Breaking News
Home / Uncategorized / রুকস্যাক পর্ব ৩

রুকস্যাক পর্ব ৩

নিলয় চ্যাটার্জি :

আস্তে আস্তে প্রকৃতির পরিবর্তন শুরু হল। সামান্য উঁচু নিচু রাস্তার ধারে ধারে  সবুজের হাতছানি। চার দিকে ছোট  ছোট টিলা। ধীরে ধীরে পেরিয়ে এলাম নিরসা, ধানবাদ। পরেশনাথ পাহাড়ের কোলে জংগলের বুক চিরে রাস্তা।   দিনের বেলাতেও নিঝুম। একঝাঁক টিয়াপাখি ট্যাঁ ট্যাঁ  ডাকতে ডাকতে উড়ে গেল। আমি আগে আসছিলাম, কল্যাণ পিছনে। বাইকের গতি কমিয়ে দিলাম; ও কাছে আসাতে একটু দাঁড়িয়ে গেলাম। না খেয়ে বেরিয়েছি। বেশ খিদে খিদে পাচ্ছিল। ব্যাগ থেকে কেক বের করে ওকে দিলাম;  নিজেও খেলাম। চারপাশের নিস্তব্ধ প্রকৃতি দেখে কল্যাণ চুপ। এখানে কথা বেমানান। মাঝে মাঝে ট্রাকের শব্দ।  পোড়া ডিজেল এর গন্ধটা অনেক চেষ্টা করেও জঙ্গলের গন্ধকে চাপা দিতে পারছেনা। আরেকটু এগোলেই গঞ্জ শহর বারথি। হাজারিবাগ নাশ্যানাল পার্ক এখান থেকে ১৮ কি.মি.,   আর তিলাইয়া ড্যাম ১৭ কি.মি.। আমরা পেরিয়ে এসেছি প্রায় ১৮০ কি.মি. রাস্তা। এবার একটু রেষ্ট না নিলেও চলছে না। একটি চায়ের দোকানে চুমুক দিলাম চায়ে। ‘পুরি সবজি খাবি?’ আমি জিগ্যেস করলাম। এমনভাবে কল্যাণ ঘাড় ঝাঁকালো যে ঘাড় খুলে যাওয়ার জোগাড়। বললাম ‘কাছেই বরাকর নদী, যাবি নাকি?’ দেখি তার মুখে কোন তাপ-উত্তাপ নেই। গম্ভীর ভাবে বলল, ‘অনেক হয়েছে, এবার চল’। সুতরাং এগিয়ে চলা। প্রকৃতি এখানে অকৃপণ।   মাঝে মাঝে বুনো  ফুলের অদ্ভুত গন্ধ ঝটকা মেরে যাচ্ছে বাতাসে।

কিছুদুর এগুতেই ডোবী। এখানে  NH- 2,  NH- 83 আর NH– 99। এখান থেকে রাস্তা চলে গেছে বুদ্ধগয়া, পাটনা, গয়া। আর একটি রাস্তা চলে গেছে ঝাড়খন্ডের দিকে। জানতাম,  যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি সেটা  হোলো লাল করিডোর। কল্যাণ পাছে ভয় পায় তাই ওকে আর কিছু বলিনি।

আরও ১০ কিমি যেতেই এসে গেল শেরঘাটি। দাঁড়ালাম; কল্যাণকে বললাম ‘একটা গল্প শুনবি?’ বাবু একটু ফিক   করে হেসে বলল, ‘তুই গল্প বলবি?’ আমি বললাম, ‘শোন তবে। এই এলাকার  নামের পিছনে একটা গল্প আছে।  কথিত আছে জেনারেল ফারিদ খান এখানে একটা শের শিকার করেছিলেন। ফারিদ ‘শের সুরী’ নামে পরিচিত ছিলেন।  তিনি হুমায়ূনকে পরাজিত করে দিল্লীর সুলতান হন; নাম নেন শের শাহ সুরী। যিনি ইতিহাসে শের শাহ নামে সমধিক পরিচিত। এই যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি সেটা ওনার তৈরি,… ভাবতে পারছিস?  গায়ে কাঁটা দিয়ে  উঠছে।   ইতিহাসে আছে, এই শেরঘাটি প্রবল পরাক্রমশালী ঔরংজেব আক্রমণ করেছিলেন দখল নেওয়ার জন্য।  কিন্তু স্থানীয় আদিবাসী কোলদের প্রবল বাধার সামনে আর এগোতে পারেননি। মোরহার নদীর তীরেই আটকে  গিয়েছিলেন। আর জানিস এখান থেকে মাত্র ২৫ কিমি এগোলেই বুদ্ধগয়া’। এটা আর ওকে  বলিনি এখন এইটা  মাওবাদী উপদ্রুত এলাকা বলে সমধিক প্রচলিত।  বললে যদি……।।

Spread the love

Check Also

কেমন হলো, মুখ্যমন্ত্রীর এপিসোডের প্রথম ঝলক ?

সুচরিতা সেন, বিনোদন ডেস্ক রোজ বিকেলে বাংলার প্রতিটি ঘরে বিনোদন শুরু হয় এই শো এর …

রশিদ খানের ফিরে দেখা জীবনধ্যায়

বিনোদন ডেস্ক, সুচরিতা সেন, আবার নক্ষত্রপতন, না ফেরার দেশে চলে গেলেন ওস্তাদ রশিদ খান। গানের …

নববর্ষে দারুন চমক, বিশেষ খেতাব পেল NJP স্টেশন

চ্যানেল হিন্দুস্তান, নিউজ ডেক্স বিশেষ খেতাব পেল নিউ জলপাইগুরি স্টেশন। NF রেলওয়ের কাটিহার বিভাগের অধীন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *