Breaking News
Home / TRENDING / সুরের আকাশে শুকতারা রাহুল দেববর্মন (২৭ জুন ১৯৩৯-৪ জানুয়ারি ১৯৯৪)

সুরের আকাশে শুকতারা রাহুল দেববর্মন (২৭ জুন ১৯৩৯-৪ জানুয়ারি ১৯৯৪)

 

কমলেন্দু সরকার  :

সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। রাহুল-এর থেকেও তাঁর পরিচিতি বেশি পঞ্চম নামে। এই পঞ্চম নামের পিছনে গল্প আছে। ছোটবেলায় উনি যখন কাঁদতেন তখন নাকি কান্নার আওয়াজ পঞ্চমে লাগত। সেই থেকে মজা করে ডাকা হত পঞ্চম নামে। ওই নামই রয়ে গেল শেষপর্যন্ত। তবে রাহুল নিজে বলেছেন, বাবা শচিন দেববর্মন যখন ‘সা’ ধরতেন তখন উনি ‘পা’ গাইতেন। সেইসময় হিন্দি ছবির দাদামণি অশোককুমার নাম দিয়েছিলেন পঞ্চম। সেই থেকেই পরিচিতি পঞ্চম নামে। তবে এই নাম সার্থক হল তখনই, যখন ‘তিসরি মঞ্জিল’ সুপারডুপার হিট হল। এই ছবির গান আসমুদ্রহিমাচল মেতে উঠল তালে তালে। হিন্দি ছবির সঙ্গীত দুনিয়ায় জন্ম নিল এক নতুন তারকা। এটাই ছিল রাহুল দেববর্মনের পঞ্চম ছবি।

রাহুল দেববর্মন সুরকার হিসেবে ছিলেন  জিনিয়াস। তিনি গান নিয়ে বহু পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন। তিনি ভারতীয় সঙ্গীতে ইলেক্ট্রিক গিটার, রক আন্ড রোলের মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। হিন্দি গানের জগতে ব্লুজ এবং লাতিন আমেরিকান সঙ্গীতের প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। তিনি মুম্বইতে থাকলেও এবং হিন্দি ছবিতে কাজ করলেও রাহুল ছিলেন নিপাট বাঙালি। ষাটের দশকের শুরুতেই তাঁর হিন্দি ছবির সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ। ছবির নাম ‘ছোটে নবাব’ (১৯৬১)। ছবিটি ছিল রাহুলের বন্ধু মেহমুদের।

শচিন দেববর্মন পুত্র পঞ্চমকে স্কুলে ভরতি করে দিলেন। তাঁর পড়াশুনোয় মন নেই। গানই তাঁকে টানে। ফেল করলেন ম্যাট্রিক পরীক্ষায়। ঘুরঘুর করতে লাগলেন বাবা শচিন দেববর্মনের পাশে পাশে। বাবাও বুঝলেন ছেলের পড়াশুনো কিছু হবে না। তাকে তালিম দেওয়া শুরু করলেন। রাহুলও পড়াশুনো করে সময় নষ্ট না-করে পুরোপুরি নিবিষ্ট হয়ে গেলেন গানের দুনিয়ায়।

সত্তর দশকে সারা পৃথিবী জুড়ে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। ভারতও তার বাইরে ছিল না। ছাত্র  আন্দোলন, নকশাল আন্দোলনে উত্তাল ছিল দেশ। কিন্তু তারই মধ্যে হিন্দি ছবির গানের সুরে  মাতিয়ে দিয়েছিলেন রাহুল। কলকাতাতেও এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও রাহুল দেববর্মনের সুরারোপিত গানগুলো সুপার হিট হয়েছিল। মুখে মুখে ফিরত তৎকালীন যুবাদের। ষাট দশকের শেষ এবং সত্তর দশকের শুরুতে রাহুলের সুরে হিট ছবির কয়েকটি হল—- পড়োশন (১৯৬৮), প্যার কা মৌসম (১৯৬৯), কাটি পতঙ্গ (১৯৭০), ক্যারাভান (১৯৭১), হরে কৃষ্ণ হরে রাম (১৯৭১), অমর প্রেম (১৯৭২), ইয়াদোঁ কি বরাত (১৯৭৩), অনামিকা (১৯৭৩), আঁধি (১৯৭৫), শোলে (১৯৭৫)। ‘শোলে’র ‘মেহবুবা মেহবুবা’ গানটিতে ছিল মধ্যপ্রাচ্যের বেলি ডান্সের সুর। সম্ভবত এমন সুর আগে হিন্দি গানে পাওয়া যায়নি। যেমন ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’  ‘দম মারো দম’ কিংবা ‘কাঞ্চি রে কাঞ্চি রে’ গানদু’টিতে ছিল অভিনবত্ব। বিশেষ করে, ‘কাঞ্চ রে কাঞ্চি’তে ছিল নেপালি গানের সুর। লোকেশন অনুযায়ী এই গানটির জন্য নাকি রাহুল দেববর্মন ঘুরেছিলেন নেপালের গ্রামে গ্রামে। আর একটি ছবির নাম না করলেই নয়। ছবির নাম ‘ভূত বাংলো’ (১৯৬৫)। মান্না দেকে দিয়ে  গাওয়ালেন ‘আও টুইস্ট করে’ এবং ‘জাগো শোনেওয়ালো’ দু’টি গানের সুরেই ছিল নতুনত্ব। সেইসময় মান্না দেকে দিয়ে এমন ধরনের গান গাওয়াবার সাহস দেখিয়েছিলেন একমাত্র রাহুলই!

‘তিসরি মঞ্জিল’-এরই গান শুনে টিনসেল টাউনের সিনেমাওয়ালারা বুঝেছিলেন রাহুল দেববর্মন একেবারে অন্যধারার সুরকার। শচিনকর্তার ছেলে হিন্দি ছবির গান অন্যমাত্রায় নিয়ে যাবে। মুম্বইয়ের সিনেমাওয়ালাদের ভাবনা যে অমূলক হয়নি তা প্রমাণ করেছিলেন শচিনপুত্র।

১৯৮৯-এ বাইপাস হওয়ার পর রাহুল দেববর্মনের কাজ কমে গিয়েছিল। সেইসময় তিনি কর্মবিহীন হয়ে গিয়েছিলেন। মুম্বইতে শুনেছিলাম, রাহুল নাকি তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন আমি যদি সুযোগ পাই তাহলে আবার মেলোডিতে ভরিয়ে দেব গানে গানে। তিনি কথা রেখেছিলেন ‘১৯৪২ আ লাভ স্টোরি’তে (১৯৯৪)। এই ছবিতে আবার সারা দেশকে মাতাল করে দিয়েছিলেন গানের সুরে। তবে, রাহুল দেববর্মন তাঁর সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই তিনি মারা গিয়েছিলেন। সঙ্গীত দুনিয়ায় পতন ঘটেছিল এক নক্ষত্রের।

(চ্যানেল হিন্দুস্তানের শ্রদ্ধার্ঘ্য)

লাইক, শেয়ার ও মন্তব্য করুন

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *