তপনকুমার গোস্বামী :
ক’দিন ধরে একটা ঝড় বয়ে গেল যেন। গত কয়েকদিন যা ধকল গেছে! তাই আজ আর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করছে না অজয়ের। এদিকে শুয়ে থাকারও উপায় নেই। ঠিক সময়ে জল না ধরলে টাইমের জল আবার চলে যাবে। দুপুরে কখন যে আবার জল আসবে তার ঠিক নেই! অজয় এবার বিছানা ছেড়ে গায়ে জামা গলিয়ে মায়ের ঘরে উঁকি দিল। দেখল মা ঘুমোচ্ছে। তার মানে মা ঠিক আছে। মন ভাল হয়ে গেল অজয়ের।
মাকে নিয়ে ক’দিন যা গেল! হাত-মুখ ধুয়ে জল তোলার জন্য রেডি হচ্ছে, এমন সময় চায়ের কাপ হাতে ঢুকল ঝুমা। “আমাদের পরিশ্রম সার্থক। আজ একবার বাজার যেয়ো। কিছু সবজি আর মায়ের জন্য ফল আনতে হবে। ফেরার পথে ডাক্তার কাকাকে মায়ের রিপোর্টটা দিয়ে এস।“
অজয় চা শেষ করে জল তোলার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। জল তোলা শেষ হলে বাজারের ব্যাগ নিয়ে ঝুমাকে বলল, “তোমার কাছে কিছু টাকা হবে? আমার হাত একদম খালি।“
ঝুমা কিছু না বলে তার জমানো থেকে একশো টাকা দিল অজয়কে। বলল, “আমার কাছে এইটুকুই আছে।“
অজয় টাকাটা নিল। বলল, “দেখি কি করা যায়!”
ঝুমা বলল, “চিন্তা কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। বাজার থেকে ফিরে দাড়িটা কেটে নিয়ো। একগাল দাড়ি ভাল লাগছে না।“
অজয় বাজারে বেরিয়ে যেতে ঝুমা রান্নাঘরের দিকে গেল। যাওয়ার সময় মনে হল মা ডাকল। ঝুমা রান্নাঘরে না গিয়ে মায়ের ঘরে গেল। দেখল মা জেগে গেছে। মাকে ধরে আস্তে করে বিছানার ওপর বসিয়ে দিল। মা চা খাবে বলায় ঝুমা রান্নাঘরে গেল।
অজয় বাজার থেকে ফিরে মায়ের সঙ্গে দেখা করল একবার। এবার ঘরে এল দাড়ি কামাবে বলে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গাল সাবান ঘষছে। এমন সময় মনে হল, কে যেন আয়নার ভিতর থেকে বলে উঠল, “কী রে মাকে ভাল করে তুলে কেমন লাগছে।“
অজয় উত্তর দিল, “ভালই লাগছে।“
উলটো দিক থেকে আবার প্রশ্ন এল, “তোমার বউ ঝুমার মাতৃভক্তি আর সেবার সকলেই খুব প্রশংসা করছে। শুনে কেমন লাগছে!”
অজয় বলল,”যা সত্যি, তাই-ই বলছে লোকে। এতে কেমন লাগার কী আছে!”
এবার আয়নার মধ্যে থেকে কেমন যেন অন্যরকম সুর শোনা গেল, “এটা কী শুধুই মাতৃভক্তি, না অন্য কিছু!”
আয়নার মধ্যে থেকে যে এতক্ষণ কথা বলছিল সে যেন অজয়ের মোক্ষম জায়গায় ঘা দিয়েছে। বছরখানেক হল অজয়ের কোনও রোজগার নেই। অথচ সংসারের একটা খরচ আছে। মায়ের পেনশনটা না থাকলে অজয়কে পথে বসতে হত। তাই অজয় এর তেমন জুতসই উত্তর খুঁজে পেল না। বলল, “না সে তো ঠিকই। মা থাকা মানে মাথার ওপর ছাতা থাকা।“
আয়নার ভিতর থেকে আবার এক রহস্যময় হাসি। বলল, “ঠিকই বলেছ। মা মানে ছাতা, মা মানে মাস গেলে পেনশনের টাকা!”