নিলয় চ্যাটার্জি : –
দেখতে না দেখতেই দুর্গাপুর চলে এল। মসৃণ রাস্তা এবার একটু টোল খেতে আরম্ভ করেছে। কিছু দূর অন্তর অন্তর ডাইভারশন। শিল্পনগরী বড় বড় চুল্লীতে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। আকাশে কারখানার ধোঁয়া। অনেক কিছু হারালেও এখনও দুর্গাপুর বেঁচে রয়েছে, হাইওয়ের উপরে জমজমাট শপিং মল তার প্রমাণ দিচ্ছে।
দুর্গাপুর ছাড়িয়ে অন্ডাল মোড়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম দুজনে। ‘এখানে আবার কি রে?’ – কল্যাণ বলল। ‘ওরে বেড়ানো মেনে কি কেবলি বেড়ানো ? খাবার-দাবারও খেয়ে দেখতে হবে। তুই এখানে দাঁড়া আমি আসছি’। বলে আমি এগিয়ে যাই। অন্ডাল মোড় থেকে বামদিকে যে রাস্তা তা চলে গেছে সেটা অন্ডাল রেল স্টেশনে যাবে। ওই রাস্তায় একটা মিষ্টির দোকান থেকে কিনলাম গরম অমৃতি। তবে লাল বা কমলা রঙের নয় , কালচে রঙ, কড়া করে উপরটা ভাজা। কামড় দিলেই … আহ ! এরকম অমৃতি এই অঞ্চলের বাইরে আমি কোথাও খাইনি। কল্যাণকে দিতেই কোন কথা না বলে একদম মুখের মধ্যে চালান করে, এক কামড় দিয়েই বলে উঠল ‘আহা ! বেঁচে থাক ভাই।‘
সন্ধ্যা অনেক আগেই নেমেছে। কোলিয়াড়ি এলাকা। দূরে মাঠের মাঝে মাঝে আগুন জ্বলছে; ঐগুলো আর কিছুই নয়, ওখানে কয়লা পোড়াচ্ছে। বাতাসে ধোঁয়ার গন্ধ।
হাইওয়ে থেকে আসানসোল ঢোকার অনেকগুলো রাস্তা আছে। দোষটা আমারই। আমি একদম প্রথমটাতে ঢুকে পড়েছিলাম। আমরা চাইছিলাম এমন একটা হোটেল যেটা কিনা হাইওয়ের ধারে অন্তত কাছাকাছি থাকবে এবং বাইকদুটি সুরক্ষিত থাকবে। প্রথমটাতে ঢুকে পড়ায় পরের দিকে হাইওয়ের কাছে আর কোনও ভালো হোটেল ছিল কিনা সেটা আর দেখা হল না। অনেক খুঁজে এবং পুরো শহর ঘুরে অবশেষে একটা জায়গায় ঠাঁই মিলল। যথারীতি কল্যাণ বলতে আরম্ভ করল, ‘এইটা কোনও একটা হোটেল হোলো, তুই যে কি করিস!’ আমি বললাম, ‘ওরে, রাস্তায় বেরিয়ে ঘরের সুখ কোথাও পাবি না’। কল্যাণ একজন অভিজ্ঞ ট্রেকার; ওর মুখ থেকে একথা আশা করিনি। বকুনি দিলাম একটু। কাল সকালেই বেরিয়ে পড়ব। যাব বেনারস। প্রায় ৪৭৫ কি.মি. রাস্তা।
সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠেই আবার তাড়া লাগাতে শুরু করলাম। টার্গেট ৬ টা। বাইকগুলো একটু পরিষ্কার করে নিয়ে কেবল চা খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম। ‘চল চল,’ বলতে থাকি আমি,… ‘ রাস্তায় কোথাও খেয়ে নেবো’। অনিচ্ছা সহকারে বাবু রাজী হলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আবার হাইওয়ে। ফাঁকা মসৃণ রাস্তা। খোলা হাওয়া। নতুন সকাল। এবার কেবল এগিয়ে চলা।