দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের সময় একদিন টেলিফোনে কথা হচ্ছিল অমর সিংহের সঙ্গে। প্রায় সব সংবাদ মাধ্যমে তখন অখিলেশ -রাহুলের জয়জয়কার চলছে। ভোটপর্ব শেষ হতে তখনও বাকি। অমর সিংহ নির্বিকার চিত্তে তখনই বলে দিলেন, বিজেপি সরকার করবে। এত তাড়াতাড়ি এমন ভবিষ্যদ্বাণী! অমর সিংহ বললেন, যে দুজন এবার জোট করে ভোট লড়তে নেমেছে তাঁদের দুজনের কাছেই রাজনীতিটা পৈতৃক সম্পত্তি। রক্তে রাজনীতি থাকলে কিছুটা হয়, সবটা হয় না।
কলকাতার বড়বাজার থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে উঠে সর্বভারতীয় রাজনীতির মুখ হয়ে ওঠা অমরের উপলব্ধি যে বাস্তবসম্মত উত্তরপ্রদেশের ভোটের ফলাফলে তা বোঝা গিয়েছিল। সেখানে বিজেপির জয় লাভের আরও কয়েকটি কারন নিশ্চয়ই আছে কিন্তু অমরের পর্যবেক্ষণকেও অন্যতম কারন হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এই রাজ্যেও অতি সাধারণ ঘর থেকে নিত্য জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে রাজনৈতিক সংগ্রামে জড়িয়ে পড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উঠে আসা যে কোনও রাজনৈতিক কর্মীর কাছে উদাহরণ স্বরুপ। তাঁর লড়াইকে অতি বড় মমতা-বিরোধীও কুর্নিশ করে। জাতীয় কংগ্রেস যেমন শুরু থেকেই একটি পরিবারকেন্দ্রিক দল, তেমনই কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসা তৃণমূল কংগ্রেস শুধুমাত্র মমতার মুখের দিকে চেয়ে গড়ে উঠলেও, কোনওদিন তাঁর পরিবারের কেউ তাঁর দলের নেতা হতে আসেননি। তাঁর নিকটজনেরা অনেকে তৃণমূল করেছেন কিন্তু নেতৃত্বের বাসনা প্রকাশ করেননি। মমতার কাছেও তাঁর পরিবারের চেয়ে তৃণমূলের বৃহৎ পরিবার সর্বদাই গুরুত্ব পেয়েছে।
কয়েক বছর আগেও এটাই ছিল তৃণমূলের চেনা ছবি।
গোল বাঁধল হালে।
মমতার পর আর থাকবে তৃণমূল? কোনও কোনও রাজনৈতিক পণ্ডিত এমন প্রশ্ন তোলা শুরু করলেন। তাঁদের এই প্রশ্নে আহ্লাদিত হলেন তাঁরা, যাঁরা দীর্ঘদিন রাজ্য রাজনীতিতে বিরোধী জায়গাটাও ভাল করে বাগে আনতে পারেননি!
এরকম সময় থেকেই কী শুরু হল মমতার উত্তরসুরী সন্ধান? মমতাই এর উত্তর দিতে পারবেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আন্দাজ করতে পারে মাত্র।
সে যাই হোক। অভিষেকের রাজনীতিতে আসার ছবিটা ঠিক উঠে আসার নয় বরং আকাশ থেকে নেমে এসে তৃণমূল নামক সাজান বাগানে অবতরন করার। যুবা নাম্নী একটি সংগঠনের সভাপতি এবং তারপর যুবার সঙ্গে যুবকে মিশিয়ে দিয়ে অভিষেককে যুব তৃণমূলের মাথায় বসিয়ে দেওয়া।
নেহরু লিখে গেছেন, কেউ কেউ জন্ম থেকেই মহান (এক্ষেত্রে মমতা) , কেউ মহত্ব অর্জন করে (এক্ষেত্রে মুকুল) আর কারও কারও ওপর মহত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয় (এক্ষেত্রে অভিষেক)।
আর এটাই এখন তৃণমূলের সমস্যা।
মুকুল রায়কে দরকার পড়ছে ড্যামেজ কন্ট্রোলে, কাজে লাগান হচ্ছে। কিন্ত তাঁর পুরোন অবস্থান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে না। কথা উঠছে, দল মুকুলকে খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না।
মমতার মাথায়ও পরিবারতন্ত্রের ভুত!
আরও পড়ুন :-