সায়ন্তনী সেনগুপ্ত :
কবে প্রথম হাত ধরেছিলাম তোমার? আঁকড়ে ধরেছিলাম আমার ক্ষুদ্র আঙুল দিয়ে তোমার আঙুল? তুমিও তো ফেরাওনি আমায়। উজাড় করা হৃদয় দিয়ে ধরেছিলে আমার ছোট্টো মুঠি। সে তো আজকে নয়। সে যে আজকে নয়। সেই আমি, সে যে নিতান্তই বালিকা আমি। তখন থেকেই যে তুমি আমার কাছের ছিলে রবি ঠাকুর। ছোট্টো যে-মেয়েটা রোদ্দুরে বেগুনি রংয়ের শাড়ি দেয়, মনে মনে সে আমিই ছিলাম জানো? আমার বাড়ি ছাড়িয়ে বহু দূরে হাওয়ায় লুটোপুটি খাওয়া ঝাঁকড়া গাছের মেলার পর সেখানে নিঃসীম, নিঃঝুম আকাশ ছিল, তার পরেই বুঝি ছিল তেপান্তরের মাঠ। কত না শীতের পাতা ঝরা দুপুরে আমার শিশুমন উধাও হয়ে যেত বিপুল মাঠের শূন্যতায়। খাঁ খাঁ করে উঠত বুক। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরতাম মাকে। কল্পনার জগৎ আর উধাও হওয়া মন, বেঁচে থাকার রসদ জোগায় যা কিছু, সবই যে তোমার হাতে গড়া। সত্যি কথা বলি? আমার আজীবনের পড়া পড়া খেলা সেও তোমার কাছ থেকেই শেখা। ছোটবেলায় কে ছিল আমার খেলার সাথি? কত গান, কত কবিতা, কত হাসি… তুমি যে আমার চিরদিনের সখা।
বড় যে হলাম, সেও তোমারই হাত ধরে। তীব্র যন্ত্রণা বুকফাটা হাহাকারে তোমার হৃদয়েই কী আশ্রয় নেইনি। কতবার মনে হয়েছে আজ যদি তুমি থাকতে ছুটে গিয়ে তোমার শুভ্র পায়ের পাতায় হৃদয় রাখতাম। একবার মাথায় হাত দিয়ে বলতে, সব শোক, সব দুঃখ, সব গ্লানির থেকে জীবন অনেক বড়। ‘তবুও শান্তি তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে !! ‘ আমার প্রেমে, আমার বিরহে, আমার হারিয়ে যাওয়ায়, আমার নিজেকে খুঁজে পাওয়ায় তোমাকেই ছুঁতে চেয়েছি বারবার। তুমি আমার চেতনার ঈশ্বর, তুমি আমার আত্মার আত্মীয়। কোনও প্রতিজ্ঞা নয়, শপথ বাক্যের সাজানো মিথ্যে নয়। তাও তুমি আমার আজীবনের প্রেম। আমার রবীন্দ্রনাথ।