Breaking News
Home / TRENDING / উত্তমকুমার বাংলা ছবির গুরু

উত্তমকুমার বাংলা ছবির গুরু

কমলেন্দু সরকার  :

“আমি অভিনেতা। অভিনয়ই আমার জীবন,“ উত্তমকুমার বলেছিলেন একথা। এবং বাক্যগুলো মনে রেখেছিলেন চিরকাল। কিন্তু অভিনেতা হতে গিয়ে প্রথম জীবনে কম হেনস্তা হননি! তবুও তিনি কোনওদিন ফ্লোর ছেড়ে পালাননি। দাঁতে দাঁত চেপে করেছিলেন, নিজেকে বাংলা নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। উত্তমকুমারকে বহু ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনতে হয়েছিল শুটিং করতে গিয়ে!

তিনি তখন চাকরি করেন পোর্ট কমিশনার্সে। অফিস কেটে কিংবা ছুটি নিয়ে শুটিং করে আসেন স্টুডিয়োপাড়ায়। সেদিন ছুটি নিয়েই গেছিলেন শুটিঙে। শুটিং ছিল ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োয়। ছবির নাম ‘ওরে যাত্রী’। তাঁর ভূমিকা এক ডাক্তারের। গলায় স্টেথিসকোপ ঝুলিয়ে রোগী দেখতে এসেছেন। রুগিণী প্রভা দেবী। সেইসময়ের দাপুটে অভিনেত্রী। উত্তমকুমার নিজেই বলছেন, “আমার চেহারা ছিল রোগা।“

আলো রেডি। উত্তমকুমার শট দেওয়ার জন্য রেডি। পরিচালক রাজেন চৌধুরী অ্যাকশন বললেই শট দেবেন। সেইকালে প্রযোজক, পরিচালকের মোসায়েবরা ভিড় করে থাকত ক্যামেরার পিছনে। উত্তমকুমারকে দেখে একজন ফুট কাটলেন, “রাজেনদা, এ কলির ভীমকে কোথা থেকে পেলেন! পায়ে পাথর বেঁধে না রাখলে ঝড় দিলে উড়ে যাবে যে!” উত্তমকুমার বলছেন, “কথাটা শাণিত ছুরির মতো বিঁধলো আমার মনের ভিতর।“ আর একজন বললেন, “একেবারে নতুন আমদানি হয়েছে যে গাঁ থেকে।”

উত্তমকুমার বলছেন, “একেই নার্ভাসনেস আর উত্তেজনায় আমার আগেই হাত-পা ঠান্ডা হতে আরাম্ভ করেছিল, এ ধরনের মন্তব্য শুনে শুরু হল কাঁপুনি।‘ যাই হোক, পরিচালক অ্যাকশন বলতেই উত্তমকুমার হাত ধরে নাড়ি দেখছেন প্রভা দেবীর। শট শুরুর আগেই প্রভা দেবী বললেন, “এ ছেলে অভিনয় করবে কী! এর তো এখনই  হাত-পা ঠান্ডা হয়ে জমে এসেছে। এ তো কাঁপছে ভয়ে।“ কেউ একজন মন্তব্য করলেন উত্তমকুমারকে লক্ষ্য করে, “চেহারা দেখেই মালুম হয়েছে। আগেই বলেছিলুম এর দ্বারা কিসসু হবে না।“

উত্তমকুমার মনে মনে ভাবলেন, “আমার দ্বারা হবে না! কথাটা শুনে আমার সারা মনপ্রাণ হতাশায় ভরে গেল। কিন্তু কেন হবে না, তা তো কেউ কিছু বললেন না।“ উত্তমকুমার বলছেন, “সেই ‘কেন’র জবাব কেউ দিল না বটে, অথচ ফ্লোর ছেড়ে যাওয়া আমার চলল না। যাব বলে তো আসিনি।… সুযোগ যখন পেয়েছি তখন তাঁকে ছাড়া কিছুতেই চলবে না। যাক, সেদিন ঘেমে গিয়েও পরিচালকের নির্দেশমতো ছবির কাজ করে গেলাম।“

