Breaking News
Home / TRENDING / গঙ্গাসাগর আজ মোক্ষ পথের সাগর-তীর্থ

গঙ্গাসাগর আজ মোক্ষ পথের সাগর-তীর্থ

পার্থসারথি পাণ্ডা :

শুনতে পাচ্ছেন, ভগীরথের শঙ্খের ডাক?

হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছেন বলেই তো প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে, জেটি ঘাটের কাতারে দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে রাত-দিনের ফারাক ভুলে ছুটে চলেছেন সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে গঙ্গাসাগরের পুণ্যসলিলে অবগাহন করতে।

সেই কোন পুরাণের যুগে মর্ত্যের মাটিতে সুরেশ্বরী মা গঙ্গাকে শঙ্খনাদে আবাহন করেছিলেন ভগীরথ। এই আবাহনের এক সুন্দর কাহিনী আছে।

একবার ভগীরথের পূর্বপুরুষ রাজা সগরের অশ্বমেধের ঘোড়া গেল হারিয়ে। সে-ঘোড়া না পেলে তো অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পূর্ণ হবে না। তাই ঘোড়ার খোঁজে বেরোল সগরের প্রথমা স্ত্রীর ষাট হাজার পুত্র। তারা সারা পৃথিবী খুঁজে শেষে হাজির হল কপিলমুনির আশ্রমে। সেখানেই তারা ঘোড়াটিকে দেখতে পেল। কাছেই তপস্যা করছিলেন মুনিবর। তাঁকেই ঘোড়া-চোর ভেবে তারা বেঁধে আনতে গেল। তখন অকালে তপস্যা ভঙ্গ হওয়ায় মুনির খুব ক্রোধ হল। সেই ক্রোধের আগুনে সগরপুত্রেরা নিমেষে ছাই হয়ে গেল। পুত্রেরা যখন আর ঘরে ফিরল না, তখন সগরের ভ্রাতুষ্পুত্র অংশুমান গেলেন তাঁদের খোঁজে। খুঁজতে খুঁজতে শেষে তিনি জানতে পারলেন সগরপুত্রদের পরিণতির কথা। তখন তিনি তাদের আত্মার শান্তির জন্য তর্পণ করতে গেলেন। এসময় গরুড় এসে জানালেন যে, একমাত্র সুরধুনী গঙ্গার পবিত্র জল ছাড়া তাঁদের উদ্ধার সম্ভব নয়।

 

কিন্তু গঙ্গা তখন স্বর্গে বাস করেন, তাঁকে মর্ত্যে আনবে কে? অনেক চেষ্টা করেও এ-কাজে কেউই সফল হন না। শেষে সগরবংশে জন্ম নিলেন ভগীরথ। তিনি তপস্যায় ব্রহ্মা ও মহাদেবকে তুষ্ট করে মা গঙ্গাকে মর্ত্যে আনার বর লাভ করলেন। গঙ্গার প্রবলবেগ প্রশমিত করে পৃথিবীকে রক্ষা করতে মহাদেব তাঁকে জটায় ধারণ করলেন। ভগীরথের শঙ্খের মধুর নাদ শুনতে শুনতে জটাজাল বেয়ে সুরধুনী নেমে এলেন মর্ত্যে এবং পাতালে। তাঁর ধারাজলে সগরপুত্রদের ছাই ভাসিয়ে তাদের উদ্ধার করলেন। তারপর কপিলমুনির আশ্রম পেরিয়ে সাগরে এসে লীন হলেন। তাই এই সাগরসঙ্গমে অবগাহন করে সগরপুত্রদের মতোই মোক্ষ লাভ করতে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে ভক্তকুল ছুটে আসেন আজও।

কিন্তু মকর-সংক্রান্তির দিনটি এই অবগাহনের জন্য বিশেষ হয়ে উঠল কেন? এরও একটি ছোট্ট কাহিনীসূত্র আছে।

শরশায়িত ভীষ্মদেব নিজের মৃত্যু তথা মোক্ষের জন্য এই সময়কালটিকেই বেছে নিয়েছিলেন। এ হল দেবতাদের জাগরণের কাল। সূর্যদেবের উত্তরায়ণ গতির সূচনাকাল। তাই মকর-সংক্রান্তির আর এক নাম ‘উত্তরায়ণ-সংক্রান্তি’। এভাবে পুরাণ-লোকপুরাণের ধারাবেয়েই গঙ্গাসাগর আজ মোক্ষপথের সাগর-তীর্থ হয়ে উঠেছে।

 

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

https://www.youtube.com/channelhindustan

https://www.facebook.com/channelhindustan

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *