বিনোদন ডেস্ক, সুচরিতা সেন,
আবার নক্ষত্রপতন, না ফেরার দেশে চলে গেলেন ওস্তাদ রশিদ খান। গানের সাথে তার সম্পর্ক ছোটো থেকেই,শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ইতিহাস ও তাৎপর্য বিবেচনায় তার পরিবারের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তার পরিবারেই জন্ম নিয়েছেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বহু সংগীত শিল্পীরা। শুধু তা-ই নয়, তাদের নিজস্ব সঙ্গীত ঘরানা ছিল।
রশিদ খানের চাচা উস্তাদ গোলাম মুস্তফা খানও সংগীতশিল্পী ছিলেন। তাই ছোটবেলাতে পরিবার থেকেই তার সঙ্গীত শিক্ষা শুরু হয়। প্রথমে বাবা হামিজ রেজা খানের কাছে এবং পরবর্তীতে দাদু উস্তাদ নিসার হুসেন খান সাহেবের কাছে তার প্রাথমিক সঙ্গীত শিক্ষা শুরু হয়।
ছোটবেলাতে তিনি ছিলেন খুব চঞ্চল আর দুরন্ত প্রকৃতির। গানের নিয়মিত চর্চার চেয়ে ফুটবল খেলতেই বেশি ভালোবাসতেন তিনি। তবে,তার দাদু উস্তাদ নিসার হুসেন খানের কঠোর নিয়মকানুন আর অনুশাসনে নিয়মিত চর্চা করতে হত তাকে।
মাত্র এগারো বছর বয়সে মঞ্চে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন এই শিল্পী। এরপরের বছর ১৯৭৮ সালে দিল্লীতে আই.টি.সি সঙ্গীত সম্মেলনে তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং অতি অল্প বয়সেই তার সঙ্গীত গায়কী সকলকে আকৃষ্ট করে। ১৯৮০ সালে তিনি দাদুর হাত ধরে কলকাতা আই.টি.সি সঙ্গীত একাডেমিতে আসেন এবং এখানেই তার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন সময়ে আবির্ভূত হয়েছেন শাস্ত্রীয় সংগীতের কিংবদন্তীগণ। তাদের তৈরি সুরের মূর্ছনায় বিশ্ব আলোড়িত হয়েছে। মানুষের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে তারা থেকে গেছেন চিরভাস্বর হয়ে। উত্তরপ্রদেশে বাদাঁয়ু নামে একটি গ্রাম জন্ম গ্রহণ করেন রশিদ খান। তার পিতা হামিজ রেজা খান ছিলেন সংগীতজ্ঞ আর মা শাখরী বেগম ছিলেন গৃহিণী।
ছোটবেলা থেকেই অভাবনীয় সঙ্গীত মেধার কারণে বহু বিখ্যাত ও প্রবীণ সঙ্গীত শিল্পীর আশীর্বাদ লাভ করেন তিনি। পণ্ডিত ভীমসেন যোশী মুক্তকণ্ঠে তাকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আধুনিক যুগে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসান।
সঙ্গীতে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি সঙ্গীত নাটক একাডেমি সম্মান, গ্লোবাল ইন্ডিয়া মিউজিক সম্মান, মহাসঙ্গীত সম্মান পদক সহ অসংখ্য সম্মান পেয়েছেন।
গত কয়েক বছর ধরেই প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন শিল্পী । গত ২১ নভেম্বর, ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন উস্তাদ রশিদ খান। মঙ্গলবার সকাল থেকে শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হয় সঙ্গীতশিল্পী উস্তাদ রাশিদ খানের। সমস্তরকমের চেষ্টা সত্ত্বেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাঁকে।
দ্রুত অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা চললেও কোনো সফলতা পাননি চিকিৎসকেরা। সঙ্কটজনক অবস্থায় তিনি পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুর ৩টে ৪৫ নাগাদ মাত্র ৫৫-তেই থেমে গেল তাঁর পথ চলা। পৃথিবী ছেড়ে অন্য সুরলোকে চলে গেলেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী উস্তাদ রাশিদ খান।