Breaking News
Home / TRENDING / নির্মম অত্যাচারী লেনিনের পুজো কেন করব আমরা!

নির্মম অত্যাচারী লেনিনের পুজো কেন করব আমরা!

রন্তিদেব সেনগুপ্ত:

 

ত্রিপুরায় লেনিনের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে হট্টগোল শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। এই প্রতিবাদে সামিল হয়ে যাঁরা মিছিল করছেন, তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন, লেনিনের মূর্তি বা লেনিন পুজো কেন করব আমরা? কারন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাশিয়ান বিপ্লবের ইতিহাস ঘেঁটে যদি দেখা যায় তবে সেখানে কিন্তু লেনিনকে পুজো করার মতো কিছু নেই। ইতিহাসই বলছে, সোভিয়েত বিপ্লবে জার ও তাঁর সমগ্র পরিবারকে নৃশংসভাবে খুন করে বলশেভিক বাহিনী। রক্ষা পায়নি পরিবারের শিশুরাও। ঐতিহাসিকরা লিখছেন, সমগ্র সোভিয়েতবাসীর সমর্থন ছিল না লেনিনের পাশে। অনেকেই সেসময় বলশেভিক পার্টি এবং লেনিনের বিরোধিতা করেছিলেন। বিপ্লবের পর তাঁর বিরোধীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিলেন লেনিন। নিজের বশে আনতে বহু মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল লেনিনের বলশেভিক বাহিনী। পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকরা সোভিয়েত বিপ্লবের কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, সোভিয়েতের সম্পন্ন কৃষকেরা এই বিপ্লবের বিরোধিতা করেছিলেন। তাই লেনিন নিজে নির্দেশ দিয়েছিলেন এই কৃষকদের ওপর অবাধে অত্যাচার চালানোর। লেনিনের নির্দেশেই বিপ্লবের পরেই ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ১০০ জন সম্পন্ন কৃষকদের। এসময় লেনিন বলেছিলেন, তিনি ‘বিপ্লবের স্বার্থে সন্ত্রাস’ করবেন। আর এই সন্ত্রাসের জেরেই বিপ্লবের চেহারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল তৎকালীন সোভিয়েতে। ইতিহাস বলছে ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্রিমিয়ায় লেনিনের ‘রেড আর্মি’ ৫০ হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। লেনিনের নির্দেশেই তৈরি হয়েছিল ‘গুলাগ’ বা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। বিপ্লবের বিরোধীদের এই গুলাগেই পাঠানো হত। সেখানে কিন্তু শ্রেণীভাগ করেছিলেন লেনিন নিজেই। একদল বিরোধীদের দিয়ে তিনি জমাদারের কাজ করাতেন, এক দলের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হত ‘ইয়োলো টিকিট’। তাঁরা বিপ্লবের বিরোধিতা করেছিলেন সেই অপরাধে এই টিকিট ঝুলিয়ে ঘুরতে হত সবসময়। এঁদের শ্রেণীশত্রু মনে করা হত এবং সবসময় রেড আর্মির নজরে থাকতেন তাঁরা। তৃতীয় দলকে অলস এবং শ্রেণীশত্রু বলা হত। কোনও বিচার ছাড়াই সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হত এঁদের। লেনিন ক্ষমতায় থাকাকালীন রাশিয়ার প্রথম গোয়েন্দা বাহিনী ‘চেকা’ তৈরি করেন। লেনিনের নির্দেশেই মানুষদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাত তারা। মহিলাদের ধর্ষন এবং পুরুষদের নির্বিচারে হত্যা ছিল তাদের মূল কাজ। সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপ্লবের নামে কী হয় তা ফাঁস করে দিয়েছিলেন আলেকজান্দার ফরজেনেস্কি। বিশিষ্ট রাশিয়ান বিজ্ঞানী আন্দ্রে শাকারভ, যাঁকে নোবেল পুরস্কার নিতে যেতে দেয়নি সোভিয়েত, তিনিও লিখে গিয়েছেন লেনিন বাহিনীর অত্যাচারের কথা। তাহলে যারা এধরনের নির্মম অত্যাচার করে তাকে বিপ্লবের তকমা দেয় তার মূর্তি স্থাপন বা পুজো কেন করা হবে! বিশ্বের তিনজন স্বৈরাচারির মধ্যে একজন লেনিন। যদি হিটলার ঘৃণা ও সমালোচনার যোগ্য হন তবে লেনিন কেন হবেন না! লেনিন কিন্তু সোভিয়েতে গণতন্ত্র স্থাপন করেন নি। ভারতীয় ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা কোথায়!
লেনিনের মূর্তি সরিয়ে দেওয়া আসলে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহির্প্রকাশ। আর এরকমটা যে শুধু ত্রিপুরায় হয়েছে তা নয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দেশ জুড়ে প্রচুর লেনিনের মূর্তি সরানো হয়েছে। রোমানিয়া এবং পোল্যান্ড থেকেও লেনিনের মূর্তি সরানোর খবর এসেছে। আজ লেনিনের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে যারা মিছিল করছে, তারা বরং ভেবে দেখুক কেন ত্রিপুরার মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করল? কেন খোদ রাশিয়ায় লেনিনের হাজারেরও বেশি মূর্তি সরানো হল? রাশিয়ায় তো সঙ্ঘ ছিল না! এই নির্দেশ তো সংঘ দেয়নি। এই প্রশ্নগুলোর পর্যালোচনা করলেই লেনিনের মূর্তি পুজো কেন করব সেই প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া যাবে।

মতামত লেখকের ব্যক্তিগত

 

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

https://www.youtube.com/channelhindustan

https://www.facebook.com/channelhindustan

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *