ঈষানিকা ভোরাই
তাঁর উপর আস্থা হারিয়েছেন ‘জঙ্গলমহলের মা’, তাই কী হঠাৎ করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জঙ্গলমহলের দীর্ঘ ছয় বছরের অবিসংবাদী ‘পুলিশ নেত্রীর’!
এই প্রশ্ন এখন আর শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরেই সীমাবদ্ধ নয়, সীমাবদ্ধ নয় শুধু পুলিশ মহলেও। রাজনৈতিক মহলেও তুমুল আলোচনায় ভারতী ঘোষের আকস্মিক পদত্যাগ ।
রাজ্যে প্রশাসনিক রদবদলের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে এমন উথাল পাতাল আর কোনও ক্ষেত্রে হয়নি । মাস দুয়েক আগে নবান্নের জারি করা এক নির্দেশিকায় সিআইডি-র প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল রাজেশ কুমারকে । রাজেশ কুমারের মত দক্ষ অফিসারকে সিআইডি থেকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পাঠিয়ে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে রাজনীতি ছিল বলেই মনে করেন রাজ্য পুলিশের একাংশ। আর প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে রাজনৈতিক মহলেও গুঞ্জন শুরু হয়েছিল সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া মুকুল রায়-সখ্য রাজেশ-বদলির নেপথ্য কারণ। মুকুল রায়ও তখন সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছিলেন “আমাকে হেনস্থা করার জন্যেই এই রদবদল করেছে সরকার।”
আর ২৫ ডিসেম্বর ভারতী ঘোষের রদ বদলের নির্দেশিকা ও নতুন পদে যোগ না দিয়ে সরাসরি নবান্নের ১৪ তলায় পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেওয়া একপ্রকার নজিরবিহীন ঘটনাই বটে। এক্ষেত্রেও কী মূকুল ঘনিষ্ঠতার মাসুল দিলেন ভারতী ঘোষ! নাকি সদ্য শেষ হওয়া সবং বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি-র ভোট বৃদ্ধির কারণেই পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের পদ থেকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে পাঠিয়ে রাজ্য পুলিশ-মহলে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন মমতা! একসময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ ছিল এই ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে যে, সাংবিধানিক পদে থেকে তিনি বকলমে শাসক দলের জেলা সভাপতির কাজও সামাল দিতেন । এমনকি শাসক দলের হয়ে হুমকি ধমকি দিয়ে দলবদল করানোর অভিযোগও ওঠে এই ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধেই । মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরানোর ক্ষেত্রে সরকারের, বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর একান্ত আস্থাভাজন ছিলেন এই পুলিশ সুপার । ২০১৬ লোকসভা নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নির্বাচন পরিচালনার কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে, যদিও নির্বাচন পর্ব মিটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুনরায় স্বপদে তাঁকে ফিরিয়ে আনেন মমতা ।
তবে মুকুল রায় দল ছাড়ার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে একসময় রাজ্যের সবচেয়ে হাই প্রোফাইল এই পুলিশ সুপারের। পাশাপাশি প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের সঙ্গেও ঠিকমতো বনিবনা হচ্ছিল না ভারতী ঘোষের।আর পশ্চিম মেদিনীপুর তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ তো প্রথম থেকেই ভারতীর বিরুদ্ধে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে মুকুল সখ্যতার কারণেই ভারতীর রদবদল ও সেই কারণে তাঁর পদত্যাগ বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহল।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan