দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
কংগ্রেস -তৃণমূল ভেঙে রাজ্যে নতুন কোনও রাজনৈতিক বিকল্প তৈরি করা যায় কিনা ভাবছেন রাজ্য রাজনীতির কয়েকজন পোড় খাওয়া নেতা। পুজোর পরেই শুরু হয়ে যেতে পারে নতুন বিকল্প তৈরির কাজ।
দিল্লির কংগ্রেসে যেমন অনেকদিন আগেই নতুন-পুরোন সংঘাত শুরু হয়েছিল, সেরকম পরিস্থিতি এখন তৃণমূল কংগ্রেসে। কংগ্রেসে রাহুলের সঙ্গে শচীন পাইলট, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ারা মিলে দলের মধ্যে দল করেছিলেন আর দিগ্বিজয় সিংহ, আহমেদ প্যাটেলরা দলের মধ্যে চোরাগোপ্তা অপদস্থ হচ্ছিলেন। জয়রাম রমেশের মত নেতাও নিজেকে রাহুলের পরামর্শদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে নিশ্চিন্ত হতে চাইছিলেন। কয়েকবছর আগেই এমন ছবি ধরা পড়ছিল এআইসিসিতে। তারপর রাহুল পরপর ব্যর্থ হওয়ায় সনিয়া গান্ধি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছিলেন। খাড়গে, আনন্দ শর্মার মত নেতাদের কাজে লাগানই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে বুঝতে পেরেছিলেন তিনি। রাজ্যেও পরিস্থিতি অনেকটা সেইরকম বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বরং তার চেয়ে একটু বেশি গম্ভীর। এখানে অভিষেকের নেতৃত্বে ‘নীল তৃণমূলের’ উদ্ভব হয়েছে। তাঁরা নিজেদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে একুশে জুলাই নীল পাঞ্জাবি পরিহিত হয়ে সমাবেশে আসেন। প্রবীনদের কোনও রাখঢাক না করেই অপমান করা হচ্ছে। যে নেতা সহজে জেতা যাবে এমন আসন নিশ্চিত করে দু-হাজার নয় সালে আবার দলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি চোখে পড়ার মত সম্মান পাচ্ছেন আর যে বা যাঁরা দলটিকে শুন্য থেকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন বা এই জায়গায় নিয়ে আসতে মমতাকে সদা সর্বদা সাহায্য করেছেন তাঁকে বা তাঁদের অপমানিত হতে হচ্ছে ভরা সমাবেশে।
এদিকে আবার কংগ্রেসেরও একটা বড় অংশ যারা তৃণমূলের সঙ্গে সম্মুখ সমরের পক্ষপাতি, তারা দিল্লি কংগ্রেসের সতত পরিবর্তনশীল অবস্থানে বিরক্ত। একবার সিপিএমকে হারাতে তৃণমূলের সঙ্গে জোট, তারপরেই তৃণমূলকে হারাতে সিপিএমের সঙ্গে। এবার আবার বিজেপিকে হারাতে উভয়ের সঙ্গে। কংগ্রেসের একটা বড় অংশ বিকল্প খুঁজছে।
বিকল্প হিসেবে বিজেপিকে বেছে নেওয়ার ব্যাপারে অনেক যদি ও কিন্তু আছে। প্রথমত ভাবমূর্তি। বিজেপিতে গেলে টিএমসি সুবিধাবাদী বলে দেগে দেবে। এই প্রচারে টিএমসির লাভ বেশি বলেই মনে করছেন অনেকে। তাছাড়া একটি অংশ মনে করছে বিজেপিতে এখন তাঁরা প্রয়োজনীয় হলেও, পরে, রাজ্যে বিজেপি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে তাঁদের কতটুকু কদর থাকবে? সঙ্ঘ ঘরাণার বিজেপি, কংগ্রেসী এই দুটি দলের নেতাদের কতটা আপন করে নিতে পারবে? এসব ভাবনাও তাঁদের মাথায় আছে।
কর্মীদের উষ্মাও বাড়ছে তৃণমূলে। তাঁরা দেখছে, একজন নেতা দু’দিন আগে কংগ্রেসে থাকার সময় খুনের আসামী আর টিএমসিতে নাম লিখিয়েই রাজ্যসভার সদস্য হয়ে যাচ্ছে! তাঁদের দলনেত্রীর প্রতি মোহভঙ্গ হচ্ছে। এমন উদাহরণ বহু।
বিজয়ার পরে তাই পুরোন দলের মায়া কাটিয়ে দুই দলেরই দুটি বড় অংশ বিকল্প পথ বেছে নেওয়ার কাজ শুরু করবে বলে খবর।
আরও পড়ুন :-