ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস :
আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণ বাংলার রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা বড় ক্ষতি। একজন সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তার পরিচয় সারা বাংলায় ছিল। বাম রাজনীতি করেছেন দীর্ঘদিন। জাতীয়তাবাদী আন্দোলন না করেই বুদ্ধদেব বাবু কিন্তু আদ্যপ্রান্ত বাঙালি ছিলেন।
শুধু ধুতি পাঞ্জাবী পরিহিত বাঙালি ছিলেন না। বাংলা সাহিত্য, বাংলা কবিতা, বাংলা চলচ্চিত্র বিষয় তার জ্ঞান ছিল অপরিসীম। শুধু যে বাংলা সাহিত্যে আবদ্ধ ছিলেন তা নয়। মায়াকোভসকি, পাবলো নেরুদা কে অবলীলায় অনুবাদ করেছিলেন। মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিলেন “স্বর্গের নিচে অন্ধকার ” বইটা লিখে। একজন সত্যিকারের বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন যে সাহিত্য চর্চা বা সিনেমা তে কখনো সীমানা তৈরি করা যায় না। এর পরিসর অসীম।
বিভিন্ন সময় নন্দন এ হোক বা রবীন্দ্র সদন এ হোক উনি উপস্থিত হয়ে বাঙালির সংস্কৃতির পরিসর বর্ধন উনি চেয়েছিলেন মন থেকে। তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ এর উত্তরণ চেয়েছিলেন এবং সেই উদ্যোগ এ সফল হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময় ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এ শুধু বাংলা সিনেমা নয়, বিভিন্ন দেশের সিনেমা দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল সিনেমা প্রেমী বাঙালির।
শুদ্ধ বাংলায় যখন বক্তব্য রাখতেন তখন সাধারণ বাঙালি কে আকৃষ্ট করতো। বাঙালি বুদ্ধদেব বাবু বাংলা ও বাঙালি কে সম্মান করে গেছেন। বাম রাজনীতি করেই বাঙালির উত্তরণ চেয়েছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন পশ্চিম বাংলার শিল্প আসুক। স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেন নি। কিছু আইনগত বিষয় আর রাজনৈতিক বিষয়য়ের জন্য। বাঙালি হয়ে বাঙালির জন্যে কিছু করার সদিচ্ছা উনি দেখিয়েছিলেন। এই বিষয় কারুর সন্দেহ থাকতে পারে না।
সব বাঙালির স্বপ্ন তারা আত্মনির্ভর হবে। আবার একদিন পশ্চিমবঙ্গ তে শিল্প হবে। কর্ম সংস্থান বাড়বে। যদি সত্যি তা হয় বুদ্ধদেব বাবু সেই সূচনা টা করেছিলেন। ওনার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভুল আলোচনা করে লাভ নেই। আমি বাঙালি বুদ্ধদেব বাবু কে অনুধাবন করছি। তার বাঙালিয়ানা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
স্বাধীনতার পর থেকে সব চেয়ে বেশি শিক্ষিত আর সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তি পশ্চিমবঙ্গ দিয়েছে। বুদ্ধদেব বাবু সেই পরিচয় দিয়েছিলেন। আবেগতাড়িত হয়ে বলে ফেলেছিলেন “চোরেদের মন্ত্রী সভায় থাকতে চাইনা “।
বাঙালির সততার আবেগ এর পরিচয় বারংবার দিয়েছেন। কোনো দিন পরিবর্তন করেন নি দু কামরার ফ্লাট। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কখন কেউ বৈভবের আস্ফালন দেখান নি। প্রমান করেছেন উনি আলাদা। প্রমান করেছেন উনি একজন বাঙালি। বাঙালির আবেগ, বাঙালি র সংস্কৃতি, বাঙালির শিল্পকলা – এই তো বাঙালির গর্ব। এই নিয়ে সারা জীবন লড়ে গেছেন বাঙালি বুদ্ধদেব বাবু কে। বুদ্ধদেব বাবুর নাম চিরকালীন বাঙালির হৃদয় থাকবে।