সুব্রত ঘোষ :
ধর্ম শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল জীবন ও বৃদ্ধির ধারণ-বিধি, আর এই বিধি সমূহের সনাতন উৎস হল বেদ | এই বেদের সম্যক দ্রষ্টা ছিলেন অতীতের তপোবন ভারতবর্ষের দিব্য ঋষি-রা | সমাধিস্থ অবস্থাতেই কেবল উপলব্ধি করা যায় বলে বেদকে অপৌরুষেয় বলা হয় অর্থাৎ যা মনুষ্যসৃষ্ট নয় – যা অপরিবর্তনীয় এবং শাশ্বত | আবার ঋষির উপলব্ধি শুনে জানা গেছে বলে বেদকে শ্রুতিও বলা হয়|
আজ আমরা যাকে হিন্দু ধর্ম বলে জানি, তা এই সনাতন বৈদিক ধর্মের-ই একটি বিকৃত পরিবেশন মাত্র | বিকৃত একারণেই বলা হল কারণ ঋষি-উচ্চারিত সেই সনাতন জীবনবিধি কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলা হয়নি, বলা হয়েছিল জীবনীয় স্পন্দনে কম্পিত ব্রহ্মান্ডের প্রতিটি আদি কণিকার উদ্দেশ্যে | সেখানে মানুষ থেকে শুরু করে গাছপালা, জীবজন্তু এমনকি চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারাদের-ও অস্তিত্বকে দেওয়া হয়েছে জীবনীয় স্বীকৃতি, পূজিত হয়েছে একই ব্রহ্মের বিবিধ প্রকাশ রূপে |
তাই প্রকৃত অর্থে হিন্দু সনাতন ধর্মের মধ্যেই রয়েছে সকল মত ও তদনুরূপ পথের সমান স্বীকৃতি| আমাদের মন্ত্র হল
ঔঁ সর্বে ভবন্তু সুখিন:,
সর্বে সন্তু নিরাময়া:,
সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু,
মা কশ্চিদ দুঃখ মাপ্নুয়াত,
ঔঁ শান্তি শান্তি শান্তি।
(বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১/৪/১৪)
অর্থাৎ সবাই যেন সুখী হয়, সকলে যেন নিরাময় হয়, সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুক, কখন যেন কেহ দুঃখ বোধ না করেন। সকলে শান্তি লাভ করুন।
এহেন সর্বময় ব্যাপৃত সনাতন হিন্দু ধর্মকে একটি নিছক সম্প্রদায়ের তকমা দিয়ে পৃথক ভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলা ততটাই হাস্যকর যতটা কোন জীবন্ত ঋষিকে পাগলের তকমা দিয়ে ঋষিবাদ-এর আরাধনা করা | তাই আজ সময় এসেছে সেই সনাতন ধর্মজীবনের পুনরভ্যুত্থানের – হিন্দু জনমানসের পুনর্জাগরনের | কেননা একমাত্র সনাতন হিন্দু ধর্মের মধ্যেই রয়েছে বিশ্বের প্রতি প্রত্যেকটি জীবনের ধারণ, পালন, পরিপোষণ ও সংরক্ষণ-এর একমাত্র আশ্বাস – আছে সমস্ত রকম বিভেদের মাঝে মহামিলনের এক অমোঘ শান্তি বার্তা |