অরুণাভ ঘোষ
আইনজীবী এবং কংগ্রেস নেতা :
প্রথমত, রাষ্ট্র ঠিক করতে পারে না আমি কাকে বিয়ে করব বা আমি কীভাবে জীবনযাপন করব। সুতরাং আমি কী খাচ্ছি, না খাচ্ছি স্টেট সেখানে নাকগলাতে পারে না। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র যদি মাথাগলায় সেখানে গণতন্ত্রে বিরোধীদের কোনও জায়গা থাকবে না। আমি যে-কোনও দিকে হাত চালাতে পারি কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন কাউকে আঘাত না করে বা কারওর স্বাধীনতায় আঘাত না হানে। আমার স্বাধীনতা যতক্ষণ অন্যের স্বাধীনতায় বিঘ্ন সৃষ্টি না করছে ততক্ষণ কেউ আমার স্বাধীনতায় নাকগলাতে পারে না। এখন স্টেট ঠিক করে দিচ্ছে এটা ঠিক এটা ভুল। এটা হতে পারে না। যতক্ষণ সংবিধান অমান্য না হচ্ছে ততক্ষণ কেউ কিছু বলতে পারেন না। আমি সাপ যদি খাই, সরকার যদি মনে করেন সাপ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, খাওয়া যাবে না। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু গরু একটা অন্য দিক, এটা আমার স্বাধীনতা। এখন সরকার যে-নিয়মটা করেছে সেখানে কোথাও বলা নেই গোমাংস খাওয়া কারওর স্বাধীনতায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে যার জন্য গরুর মাংস খাওয়া যাবে না। তবে তো শূকরের মাংসও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। কারণ, শূকর মুসলিমরা খায় না। দেশে ২৩ কোটি মুসলিম আছে। তাদের ধর্মে আঘাত করছে তবে শূকরের মাংসও নিষিদ্ধ হোক।
দ্বিতীয়ত, এটা একটা ব্যবসা। এটা ব্যবসাকেও আঘাত করে। অ্যালবেয়ার কামু এক মারাত্মক কথা বলেছিলেন, আমি যখনই নিজেকে জাতীয়তাবাদী বলব, এবং আমার কথা লোককে অনুসরণ করতে বলব, সেটা স্বাধীনতার সংজ্ঞা হতে পারে না।
স্বাধীনতার সংজ্ঞা অন্য। যেখানে রাষ্ট্রে বিরোধীদের বাক স্বাধীনতা থাকবে সেটাই আসল স্বাধীনতা। এখন ভারতবর্ষে বিরোধীদের কোনও স্বাধীনতা নেই। পশ্চিমবঙ্গ থেকে গোটা দেশে কোথাও নেই। আমি নিজের ক্ষেত্রে বলতে পারি, আমি নিরামিষ খাব না কিন্তু কেন আমি সেটা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেব। আমাদের সংবিধানে বাক স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে-মুহূর্তে কেউ মুখ খোলে তারপরই তার স্বাধীনতাটা হরণ করা শুরু হচ্ছে বর্তমান ভারতে।
(আরও পড়ুন ‘আজও বাবুদের গোবধে আনন্দ ‘ – ড. জিষ্ণ বসু)