নিলয় চ্যাটার্জি :
বার বার ফোন করছি, ধরছে না। মাথাটাও গরম হচ্ছে। ওরে ফোনটা ধর না, মনে মনে বলছি। এদিকে বাইরে বৃষ্টি আর থামছেই না। সকাল ৬টায় বেরোবার কথা ছিল এখন ঘড়িতে বেলা ১ টা। হ্যাঁ, এবার ফোন ধরল কল্যাণ, ঘুম জড়ানো গলা– ‘যা বৃষ্টি, একটু ঘুমিয়ে পরেছিলাম। কি করবি বল?’ – ‘কি করবো মানে?’ আমি রেগেমেগে বললাম। মালপত্র সব রুকস্যাকে বাঁধা শেষ, স্যাডল ব্যাগ রেডি, বাইক ও, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সব ভরা হয়ে গিয়েছে। এখন ব্যাটা বলে কিনা কি করবি? যাই হোক ঠিক হোলো আমরা বেরোব, যত দেরিই হোক। ৩টে পর্যন্ত দেখব বৃষ্টি থামে কিনা , না থামলে বৃষ্টিতেই বেরোব। সময় আর কাটে না। ২টো নাগাদ বৃষ্টি একটু কমল।
সঙ্গে সঙ্গে কল্যাণকে ফোন। ওরে চল, এবার রাস্তায় নাম। ঠিক হল, ডানকুনি টোলে আমরা হাজির হব ঠিক ৩টের সময়। ওমা, রাস্তায় বেরিয়ে দেখি সব জায়গায় জল জমে গেছে। এখন বেরিয়ে তো পড়েছি আর চিন্তা করে কি হবে, নিজেকে নিজে বললাম। ৩টের একটু আগেই আমি পৌছে গেছি। এই যাহ! তাড়াহুড়োয় খেয়াল ছিল না, সন্দেশের প্যাকেট ফেলে এসেছি। ভেবেছিলাম রাত্রে খাবো, জলভরা সন্দেশ। মনের দুঃখ কাটতে না কাটতেই দেখলাম কল্যাণ আসছে। যথারীতি পাকামো করে কোন গার্ড পরেনি। বাইকে দুরপাল্লায় যেতে হলে গার্ড পরা একান্ত জরুরী। দেখি একটা বাজারের ব্যাগে সেগুলো ঝুলিয়ে বাবু এসেছেন। বকাবকি করে সেগুলো পরালাম। তার পর গলা ছেড়ে হেসে বললাম এবার “সোয়াইক গেল যুদ্ধে”। বুঝতে পারছি আমার ওই রকম বিচ্ছিরি হাসি শুনে কল্যাণের গা-পিত্তি জ্বলছে; কিন্তু রাগ চেপে বলল ‘আর ন্যাকামো করতে হবে না- এবার চল’। ঠিক হোল আজ রাত্রিবাস আসানসোলে।
ডানকুনি পেরোতেই টপ গীয়ার। ঘড়িতে ৩.১০। বৃষ্টি হয়ে যাওয়াতে চারপাশ সবুজে সবুজ। কোথায় বাড়ি বসে তেলেভাজা আর মুড়ি মেখে মৌজ করে খাবো, তা নয়। রাস্তায় বাইকে চেপে দৌড়াচ্ছি । মানুষের শখ বলিহারী! নিজেই মনে মনে বললাম। হুশ করে সিঙ্গুর যে কখন পার হয়ে গেল খেয়ালই করলাম না। শক্তিগড় আসতেই কেমন যেন বাইক নিজে থেকেই থেমে গেল। ল্যাংচা ডাকছে। মহানন্দে খাওয়া দাওয়া করে আবার রাস্তায়। আলোচনা করে ঠিক করলাম সোজা পানাগড় গিয়ে দাঁড়াব। তাই হল। পানাগড় গিয়ে মনে হোল, দার্জিলিং মোড়’ থেকে ডান দিকে ঘুরে কিছুটা গেলেই ‘ইছাই ঘোষের দেউল’। কিরে কল্যান যাবি নাকি? উত্তরে, বাইকে স্টার্ট দিয়ে সোজা এগিয়ে গেল সে। আজ যে রাত্রিবাস আসানসোলে।
আরে, বলতেই তো ভুলে গেছি আমাদের প্ল্যান কি! আসলে আমরা যাব কলকাতা থেকে দেরাদুন এবং সেখান থেকে একটা ছোট্ট ট্রেক “ রুইনসারা তাল” ।