Breaking News
Home / TRENDING / নারী দিবস কি শুধুমাত্র একটি দিন

নারী দিবস কি শুধুমাত্র একটি দিন

সুমন সেনগুপ্ত

 

ধর্ষণ ও নারী নিগ্রহের ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলেছে। নির্ভয়া কাণ্ডের পরে আইন আরও কঠোর ও শক্তিশালী হওয়ার পরেও। ধর্ষণের পরে ধর্ষক ধর্ষিতাকে চুপ করে থাকারও হুমকি দিচ্ছে। এই সব ঘটনা সুস্থ ভাবনা চিন্তার অভিমুখই স্তব্ধ করে দেয়। পাশাপাশি ফি বছর ঘটা করে নারী দিবস পালিত হয়। বিভিন্ন সেমিনারে নারীর সুরক্ষা প্রগতি নিয়ে গালভরা বক্তব্য পেশ হয়। তথাপি অবস্থার বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটে না। নারী নির্যাতনের এই ঘটনা বন্ধ করার জন্য অনেকেই সামাজিক প্যার্টান বদলের কথা বলছেন। আর নারীকেও তার নিজের অবস্থান সম্পর্কে পুরনো মূল্যবোধকে পালটানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। যে কোন ঘটনার মূল খুঁজতে গেলে আমাদের অতীত ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি ফেরাতে হবে। ধর্মান্ধতা-জাতিবৈরিতা-রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সব কিছুর পেছনে ধর্ষণকেই অনুঘটক করা হয়। এখন প্রশ্ন কতটুকু শরীরী আগ্রাসনের রক্তাত্ত প্রকাশকে ধর্ষণ বলা হবে। আর একটি প্রশ্নও উঠছে, বিবাহিত নারীকে কি স্বামী ধর্ষণ করতে পারে? যখন নারীটি সহবাসে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। অধুনিক যুগে এই নিয়ে চলছে আইনি লড়াই। তবে আইন পালটালেই সামাজিক অবস্থান বদলে যায় না। ইতিহাস থেকে একটি ঘটনা তুলে ধরছি। ফুলমণি দাসীকে ধর্ষণ করেছে তার স্বামী হরিমোহন মাইতি। তার ফলে ফুলমণি মারা যায়। এই নিয়ে সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি 1899 সালের। বারো বছরের বালিকা ফুলমণির সঙ্গে স্বামী হরির সহবাসের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাবে ফুলমণির মৃত্যু ঘটে। এর আগে দু-চারবার ফুলমণির সঙ্গে সহবাস করেছিল হরি। ফুলমণি তো মারা গেল। এবার হরির কী হল?খুন-ধর্ষণ কোন ধারাতেই এই ঘটনাটা পড়ে না। কিন্তু ফুলমণির মৃত্যুর জন্য যে হরি দায়ী তা প্রমানিত। ফলে হরি মাইতির এক বছর কারাবাসের আদেশ হল। এরপরই নাগরিক সমাজ ফুঁসে উঠল। তাদের বক্তব্য– হরি তো আগেও সহবাস করেছে। কেননা সে ফুলমণির স্বামী। এখানে হরির দোষ কোথায়। হরি অবুঝ হতে পারে। কখন সহবাস করতে হয় সে জ্ঞান নাও থাকতে পারে। এখানে হরির দোষ কোথায়। ফুলমণি হত্যার জেরে এই বছরই সহবাস সম্মতি আইন পাস হতেই বঙ্গসমাজের ভিতটাই যেন নড়ে গেল। নাগরিক সমাজ দাবি জানাল,এই আইন তারা মানবেন না। ফলে আইন করলেই মানসিক স্থিতিকে পালটে ফেলা যায় না। এখন এ দেশে এই প্রশ্ন ওঠে,সম্মতি আদায়ের পরেও যৌন মিলনকে কি ধর্ষণ বলা যায়। কেননা এখন বেশকিছু পুরুষ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসে লিপ্ত হয়। এ দেশে ধর্ষিত মেয়েটির সামাজিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। মেয়েটি যদি ফুটপাথবাসী হন, সে ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা কম। আর যৌনকর্মীকে ধর্ষণ করলে তাকে ধর্ষণ অ্যাখ্যা দিতে কুণ্ঠা বোধ করেন অনেকেই।
অনেকেই বিশ্বায়নের বিশ্বায়িত উদারনীতিকেই দায়ী করেন। ভারতীয় সমাজে নারী নিগ্রহের দায় শুধু বিশ্বায়িত সংস্কৃতির খারাপ দিকগুলির ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। এ দেশে এখনও নারীকে নিয়ে পুরনো সামাজিক ধ্যান ধারনা পালটায় নি। সামাজিক যে উত্তরণ ঘটেছে তা উপরিস্তরে, চেতনার স্তরে পরিবর্তন ঘটে নি। আমাদের সামাজিক ইতিহাসেও কারণ খোঁজা দরকার।
নীতি ও ধর্মের কথায় আসি। মনুসংহিতায় স্ত্রী ধর্ম-স্ত্রীর ব্যভিচার নিয়ে বিধান দেওয়া হলেও,ধর্ষণ নিয়ে সে ভাবে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। বর্ণাশ্রমে বিভক্ত সমাজ কোন জাতির কন্যার সঙ্গে সংগমে লিপ্ত হলে কী কী শাস্তি হবে তার বিধান দেওয়া আছে। যেমন নিন্ম জাতীয় পুরুষ যদি উচ্চ জাতীয় কন্যার ভজনা করে ,তা হলে পুরুষটির লিঙ্গচ্ছেদের আদেশ দেন রাজা। কিন্তু উচ্চ জাতীয় পুরুষ যদি নিম্ন জাতীয় কন্যার ভজনা করে সেক্ষেত্রে কন্যাটির পিতা যদি রাজি থাকে তা হলে পুরুষটি দক্ষিণামূল্য ধরে দিলেই রেহাই মিলবে। এই সামাজিক অবস্থান কি বদলেছে? এক কথায় উত্তর–না। হাজারটা নারী দিবসেও এই সামাজিক অবস্থান পালটে যাবে না।

 

মতামত লেখকের ব্যক্তিগত

 

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন  

https://www.youtube.com/channelhindustan

https://www.facebook.com/channelhindustan

 

 

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *