কমলেন্দু সরকার :
দেখো বাঙালির ছেলে চাকরি-বাকরি পায়নি। ছেলেটি ফিরি করে বেড়ায়। এই ছেলেটিকে যদি অশিক্ষিত দেখাই তাহলে দর্শক অত খাবে না। ছেলেটি বি এ, এম এ পাশ অথচ চাকরি-বাকরি পাইনি তাকে ফিরিওয়ালা করো, দেখবে দর্শক আবেগে চোখের জলে ভাসাবে। যত চোখের জল, তত বক্স-অফিস সাফল্য। এই ছিল সুখেন দাসের সিনেমা-ফর্মুলা। কথাটা একেবারেই ফেলনা নয়। টালিগঞ্জের বাংলা ছবির বাণিজ্যসফল পরিচালক সুখেন দাস। পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর পূর্বসূরি।
সুখেন দাসের ছবির দর্শক একটা তৈরি হয়েছিল। সে সুখেন অভিনীত হোক বা পরিচালিত। বিশেষ করে মহিলা দর্শককুলই ভিড় করতেন তাঁর ছবি দেখতে। তিনি বাঙালির ঘরের ছেলে উঠেছিলেন। যেমন হয়ে উঠেছিলেন উত্তমকুমার। পরবর্তী কালে প্রসেনজিৎ। এঁরা তো ছিলেন নায়ক। কিন্তু পার্শ্বচরিত্র করে এমন জনপ্রিয়তা খুব কম জনই পেয়েছিলেন।
অথচ প্রথাগত শিক্ষা সেভাবে পাননি সুখেন দাস। কিন্তু নিজেকে তৈরি করেছিলেন। অনেকেই ‘সুখেন দাস’-এর ছবি বলে নাক সিটকান! কিন্তু সেইসময় ‘সুখেন দাস’-এর ছবিই হয়ে বাংলা ছবির সিলমোহর। হয়তো সেসব ছিল আবেগসর্বস্ব ছবি। থাকতেই পারে। কিন্তু সুখেন দাসকে বাতিলের খাতায় ফেলা যায় না। বাংলা ছবির ইতিহাসে তিনি থাকবেন আরও পাঁচজন পরিচালকের সঙ্গে। সেইসময়টাকে ২০১৭ দিয়ে ভাবলে চলবে না। সময়কালকে মাথায় রাখতে হবে। তিনি বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বাংলা ছবির বাণিজ্যকে।
পরিচালক দেবনারায়ণ গুপ্তের ‘দাসীপুত্র’ (১৯৪৯) ছবিতে সুখেন দাসের আত্মপ্রকাশ। তারপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন টালিগঞ্জে। পাঁচ দশক ধরে তিনি টানা অভিনয় করেন বাংলা ছবিতে। কাজ করেছিলেন—— তপন সিংহ, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, মঞ্জু দে, পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়, অজিত গঙ্গোপাধ্যায়, পীযূষ বসু, দীনেন গুপ্ত প্রমুখ পরিচালকের ছবিতে। সুখেন দাস নিজেও পরিচালনা করেছেন ১৯-২০টি ছবি। প্রথমে জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ পরিচালনা। ছবির নাম ‘অচেনা অতিথি’ (১৯৭৩)। তারপর একক পরিচালক ‘নয়ন’ (১৯৭৭) ছবির। তাঁর কাহিনি নিয়ে ছবিও করেছিলেন পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায় ‘নয়া মিছিল’ (১৯৭২)। বিনু বর্ধনের ছবি ‘এক টুকরো আগুন’-এ (১৯৬৩) প্লেব্যাকও করেছিলেন সুখেন দাস। তিনি যাত্রাও করেছিলেন।
সুখেন দাসের একটা মস্ত গুণ ছিল। তাঁর ছবির যখন শুটিং চলত পুরো ব্যাপারটা তিনি নিজে দেখভাল করতেন। প্রত্যেককে নিজে আপ্যায়ন করতেন। এমনকী মধ্যাহ্নভোজনের সময় সকলকে খেতে বসিয়ে তারপর নিজে বসতেন। কার পাতে কী পড়ছে, কী পড়ছে না, সেদিকেও নজর রাখতেন তিনি।
সুখেন দাস ১৯৩৮-এর এইদিনে জন্মেছিলেন। অর্থাৎ ২৮ জুলাই। তাঁর জন্মদিনে চ্যানেল হিন্দুস্তানের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
খবরের ভেতরেও থাকে খবর। সেই খবর সহজে পেতে ডাউনলোড করুন channelhindustan – এর ফ্রি অ্যাপ নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে।
https://play.google.com/store/apps/details?id=mk.droid.channelhindustan
লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন