পার্থসারথি পাণ্ডা :
গঙ্গাসাগরের পথে পথে এখন বার বার একটাই সুর বেজে উঠছে, ‘মিলে সবে ভারত-সন্তান, একতান-মন-প্রাণ’। বাজবে না-ই বা কেন, পাঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাট-মারাঠা-উৎকল-বঙ্গ সব এ-পথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে যে। সবার এখন একটাই লক্ষ্য, সংক্রান্তির সকালে স্নানটুকু সেরে মন্দিরে কপিলমুনির দর্শন।
ভক্তকুলের এই ভিড়ে সেই সূদুর ঔরঙ্গাবাদ থেকে বোঁচকাবুচকি সমেত জনাসত্তর দেহাতী মারাঠি নারীপুরুষ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন অর্জুন গুলে। তীর্থে তীর্থে গাঁয়ের মানুষদের নিয়ে যাওয়াটাই তাঁর পেশা। এ-পেশায় খুব বেশি লাভ যে থাকে তা নয়, পেশার বাইরে তাঁর এ-একটা নেশাও বটে। দলের প্রায় সকলেই পঞ্চাশ পেরনো মেয়েপুরুষ। কারও কারও বয়স আরও বেশি। তাদের জানছুট, দলছুট হয়ে যাওয়ার সমস্ত দায় তার একার। ভালোয় ভালোয় তীর্থটুকু করিয়ে ঘরের মানুষ ঘরে ফিরিয়ে দিতে পারলে তবেই তার স্বস্তি।
সংক্রান্তির সকালে এঁদের স্নানের ব্যবস্থা করে, কেউ তর্পণ করতে চাইলে তাকে তর্পণ করিয়ে, কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করে তবেই আসে ফেরার পালা। এঁরা দেহাতী মানুষ। মারাঠি ছাড়া আর কোন ভাষাই জানেন না। কেউ একবার হারিয়ে গেলে ঝামেলার শেষ থাকবে না। তাই দড়ির ব্যারিকেড বানিয়ে সত্তরটা মানুষকে আগলে, সারাটিক্ষণ তাদের চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে। কারণ, সব ভালো, যার শেষ ভালো।
লক্ষ লক্ষ মানুষের এই ভিড়ে খোঁজ নিলে অর্জুন গুলের মতো নিতান্তই পেট ও প্রানের টানে আসা এমন অনেকেরই দেখা মিলবে। অন্যের মোক্ষ-পথের কান্ডারী হয়ে দুটো পয়সা রোজগার করে এই গরীব মানুষগুলো যদি ঘরের ছেলেমেয়ের মুখে একচিলতে হাসি ফোটাতে পারে, সেখানেই এদের মোক্ষ।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan