Breaking News
Home / TRENDING / ভারতের সাধক: তৈলঙ্গস্বামী

ভারতের সাধক: তৈলঙ্গস্বামী

কমলেন্দু সরকার  :

সতেরো শতকের প্রথম দিক। অন্ধ্রপ্রদেশের ভিজিয়ানাগ্রামের নরসিংহ রাওকে সৎ এবং ধর্মপ্রাণ বলে সম্মান করতেন সকলে। তাঁর স্ত্রী বিদ্যাবতীও তাই ছিলেন। ওঁরা দু’জনেই শিব পুজো করতেন। কিন্তু তাঁদের কোনও সন্তান ছিল না। ১৬০৭-এর এক শুভদিনে বিদ্যাবতী জন্ম দিলেন এক পুত্র সন্তানের। শিবের করুণায় জন্ম তাই নাম রাখা হল শিবরাম। এরপর আর এক পুত্র এল। তাঁর নাম রাখা হল শ্রীধর।
বিদ্যাবতী একদিন ধ্যানে বসেছেন। শিবরাম পাশে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছে। বিদ্যাবতীর ধ্যান শেষ। তিনি দেখলেন বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গ থেকে আলো বেরিয়ে সেই জ্যোতি প্রবেশ করল শিশু শিবরামের শরীরে। বিদ্যাবতী ভয় পেয়ে পুত্রকে কোলে তুলে জড়িয়ে ধরলেন। নরসিংহকে সে কথা জানাতেই তিনি বললেন, এ সন্তান এসেছে শিবজির কৃপায়।
শিবরাম বড় হতেই চিত্তচাঞ্চল্য দেখা দিল বাবা-মায়ের। শিবরামের হাবভাব ভাল লাগে না তাঁদের। বিয়ে দিয়ে সংসারী করতে চান শিবরামকে। বিয়েতে আপত্তি পুত্রের। অবিবাহিত থেকে শিবের সাধন-ভজন নিয়েই থাকতে চান উনি। বাবা মারা যেতেই শিবরাম বাড়ি ছেড়ে শ্মশানের ধারে কুঁড়েঘর করে বাস করতে লাগলেন। অনেকেই তাকে বললেন বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু কারওর কথায় কর্ণপাত করলেন না। একদিন গুরু ভগীরথস্বামীর কথামতো গ্রাম ছেড়ে তীর্থ করতে বেরোলেন। বহু তীর্থ ঘুরে এলেন বারাণসী। তেলঙ্গ দেশ থেকে আগত বলে কাশীর মানুষের কাছে পরিচিত হলেন তৈলঙ্গস্বামী নামে।
তৈলঙ্গস্বামী কঠোর সাধনায় এবং গুরুর কৃপায় তিনি হয়ে উঠলেন মহা শক্তিধর যোগসিদ্ধ পুরুষ কিংবা বলা যেতে পারে মহাপুরুষ। আবার তিনি বেরোলেন তীর্থ ভ্রমণে। ঘুরলেন ভারতের নানা তীর্থে। নর্মদার ধারে ধ্যানও করেছেন। কিন্তু মন টিকল না কোথাও আবার ফিরে এলেন বারাণসী। তখন তিনি নগ্ন হয়েই ঘুরে বেড়াতেন। কাশীধামে তাঁকে বলা হত চলমান শিব। তাঁর মুখে শিব আরাধনার স্তোত্র শুনতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমাতেন বেনারসের ঘাটে। তৈলঙ্গস্বামীর অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী থাকতেন কাশীর মানুষেরা।
একবার বেনারস ঘুরতে এবং কাজে এলেন একদল ইংরেজ। তৈলঙ্গস্বামীকে নগ্ন হয়ে ঘুরতে দেখে ধরে নিয়ে আসবার নির্দেশ দিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। ধরে নিয়ে এল সিপাইরা। তৈলঙ্গস্বামী ভাবলেশহীন। তাঁকে পুরে দিল ফাটকে। কিন্তু কোথায় তিনি! উধাও তৈলঙ্গস্বামী। হঠাৎ ম্যাজিস্ট্রেট দেখলেন শিশুসুলভ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। ম্যাজিস্ট্রেট বুঝলেন ইনি সাধারণ মানুষ নন, মহাযোগী। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের ভারতীয় সাধু-সন্ন্যাসীদের সম্পর্কে কিছু জ্ঞান ছিল। মুক্তি দেওয়া হল তৈলঙ্গস্বামীকে।
১৮৬৮-তে রামকৃষ্ণ দেব বেনারসে এলে তিনি দেখা করেছিলেন তৈলঙ্গস্বামীর সঙ্গে। রামকৃষ্ণ দেব তাঁকে বলেছিলেন, চলমান শিব। দেখলাম সাক্ষাৎ বিশ্বনাথ। যোগী শ্যামাচরণ লাহিড়িও তৈলঙ্গস্বামীর কাছে এসেছিলেন।
১৮৮৭-র পৌষমাস। শুক্লা একাদশীর পুণ্যতিথিতে তিনি প্রয়াত হন। তার আগে তৈলঙ্গস্বামী ভক্তদের সাধন-উপদেশ দিয়েছিলেন। তৈলঙ্গস্বামীর ইচ্ছাতেই চন্দনকাঠের বাক্সে ভরে গঙ্গাসমাধি দেওয়া হয়। তিনি ১৫০ বছর ছিলেন বারাণসীতে।

আরও পড়ুন :-

এখনও অনেকের কাছে বিস্ময় মহুয়া রায়চৌধুরীর মৃত্যু,

লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Spread the love

Check Also

পুলিশ ডায়রির আগেই পোস্টমর্টেম! দাহ করার পর এফআইআর! বিস্মিত সুপ্রিম কোর্ট

মঙ্গলবার আরজি কর মামলার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষণ-হত্যার তদন্তে …

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *