নিজস্ব প্রতিনিধি:
১৯৯৮-এর ৩১ অক্টোবর খানাকুলের বলপাই দৌলতচকের গ্রামীণ পাঠাগারে বোমা মেরে ভস্মীভূত করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রায় কুড়ি বছর পর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা আগুন ধরিয়ে দিল কালিম্পঙের লাইব্রেরিতে। ওই গ্রন্থাগারের প্রায় সমস্ত পুরনো নথি, বই সবই পুড়ে গেছে। লাইব্রেরির ওপর হামলা, আগুন দেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং লজ্জাজনক ঘটনা। কোনও সভ্য দেশে ভাবতেও পারে না এমন ঘটনা।
প্রাচীনকালের মানুষেরাও ভাবতে পারতেন না বইয়ের অযত্ন। এমনকী বই যাতে চুরি না হয় সেই কারণে বই চেন দিয়ে বাঁধা থাকত। রাজরাজড়ার লাইব্রেরিতে সাধারণের প্রবেশের অনুমতি হয়তো থাকত না, কিন্তু বইয়ের মর্যাদা দিতেন পুরোদস্তুর।
লাইব্রেরিতে আগুন দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি করেন, যাঁরা আগুন দেন। একেই তো আমরা ইতিহাস রাখতে জানি না। তার ওপর ইতিহাস শেষ করে দিচ্ছি আগুন দিয়ে। যাঁরা আগুন দিচ্ছেন তাঁদের সন্তান এবং নিকট আত্মীয়রা তো আসবেন জ্ঞান অর্জনে। কিন্তু লাইব্রেরিটাই যদি না-থাকে তাহলে তাঁরা যাবেন কোথায়!
‘হীরক রাজার দেশে’র স্বৈরাচারী রাজাকেও আমরা দেখেছি, তাঁর নির্দেশে উদয়ন পণ্ডিতের পুঁথিপত্রও পোড়ানো হয়েছিল। সেখানে হীরক রাজার বচন ছিল, “লেখা পড়া করে যে, অনাহারে মরে সে, জানার কোনও শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই, যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে।” তবে কী হীরক রাজার মতো এরাও চাইছেন সবাই অজ্ঞ থাকুক!
সাধারণ মানুষ অবসর বিনোদনের জন্য বই পড়েন, পড়তেও চান। সারা পৃথিবীতে যখন মানুষকে গ্রন্থাগারমুখী করার চেষ্টা চলছে সেই সময় আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। ভারতের অন্য রাজ্যে লাইব্রেরিতে এমন আগুন লাগানোর ঘটনার কথা জানা নেই।
গণতান্ত্রিক দেশে আন্দোলন করার অধিকার সকলেরই রয়েছে। কিন্তু আগুন ধরিয়ে সম্পত্তি নষ্ট করার অধিকার আছে কী! নেই। লাইব্রেরি ব্যবহারের অধিকার আমার, আপনার সকলের। কোনও রাজনৈতিক দল সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আগুন দেওয়া মানে সাধারণ মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপই। মনে রাখা প্রয়োজন গ্রন্থাগার আমার, আপনার, সকলের।
লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন :-