চ্যানেল হিন্দুস্তান ব্যুরো:
ভারত ও চীনের সেনার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ফলে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা। সোমবার গভীর রাতে গালওয়ান উপত্যকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের ফলে প্রাণ হারিয়েছেন এক সেনা কর্তা সহ দুই জওয়ান। অন্যদিকে চীনেরও কয়েকজন সেনার মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ফলে দুই দেশের পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
এই দুই দেশের সীমান্ত সমস্যা প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। তার মধ্যে পূর্ব লাদাখের প্যাংগং হ্রদকে নিয়ে পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি জটিল। এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে একাধিকবার সংঘাত বেঁধেছে নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে। জম্মু-কাশ্মীরের মধ্যে (বর্তমানে লাদাখ) প্যাংগং হ্রদটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ঘন নীল জল আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। তবে বছরের বেশকিছু সময় এই হ্রদের জল পুরোপুরি বরফে পরিণত হয়। তখন এই হ্রদের উপর দিয়ে অনায়াসে হেঁটে বা গাড়ি চালিয়ে যাওয়া যায়। আমরা হিন্দি সিনেমা থ্রি-ইডিয়টে (3 Idiots) এই হ্রদের ঘন নীল জলের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাই। বছরে বিভিন্ন সময়ে এই হ্রদের বিভিন্ন চরিত্র পাওয়া যায় বলে পর্যটকদের কাছে এই হ্রদ খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু এখন এই হ্রদকেই কেন্দ্র করে ভারত-চীন দু’দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পশ্চিম-পূর্বে বিস্তৃত প্যাংগং হ্রদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩৫ কিমি। যার মধ্যে ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র ৪৫ কিমি। বেশিরভাগ অংশ চীনের দিকে থাকায় যুদ্ধে অনেক বেশি সুবিধা পায় চীনা সেনারা। এই হ্রদের উত্তর-দক্ষিণ বরাবর রাস্তা, ব্রিজ বানিয়ে ক্রমশ ভারতীয় ভূখণ্ড অধিকারের চেষ্টা করে চীন। ১৯৬২ সালে প্রথমবার প্রকৃত নিয়ন্ত্রনরেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে বেজিং। তারপর ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় এই অঞ্চল থেকে সেনা সরানো হলে প্রায় ৫ কিমি ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে নেয় চীনারা। অর্থাৎ ভারতীয় ভূখন্ড দখলের জন্য এই হ্রদ চীনাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আবার এই অঞ্চলে রয়েছে পরপর ৮টি ফিঙ্গার (সরলার্থে অনেকগুলি পর্বতের খাঁজ)। যা ১৯৬২ সালের আগে ভারতীয়দের দখলে ছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালের পর চীন ৮ নম্বর ফিঙ্গার পেরিয়ে (প্রথম যদি ভারতের দিকে ধরা হয়, তবে পরপর সাজালে অষ্টম নম্বর ফিঙ্গারটি চীনের দিকে হয়) ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে। বর্তমানে ভারত ও চীনের সেনা বাহিনী ৪ নম্বর ফিঙ্গারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং এটিকেই এখন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা ধরা হয়। কিন্তু চীনের দাবী ২ নম্বর ফিঙ্গার পর্যন্ত তাঁদের সীমা রয়েছে এবং এটিই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা। অর্থাৎ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ৪টি ফিঙ্গার নিজেদের অধীনে এনেও এখন আরও দুটি ফিঙ্গার অধিগ্রহণ করতে চাইছে চীন। যা নিয়েই বিবাদ ড্রাগন ও হাতির দেশের মধ্যে। এর আগে দ্বিতীয় ফিঙ্গারে একাধিবার প্রবেশের চেষ্টা করেছে চীনা সেনা। কিন্তু ভারতীয় সেনার তৎপরতায় তা সফল হয়নি।