Breaking News
Home / TRENDING / বেতাল-সিপিএম সৃজনদের কাঁধে চড়ে গল্প শোনাচ্ছে, বিকল্প ভাবছে কি বৃহত্তর বাম

বেতাল-সিপিএম সৃজনদের কাঁধে চড়ে গল্প শোনাচ্ছে, বিকল্প ভাবছে কি বৃহত্তর বাম

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :

খবর এল মানুদা আর নেই। মানে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় মারা গেছেন। তাঁর স্মৃতিচারণ করতে পারেন এই রকম কয়েকজনের বক্তব্য চাই। নিউজ চ্যানেলের ধর্ম অনুযায়ী প্রথমেই ফোনো নিতে হবে। মানুদার জুনিয়র তবু তাঁর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন এইরকম একজন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে ফোন করলাম।
দাদা, শুনেছেন তো মানুদা মারা গেলেন। আপনাকে কিছু বলতে হবে তো!

একটু অবাক করে দিয়ে (আবার লিখছি, বেশি নয় একটু অবাক করে) ওপার থেকে উত্তর এলো, ভালোই তো হয়েছে দেবক। গেছে বাঁচা গেছে। পশ্চিমবঙ্গে দলটাকে শেষ করে দিল। ওঁর পাঁচ বছরের শাসন, এ রাজ্যে কংগ্রেস কে আর মাথা তুলতে দিল না।

তাঁকে থামিয়ে বললাম, দাদা, একটা ফোনো দিয়ে দিন! স্টুডিও থেকে আপনাকে ফোনে ধরব। ফোনো তে ওই নেতা বললেন, মানুদার মতো সৎ মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা দেখেছি। দক্ষ প্রশাসক কে আমরা পেয়েছি… ইত্যাদি ইত্যাদি। শুধুমাত্র উক্ত নেতাই নন, সিদ্ধার্থ পরবর্তী কমবেশি সব কংগ্রেস নেতাই ওঁর সম্পর্কে এমন ধারনাই পোষণ করতেন। তাঁরা মনে করতেন, ৭২ থেকে ৭৭ এর বিভীষিকার জন্যই এই রাজ্যে কংগ্রেস আর মাথা তুলতে পারল না।

এই কথাগুলো মনে পড়ল মীনাক্ষি-দীপ্সিতা-সৃজনদের সাম্প্রতিক অবস্থা দেখে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের সবচেয়ে উজ্জ্বল দুটি মুখ, সৃজন ও দীপ্সিতা নিজেদের জমানত রক্ষা করতে পারেননি। মীনাক্ষি এবার প্রার্থী না হলেও, ছিলেন সবচেয়ে পপুলার প্রচারক। তাঁর পাড়াতে সিপিএমের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৪৫! কিন্তু কেন? সিপিএমের সার্থকতা এই, তারা একটি শিক্ষিত, ভদ্রজনে গ্রহনযোগ্য নতুন প্রজন্ম তৈরি করতে পেরেছে। যাঁদের কথা শুনতে মানুষের ভালো লাগছে। রাজনীতির অঙ্গনে চতুর্দিকে ধান্দাবাজ, ধড়িবাজ, পাল্টিবাজ, চিটিংবাজ, ফেরেববাজ, বাতেলাবাজদের মধ্যে কয়েকটি মুখকে সিপিএম সামনে আনতে পেরেছে, যাঁদের কথায় মুক্ত বাতাস খুঁজে পাচ্ছে মানুষ। এখানে বলে রাখা ভালো, কয়েকজন মানে কয়েকজনই। সিপিএমের নব প্রজন্মের সকল প্রার্থীকে এই তালিকায় রাখা যায় না। মুড়ি মিছরি মিলিয়ে দিয়েছেন সেলিম। সোশ্যাল মিডিয়া খ্যাত নটেরাও এখানে জায়গা পেয়েছে। তবে সেলিম মুড়ি মিছরি একদর করে ফেলেছেন কি না, সেই খবর আমার কাছে নেই। যাই হোক, এই আকালে এই কয়েকজনও কম নয়।

প্রশ্ন হলো, সৃজন ও দীপ্সিতা প্রচারে দাগ কাটলেও ইভিএমে সাফল্য পেলেন না কেন? খাতা খুলতে পারলেন না কেন? তাঁরাও কি ওই কংগ্রেস নেতার মতো মনে মনে ভাবছেন যে দলের পুরনো পাপ তাঁদের খারাপ খুলতে দিল না! একাধিপত্য একটা রোগের নাম। যে রোগ সিপিএম কে গ্রাস করেছিল এবং কুরে কুরে খাচ্ছিল এগারোর আগে পর্যন্ত। তৎকালীন সিপিএম সম্পর্কে চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের সেই চারটি লাইন হয়তো আপনাদের মনে আছে। বেড়াল থেকে কুকুর/তপন থেকে সুকুর/চান করার একটাই পুকুর/সিপিএম।

এ হেন বদ্ধ জলা, এ হেন দমবন্ধ পরিবেশ, এ হেন মাতব্বরি আর অমোঘ এল সি! এই প্রজন্মের মানুষের হয়তো ভুলে যাবার কথা ছিল কিন্তু তারা রুপকথার গল্পের মতো মনে রেখেছে! কেউ আর হৃদয় খুঁড়ে সিপিএম জাগাতে ভালোবাসছে না!

সিপিএমের প্রতি এই পরিত্যজ্য মনোভাবই কি দীপ্সিতাদের লড়াইতে জল ঢেলে দিল? নাকি মানুষের মনোভাবে সৎ-অসৎ আর কোনও প্রভাব ফেলে না? কে ধান্দাবাজির রাজনীতি, মুখে মারি পালোয়ানদের রাজনীতি, এই সব করে বাজার গরম করতে পারে, এখন কি তাদেরই জমানা! মানুষ কি মেনে নিল এইসব? নাকি দীপ্সিতাদের পছন্দ হলেও, তাঁদের জার্সি রিজেক্ট করল মানুষ? অনেকে বলছেন, সেলিমদের ভ্রান্তিবিলাসের শিকার হয়েছেন মীনাক্ষি থেকে দীপ্সিতা। একুশে মীনাক্ষিকে মমতা-শুভেন্দুর মাঝখানে ফেলে দিয়ে মজা দেখেছে আলিমুদ্দিন। মজা দেখার কথা এইজন্যই আসছে, কারন রাজনৈতিক মহলের এই অংশটি মনে করছে, নন্দীগ্রামে বামের ভোট শুভেন্দুর দিকে গেছিল বলেই মমতাকে হারানো সম্ভব হয়েছে। আবার চব্বিশে সেলিম নিজে অধীরের ছত্রছায়ায় ও মুসলিম ভোটের আশায় মুর্শিদাবাদ ছুটলেও সৃজন-দীপ্সিতাকে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিতে লড়তে নামানো হয়েছে। শুধুমাত্র তাই নয়, এই অংশটির মতে মানুষ এবার অনেকাংশে মোদি বিরোধী অবস্থান নিয়ে ফেলেছিল। মানুষের মনের কথা আঁচ করতে পারেনি আলিমুদ্দিন। তাই বিজেপি ও তৃণমূল, উভয়ের সঙ্গে লড়তে নেমেছে। বর্তমানে পিডিএস নেত্রী ও একদা সিপিএমের বসুপন্থী বলেই পরিচিত অনুরাধা দেব স্পষ্ট বলেছেন, দ্বৈত লড়াই সম্ভব নয়। নীতির প্রশ্নে একদা সিপিএম ছেড়ে আসা সমীর পুততুণ্ডের মতেও লোকসভা ভোটে সাম্প্রদায়িকতার ইস্যুকেই একমাত্র ইস্যু করা দরকার ছিল। বিজেপি তথা মোদির দিকে সামগ্রিক লড়াইয়ের অভিমুখ থাকা দরকার ছিল। তৃণমূলের দুর্নীতির প্রশ্ন ছেড়ে দেবার দরকার অবশ্যই ছিল না কিন্তু লোকসভার ভোটে ওই ইস্যু পাশে সরিয়ে রাখলেও চলত।

বিকাশ ভট্টাচার্য নতুন প্রজন্ম কে কটাক্ষ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সক্রিয় বলে। দলের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই যদি লক্ষ্য হয়, তাহলে এ যুগে সমাজ মাধ্যম অনস্বীকার্য। বিকাশ ছোটদের ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে যদি নিজেদের, অর্থাৎ, সিনিয়র নেতাদের কাজের বিশ্লেষণ করতেন, তাহলে হয়ত ভালো হত! পরের পর ভূল করা একপ্রকার ব্যাধি, আর ভূল স্বীকার না করা আরও বড় ব্যাধি। সেই ব্যাধিতে দীর্ঘদিন ধরেই আক্রান্ত সিপিএম। সিপিএমের এই ভ্রান্তিবিলাসী নেতাদের বাদ দিয়ে, আরও বাম দলকে এক ছাতার তলায় এনে, নতুনরা কি কিছু করে দেখাতে পারবে? যদি পারে তবেই কমরেডদের পৃথিবীতে নবযুগ আসতে পারে। নইলে সেই ‘সেদিনের সিপিএম’ নামক বেতালকে কাঁধে করে ঘুরতে হবে নতুনদের। গল্প শোনা হবে কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছোনো আর হবে না।

Spread the love

Check Also

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

শুধুমাত্র শুদ্ধিকরন আর বাংলাদেশ নয়, মমতার যে কথায় কান দিল না মেইনস্ট্রিম মিডিয়া

“ভর্সা যেন না পায় কোনও দাঙ্গামুখো হতচ্ছাড়া, সবাই মিলে বেঁচে থাকার ভর্সা তাদের করুক তাড়া’ …

কোন সাহসে দলের প্রধান স্লোগান কে চ্যালেঞ্জ করলেন শুভেন্দু? কপালে ভাঁজ বিজেপির

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় উফ্! শুভেন্দুর বক্তৃতা শুনে সেই যে গায়ে কাঁটা দিয়েছে সেই কাঁটা আর যায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *