Breaking News
Home / TRENDING / ধর্ষণেও টিআরপি খোঁজে মিডিয়া, বিদিতা-কেদারের অভিযোগ ওড়ালেন অঞ্জন-সুমন

ধর্ষণেও টিআরপি খোঁজে মিডিয়া, বিদিতা-কেদারের অভিযোগ ওড়ালেন অঞ্জন-সুমন

মধুমন্তী  
তিন বছরের ছোট শিশুর শরীরে বিঁধে গেছে সাতটা সুচ। সন্দেশখালির বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করে তাঁর যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে কাঁচের ভাঙা বোতল। ঘটনাগুলো সদ্য ঘটলেও আমাদের চোখের সামনে এখনও স্পষ্ট ১৬ ডিসেম্বর ২০১২-র সেই রাত। দিল্লিতে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর নির্ভয়ার যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল রড, তারপর ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল বাস থেকে। সামনে এসেছিল এক নৃশংসতার নজির। সারা দেশ উত্তাল হয়েছিল, তারপরেও ঘটেছে কামদুনি, পুরুলিয়া, সন্দেশখালি। তবে কেন এত নৃশংসতা!
মনোবিদ ডাঃ বিদিতা ভট্টাচার্যের কথায়, “এই ধরনের ঘটনার মিডিয়া যে বহুল প্রচার করে সেটা খুব ভাল। সেটার ভাল দিক যেমন আছে ঠিক তেমনি এখান থেকে যারা খারাপ উদাহরণটা নিতে চাইবে, তাঁরা সেই খারাপ দিকটাই নেবে এবং নিচ্ছেও।”
একই সঙ্গে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কেদার রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “এটা কিন্তু ঘটনা, যেভাবে পরিবেশিত করা হয় একটা বিষয়কে, অডিয়ো-ভিস্যুয়াল মাধ্যমে, সেখানে পরিবেশনের ধরণটা সঠিক নয়। কারণ, অডিয়ো-ভিস্যুয়ালের মধ্যে ভিস্যুয়ালটাই বেশি এফেক্ট করে। নইলে মানুষ রেডিয়োর খবরও শুনতে পারত। যেভাবে রঙিন করে দেখানো হয় পুরো বিষয়টাকে, সেই কারণেই এই ধরনেই ঘটনা আরও বেশি করে ঘটছে। একজন ধর্ষিতা, তাঁকে কীভাবে ধর্ষণ করা হচ্ছে, বা সে কীভাবে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে সেসব না দেখিয়ে যদি সোজাসুজি ঘটনাটাকে তুলে ধরা হয়, সেটাই ভাল। টিআরপি ধরে রাখার জন্য মিডিয়া আরও বেশি করে রগরগে করে এই খবরগুলো প্রকাশ করে।”
যদিও বিষয়টি একেবারেই মানতে নারাজ টেলিভিশন মাধ্যমের অন্যতম মুখ, সাংবাদিক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই মন্তব্যের সরাসরি বিরোধিতা করে জানান, “আমি মনে করি এটা একেবারে ভুল কথা। আমি সর্বান্তকরনে এর সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করি। মিডিয়া ঘটনাগুলো দেখানোর ফলে যে অন্যায়টা বহুদিন ধরে মিডিয়ার আলো না পড়ার কারণে সবার অগোচরে বেশ ভালরকমভাবেই চলে আসছিল, এখন মিডিয়ার সৌজন্য বিষয়গুলো সামনে আসছে। দোষীরা শাস্তিও পাচ্ছে। মিডিয়া বরং তার কাজটাই করছে। ঘটোনাগুলোকে গৌরবান্বিতও করছে বা অতিরঞ্জিতও করছে, এমনটা নয়। অন্যদিকে জনমত তৈরি করার ক্ষেত্রে মিডিয়ার বড় ভূমিকা থাকে। নির্ভয়া কান্ডের মতো কান্ড কী আগে হয়নি! গোটা দেশ জুড়ে তারপর যে আলোড়ন পড়ল, পরিবর্তন আনা হল ভারতীয় আইনে, সেগুলো কিছু নয়? মিডিয়া টিআরপি বাড়ানোর জন্য করছে, এগুলো অর্থহীন কথা।”
অন্যদিকে বিশিষ্ট সাংবাদিক সুমন চট্টোপাধ্যায় জানান, “এইধরনের কথা যাঁরা বলছেন, তাঁদের আমি চিনিও না জানিও না। কিন্তু আমি মনে করি এইসব কথার কোনও যুক্তি নেই। এর থেকে জেলো আর কিছু হতে পারে না। প্রথমেই বলি কোনও ধর্ষণ নিয়ে খবর করার জন্য আমাদের কিছু সুস্পষ্ট গাইডলাইন আছে। মিডিয়ার কাজ কোনও ঘটনা ঘটলে সেটা দেখানো। সেটা দেখে কেউ উৎসাহিত হচ্ছে এ কথার থেকে উদ্ভট যুক্তি আর কিছু হতে পারে না। একধরণের সমাজে একধরণের মানুষের বিকৃত মানসিকতার জন্য এইসব ঘটনা ঘটছে। এরা সমাজে আগেও ছিল, এখনও আছে। আগে এদের কথা আমরা জানতে পারতাম না। এখন মিডিয়ার দৌলতে আমরা সেগুলোর ওপর আলোকপাত করতে পারছি। আমার মনে হয় মিডিয়ার খবরের ফলে উল্টোটা হওয়া উচিত। কেউ যদি এমন নৃশংস কাজ করার কথা ভাবতে যায়, তবে কাজটা করার আগে দু’বার ভাববে।”
তবে যেখানে মানুষের মন নিয়ে কাজ করা মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা এমন দাবি করছেন সেখানেই সাংবাদিকদের এহেন বিরুদ্ধাচারন কতটা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। কোথাও কী আরও একবার ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে! প্রশ্ন রইল পাঠকের কাছে।

 

লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Spread the love

Check Also

রাহুলের পাইলট প্রোজেক্ট, মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসে আধিপত্য হারাতে পারেন অধীর

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে রাহুল গান্ধির নতুন উদ্যোগে মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস রাজনীতিতে খর্ব হতে পারে অধীর …

আমি আসছি! নাম না করে শুভেন্দুকে শাসালেন আনিসুর

চ্যানেল হিন্দুস্থান, নিউজ ডেস্ক: নাম না করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারিকে শাসালেন আনিসুর রহমান। একদা …

আগামী সপ্তাহে শতাধিক ট্রেন বাতিল হাওড়া-বর্ধমান শাখায়

চ্যানেল হিন্দুস্থান, নিউজ ডেস্ক: উন্নত পরিষেবা পেতে চলেছে পূর্ব রেল হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখায়, আর তার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *