কমলেন্দু সরকার :
আজকের মতো সেদিনও ছিল শহর জুড়ে প্রবল বর্ষণ। আষাঢ়ের বৃষ্টি। দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত নার্সিং হোমের আটতলার ৭২২ নম্বর ঘর। সেই ঘরের দিকেই সকলের দৃষ্টি। কি হয়, না হয়। ওই ঘরেতেই শুয়ে রয়েছেন বাংলা ছবির জনপ্রিয় নায়িকা। নাম মহুয়া রায়চৌধুরী। তুখোড় অভিনেত্রী।
চলে গেলেন। তার আগে ১১ দিন ধরে আগুনে পোড়া শরীর নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষেছেন। আর পারলেন না। ঠিক ৩১ বছর আগের এই দিনটিতে। প্রয়াত হলেন মহুয়া রায়চৌধুরী। সারা টালিগঞ্জ সেদিন শোকে ভেঙে পড়েছিল। সমস্ত ছবির শুটিং বাতিল। শুধু টালিগঞ্জ বাংলা ছবির দর্শকেরাই শোকে মুহ্যমান। অনেকের কাছেই দ্বন্দ্ব মহুয়ার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নাকি হত্যা! উত্তর মেলেনি। আজও অনেকেই উত্তর খোঁজেন!
বহুদিন আগের কথা। কলকাতা শহরে তখন মাচা বেঁধে অনুষ্ঠান হত। সেদিন এক অনুষ্ঠান হচ্ছে। মহানায়িকাও এসেছেন। এসেছেন অনেক নামীদামি শিল্পী। নাচবে ছোট্ট একটি মেয়ে শিপ্রা। বাবা নীলাঞ্জন চৌধুরী নিয়ে এসেছেন তাঁর কন্যাকে। সেই শুরু।
শিপ্রা বড় হয়েছে। নাম বদলে সোনালি। এই নামেই তার মঞ্চে নাচ করা। বাবার সঙ্গে সোনালি এল পরিচালক পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। তাঁর নতুন ছবি ‘নয়া মিছিল’-এর জন্য নায়িকা খুঁজছিলেন। কিন্তু হল না। সোনালিকে পছন্দ হল না পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের। মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী। ডাকলেন সুচিত্রা সেনের মেক-আপ ম্যান। খোঁজ পেলেন।
মেয়ে সোনালিকে নিয়ে দেখা করলেন পরিচালক তরুণ মজুমদারের সঙ্গে। তখন তিনি করছিলেন ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’। সোনালিকে পছন্দ হল তরুণ মজুমদারের। সোনালি নামের বদল হল। নতুন মহুয়া। ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ই মহুয়ার প্রথম ছবি। জহুরি জহর চেনেন। তরুণ মজুমদার চিনেছিলেন মহুয়াকে। সন্ধ্যা রায় গ্রুমিং করার ভার নিলেন মহুয়াকে। যে-কোনও ব্যাপারই দ্রুত তুলে নিতে পারতেন মহুয়া। বাংলা ছবি জন্ম নিল এক তারকা।
অল্প দিনের মধ্যেই টালিগঞ্জে জায়গা করে নিলেন মহুয়া। বাংলা ছবির দর্শকেরাও মহুয়াকে দারুণভাবে নিলেন। মহুয়ার নামে টিকিট বিক্রি হত। বক্স অফিসে কদরও ছিল তাঁর। মাত্র ১৪ বছর অভিনয়জীবনে ৮৫টি বাংলা ছবি করেছিলেন। বোঝা যায় তিনি কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
যখন তাঁর কেরিয়ার তুঙ্গে তখনই মহুয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তিলক চক্রবর্তীর। কিন্তু মহুয়ার দাম্পত্যজীবন সুখের হয়নি। তিলকের দাদা মহুয়া-তিলককে নিয়ে করেছিলেন ‘আনন্দমেলা’। ছবি চলেনি। তবে উত্তম পরবর্তী যুগে যে কয়জন ইন্ডাস্ট্রির হাল ধরেছিলেন মহুয়া তাঁদের মধ্যে একজন।
তরুণ মজুমদার ছাড়াও কাজ করেছিলেন তপন সিনহা, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, পীযূষ বসু, সলিল দত্ত, ইন্দর সেন, বিজয় বসু, নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ পরিচালকের সঙ্গে। মহুয়াকে সিনেমাপ্রেমী মানুষ এখনও মনে রেখেছেন অমলা (শ্রীমান পৃথ্বীরাজ), জয়া (রাজা), নীতা (সেই চোখ), সরস্বতী (দাদার কীর্তি), বকুল (সুবর্ণলতা)।
বাংলা ছবিতে মহুয়া খুব অল্প দিনে যে-জায়গায় পৌঁছেছিলেন তা যে-কোনও অভিনেত্রীর কাছে ঈর্ষণীয়! তাঁর অকাল মৃত্যু বাংলা ছবির জগতে বিশাল ক্ষতি।
মহুয়া রায়চৌধুরীর প্রয়াণ দিবসে চ্যানেল হিন্দুস্তানের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন