দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল বিতণ্ডার সময় বিষয়টি চাপা পড়ে গিয়েছিল। ভেসে উঠল তৃণমূলের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ একুশে জুলাইয়ের দোরগোড়ায় এসে। ভেসে উঠল কারণ ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রকাশ্যেই বলে ফেললেন যে মুখ্যমন্ত্রী মুসলিমদের অসম্মান করেছেন। চ্যানেল হিন্দুস্তানের সামনে এদিন ফুরফুরার ‘ডাকাবুকো’ পীরজাদা বেশ কয়েকবার আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন।
কী এমন হল যার জন্যে ত্বহা সিদ্দিকির আবেগ বাধ মানছে না!
রাজ্যপালের ফোনকল নিয়ে যেদিন মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করলেন সেদিনই ঘটনার সুত্রপাত। মুখ্যমন্ত্রী সেদিন সাংবাদিকদের সামনে, ক্যামেরার সামনে বাদুড়িয়া নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, যে কম্যুনিটি ওখানে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে… ইত্যাদি। এই কম্যুনিটি শব্দটি আপত্তিকর ঠেকেছে বহুসংখ্যক সংখ্যালঘু মানুষের কাছে। ত্বহা বলেন, ‘আমি লাগাতার ফোন পেয়েছি সেদিন। মুসলিম ভাইদের ফোন আবার অমুসলিম বুদ্ধিজীবীদের ফোনও পেয়েছি’। কম্যুনিটি বলতে একটি সম্প্রদায়কে বোঝায় আর ঠিক সেখানেই আপত্তি ত্বহা সিদ্দিকির। তাঁর কথায় বাদুড়িয়া কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী কী করে একটা সম্প্রদায়কে দায়ি করলেন তা তাঁর বোধগম্য হয়নি। তিনি বলেন, একটি ঘটনার পাল্টা আর একটি ঘটনা হয়েছে। দুটি ঘটনাই নিন্দনীয়। কয়েকজন লোক, হতে পারে তাঁদের ধর্ম ইসলাম, তাঁরা আক্রমণ করেছেন। আমরা সবাই ঘটনার নিন্দা করেছি। সেদিনই চ্যানেল হিন্দুস্তানের মাধ্যমে সকলকে সংযত থাকার আবেদন জানিয়েছি। তবু কয়েকজনের দোষে, যদি তদন্তে বেরোয় কয়েকজন মুসলিমই এই ঘটনার জন্য দায়ি, তবু কয়েকজনের জন্যে গোটা কম্যুনিটিকে দায়ি করে কী মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কাজ করলেন?’
মোক্ষম প্রশ্ন তুলেছেন ত্বহা। একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, মুসলিমদের অসম্মান করার ফল ভাল হবে না।
ইদের দু’দিন ছুটি দাবি করে না পেয়ে এমনিতেই বিরক্ত ত্বহা। বকরি ইদের জন্য তিনদিন ছুটিরও দাবি ছিল তাঁর, কিন্তু পাওয়া যায়নি।তার ওপর গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া এই ‘কম্যুনিটি’ প্রসঙ্গ। ত্বহা বলেন, ইদে দুদিন ছুটি চেয়ে মুসলিমরা কী কোনও অন্যায় করেছে!
বাদুড়িয়া যখন আবার ছন্দে ফিরছে ঠিক তখনই ত্বহা সিদ্দিকির এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে নতুন উপাদান যোগান দিল বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।