উত্তমকুমারের এই মনের জোর এবং সিদ্ধান্ত তাঁকে বহুদূর নিয়ে গেল। পরের ছবিতেই নায়ক। নাম ‘কামনা’ (১৯৪৯)। নায়িকা ছবি রায়। পরিচালক নবেন্দুসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তমকুমার ছবিতে কাজ করার পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ১৫০০ টাকা। ছবি চলল না। হতাশা পেয়ে বসল। কিন্তু হতাশা ঝেড়ে ফেলে মনের জোর আনলেন। ঘুরতে এ স্টুডিয়ো সে স্টুডিয়ো। যেখানেই খোঁজ পান যান। পাহাড়ি সান্যাল এম পি স্টুডিয়োয় কোনও এক পরিচালককে বলেছিলেন, “আমার মনে হয় ঘষলে মাজলে ভালই হতে পারে।“ অভিজ্ঞ পাহাড়ির সান্যালের এই কথা উত্তমকুমারের মনে জোর এনেছিল।

পাহাড়ি সান্যালের কথা ফলেও গিয়েছিল অক্ষরে অক্ষরে। উত্তমকুমার নিজেকে তৈরি করেছিলেন। পঞ্চাশের প্রায় গোড়া থেকেই শুরু হয়েছিল উত্তম-যুগ। তিনি ক্রমশ হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সিনেমার ‘গুরু’। আমৃত্যু তাই-ই ছিলেন। মৃত্যুর পর ৩৭ বছর কাটলেও আজও তাঁর এতটুকু ক্রেজ কমেনি। উত্তমকুমার এক ফেনোমেনন। উত্তমকুমারের অভিনয়ে কোনও অগ্রজ অভিনেতার প্রভাব ছিল না। বরং ছিল হলিউডের প্রভাব। বাবা তিনকড়ি চট্টোপাধ্যায় মেট্রো সিনেমা হলের প্রোজেকশন  রুমে কাজ করার সুবাদে বহু হলিউডি ছবি দেখেছিলেন। তিনি হলিউডের অভিনেতাদের মতো দর্শকের চাহিদাকে মেনে নিজের অভিনয়রীতি তৈরি করেছিলেন। যা ছিল তাঁর একেবারে নিজস্ব। যার জন্য তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলা ছবির গুরু।

বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমার ইতিহাস গড়েছে উত্তম-সুচিত্রা জুটি। উনি যাঁর সঙ্গেই জুটি বেঁধেছেন সেটাই জুটি হয়ে উঠেছিল। যেমন— উত্তম-সবিত্রী, উত্তম-সুপ্রিয়া, উত্তম-অঞ্জনা, উত্তম-অপর্ণা ইত্যাদি। আসলে উত্তমকুমার নায়ক থেকে তারকা হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ করার পর থেকেই অভিনয় প্যাটার্ন বদলে ফেলেন তিনি। উত্তমকুমারের মধ্যে ছিল একটা বাঙালিয়ানা। সেই বাঙালিয়ানার জোরেই উত্তম ইমেজ। তাই তো বাংলা সিনেমার প্রথম এবং শেষ গুরু।

 

লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Spread the love

Check Also

রাহুলের পাইলট প্রোজেক্ট, মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসে আধিপত্য হারাতে পারেন অধীর

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে রাহুল গান্ধির নতুন উদ্যোগে মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস রাজনীতিতে খর্ব হতে পারে অধীর …

আমি আসছি! নাম না করে শুভেন্দুকে শাসালেন আনিসুর

চ্যানেল হিন্দুস্থান, নিউজ ডেস্ক: নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারিকে শাসালেন আনিসুর রহমান। একদা …

আগামী সপ্তাহে শতাধিক ট্রেন বাতিল হাওড়া-বর্ধমান শাখায়

চ্যানেল হিন্দুস্থান, নিউজ ডেস্ক: উন্নত পরিষেবা পেতে চলেছে পূর্ব রেল হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখায়, আর তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *