গান্ধির নতুন উদ্যোগে মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস রাজনীতিতে খর্ব হতে পারে অধীর চৌধুরীর গুরুত্ব। এআইসিসি সূত্রে এখনও পর্যন্ত এইটাই খবর। বাংলা নববর্ষের (১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫) মধ্যেই গঠিত হবে প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন কমিটি। রাহুল ও খাড়গে উভয়েই চাইছেন পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাগুলিকে সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করে নিতে। ফলে, মুর্শিদাবাদ সহ ভাঙা পড়বে সবকটি জেলা। তাই মুর্শিদাবাদ জেলায় অধীরের একচ্ছত্র আর থাকবে না। আধিপত্য ভাগ হয়ে যাবে আরও এক সাংগঠনিক জেলা সভাপতির সঙ্গে।
একই সঙ্গে রাহুল চাইছেন ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ইস্যু ভিত্তিক আক্রমণে জোর দিক কংগ্রেস। ব্যক্তি আক্রমণ না করে ইস্যুভিত্তিক গঠনমূলক সমালোচনা ও কাজের নিরিখে সামগ্রিক ভাবে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তোলার পক্ষে রাহুল। কোন বিধানসভায় কতটা কাজ হয়েছে, সেই বিধানসভার বিধায়কের ব্যর্থতা কতটা, রাহুল চাইছেন এই বিষয়গুলোই তুলে ধরতে।
সূত্রের মতে, মমতার অন্ধ বিরোধিতা, মুখ্যমন্ত্রীর নামে কটূকথা বলে আসর জমানোর চেষ্টা, এইসব একেবারেই চাইছে না শীর্ষ নেতৃত্ব।
এদিকে অধীর নিয়ম করে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান। সূত্রের খবর, এটাও না-পসন্দ দিল্লির।
প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি মমতার প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছেন রাহুল? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর পাওয়া যাচ্ছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার কাছে। তাঁর কথায়, নরম নয়। বলা ভাল কৌশল বদল। মমতার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তাই বলা কোনও কাজের কাজ নয়। পছন্দ হোক বা না হোক, এটা মানতেই হবে নেতা হিসেবে মমতার স্তর টা অনেক ওপরে। রাজ্যের দরিদ্র ও সংখ্যালঘুদের কাছে মমতার বিশ্বাসযোগ্যতা এখনও পর্যন্ত প্রশ্নাতীত। তাই কংগ্রেস নেতৃত্বের অনুধাবন মমতাকে ব্যক্তি আক্রমণ করে আখেরে কোনও লাভ হচ্ছে না। বরং হিতে বিপরীত হচ্ছে। তার চেয়ে অনেক ভাল এলাকা ধ’রে ধ’রে, ইস্যু ধ’রে ধ’রে মানুষের কাছে যাওয়া এবং কংগ্রেস কী ভাবে বিকল্প হতে পারে সেই কথা মানুষকে বোঝানো।
ছাব্বিশের ভোট রাহুলের কাছে ১০০ মিটারের দৌড় নয়। রাহুল রয়েছেন ম্যারাথন মেজাজে! দিল্লির আর একটা সূত্রের মতে, রাহুল এবার স্লো বাট স্টেডি লাইন নিতে চান। বাম অথবা তৃণমূল, উভয়ের সঙ্গে জোটের ভাবনাও এখন বইয়ের তাকে তুলে রাখতে চান রাহুল। তিনি মনে করছেন, সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল থেকে তৃণমূলের সঙ্গে একতরফা জোটের চেয়ে নিজেদের শক্তিশালি করার চেষ্টা করা ঢের ভাল। তার ওপর পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটাও সত্য যে কংগ্রেস কমেছে বলেই ফুলে ফলে বেড়েছে তৃণমূল। তাই কংগ্রেসকে বাড়তে দেওয়া কখনোই তৃণমূলের কাজ হতে পারে না। স্বাভাবিক কারনেই তৃণমূল চাইবে কংগ্রেস খর্ব হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যাক।
অন্য যুক্তিও আছে। যে যুক্তি বলছে, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে কয়েকটি বিধায়ক পেয়ে তারপর সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে মন দিক কংগ্রেস। চিঁড়ে অবশ্য এখানেও সম্পূর্ণ ভিজছে না। দল ভাঙিয়ে নেবার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। পূর্বে এমন উদাহরণ আছে।
আবার কেরলে এবার ক্ষমতায় আসার জন্য সিরিয়াস কংগ্রেস। সেই সম্ভাবনাও এবার রয়েছে বলে খবর। তাই পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে জোট করে যদি ভুল বার্তা যায়! সাবধানে পা বাড়াতে চাইছেন খাড়গে। সব মিলিয়ে ছাব্বিশের নির্বাচনে ভোট-খবরের রেসিপিতে এবার মশলা মেশাবে কংগ্রেসও।