ঋষভ মন্ডল :
আজ হ্যান্ডব্যাগ নিয়েই শপিং মলে ঢুকলাম। মলের নাম রেট্রো। কলকাতার পুরনো এবং নামী মল। শেষ পাঁচদিন ধরে রোজ একবার করে আসছি। আগে মিলিটারিতে ছিলাম। কাশ্মীরে পোস্টিং ছি্ল। এখন রিটায়ার্ড। তাই কলকাতাই আসা। আমার সংসার-পরিবার তেমন কেউ নেই। ফ্যামিলি বলতে ওই বিশ্বস্ত চাকর কালু।
.
কাশ্মীর এলাকাটা একটা চিত্রপ্রদর্শনী মতো। চারিদিকে নানা রঙের ছবি। বেশির ভাগটাই বরফের সাদা রঙে আঁকা।
কিন্তু কলকাতা হচ্ছে একটা গল্পের বই। এখানে এক-এক ধরনের লোকের,
এক-এক রকমের গল্প রয়েছে জীবনে।
বলাবাহুল্য আমার গল্প পড়তেই বেশি ভাল লাগে।
এই শপিংমলটার ক্যাফেটেরিয়াটা বেশ ভাল। এখনে এককোনে একটা চেয়ারে বসে একটা গরম কফি নিয়ে চুপচাপ বসে বসে সামনের প্রতিটা লোককে অবজার্ভ করতে আমার খুব ভার লাগে। সত্যি বলতে গেলে শুধু লোকজনদের লক্ষ করা নয়, একটু আড়ি পেতে কথা শোনাটাও আমার একটা স্বভাব!
অন্য দিনের তুলনায় আজকে ভিড়টা একটু বেশি। আজ শনিবার হয়তো তারই জন্য!
.বসে আছি হঠাৎ আমার ঠিক পাশে টেবিলেই এক মা তার ছেলেকে একটু কড়া স্বরেই বলছেন, “অরি! তুমি পছন্দ করার জন্য আর মেয়ে পেলে না! শেষে ওই মেয়েটাকে? ও কিনা হবে বোসবাড়ির বউ! আমাদের কালচারের সঙ্গে মনিয়ে নিতে পারবে ও!”..
শুনে শুধু এটুকু বুঝলাম ভদ্রমহিলাটির একটা অসম্ভব অহমিকা রয়েছে। আবার তাদের উলটো দিকে একটি কাপলকে দেখলাম। মেয়েটি মনে হয় অবাঙালি। এটা আমি আমার মানুষ দেখা থেকে আন্দাজ করলাম। ওদের দেখে বোঝা যাচ্ছে নতুন বিয়ে হয়েছে; ওদের লোকের পরোয়া নেই। নিজেদের মধ্যে আদর-আল্লাদেই ব্যস্ত।
মেয়েটি বেশ হেসে হেসে তার স্বামীকে বলছে, “ঋষভ। ও প্লিজ চকোলেট আইসটা নিয়ে আসবা?”
ছেলেটি উঠে একটু স্টাইল মেরেই বলল, “জো হুকুম জিনিয়া ডার্লিং।”
ওদের দেখে মনে মনে বেশ উপভোগ করছিলাম। এমন সময় চোখটা গেল একদল টিনেজ গ্রুপের দিকে। একজন মেয়ে আর তিনজন ছেলে। মেয়েটি হাতে ফোন নিয়ে তাদের গ্রুপের সেলফি নিচ্ছিলো। আর চেঁচিয়ে বলছে, “ঋক তুই দাঁতগুলো ঢোকা ভেতরে; আর রাজু; ভিকি তোরা কি দলছাড়া বাঁদর?একটু কাছাকাছি আই।”
পাশ থেকে একটা ছেলে বলল, “আরে ধুর, দীপা তুই সেলফি নিতেই পারিস না.. আমাকে ফোনটা দে।” ওদের চারজনকে দেখে হাসি পেয়ে গেল। ছোটবেলায় আমারও এইরকম একটা দল ছিল। যদি কখনও বিয়ে-সংসার করতাম তবে আমার ছেলে-মেয়েরাও এদের বয়সি হত। এদের মতন দল দেখে একটা ইমোশন আমার বয়সি লোকের ভেতর আসে; আর তা হল নস্ট্যালজিয়া!
কফি খাওয়া শেষ করে কাফেটেরিয়ার বাইরে রেলিংটা ধরে দাঁড়িয়ে নীচেরতলার মানুষগুলোকে কিলবিল করতে দেখছি। হঠাৎ পাশে কেউ ফিসফিস করছে মনে হল। দেখলাম আরেকটা জুটি দাঁড়িয়ে আছে।
একটু আড়িপাততেই শুনলাম, মেয়েটা বলছে;
” তুমি কি সত্যি সত্যি চোর?? ময়ূরাক্ষ!”..
.
আমি মনে মনে ভাবলাম, যা বাবা এত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে কিনা চোর!
তারপর আমি আর কান দিলাম না ওদের কথায়; কারণ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম আমাকে এখন বেরতেই হবে।
আর যায় হোক, আমি কিছু কিছু ব্যাপারে খুব পাংচুয়াল!
নীচে নামার চলন্ত সিঁড়িটায় বেশ ভিড়। আমিও ভিড়ের মধ্যে নেমে যাচ্ছি সিঁড়িটা দিয়ে; আবার পাশে তাকাতেই বিপরীতমুখী সিঁড়িটাতে লক্ষ করি একটি দম্পতি… ছেলেটি একটি ছোট বাচ্চা নিয়ে আছে। বোধহয় ছেলেটি স্ত্রী তার ওপর রাগ করেছে…
ছেলেটি বলছে “দিয়া!! আমার কথাটা শুনো at least.!”
আর মেয়েটি অভিমান করে বলছে “রোমি! আমি কিচ্ছু শুনবো না!” ওদের দিকে তাকাতে গিয়ে কখন নীচে এসেছি খেয়াল নেই। নামার সময় কেউ বোধহয় কাউকে পেছন থেকে ডাকছিল আমি লক্ষ করিনি।
.
এইসব জায়গায় সময় কাটাতে আমার বেশ ভাল লাগে।
আমার বেশ ভাল লাগে গল্প পড়তে। কিন্তু সব গল্প আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী শেষ হয় না..
কিছু গল্প বাকি থেকে যায়।
Darun… Next ta kobe asbe