সুমন সেনগুপ্ত:
সামাজিক ইতিহাস অত্যন্ত কঠিন ও জটিল। সহজে বোঝার উপায় নেই। আজকের ক্রান্তিকালে যতই কঠিন হোক সামাজিক ইতিহাসকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যে ইতিহাসকে বর্তমানে সামনে নিয়ে আসা হয়, সেখানে অনেক কিছু আড়ালে থাকে। পণ্ডিতরা চুপ করে থাকেন। মানবত্ত্বের চর্চা এখন অনেকেই করছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই ধর্মের সঠিক অবস্থানকে চিহ্নিত করেন না। ভারতের সামাজিক ইতিহাস সাহেবরা একভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন। ভারতীয় পণ্ডিতরা আরেকভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন। হিন্দু-মুসলমান সংগঠনগুলি আরেকভাবে দেখাবার চেষ্টা করছে। অনেক সময় আঞ্চলিক সামাজিক তথ্য এইসব সামাজিক ইতিহাসের মূল ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। মুহম্মদ আয়ুব হোসেন কিশোর বয়স থেকেই আঞ্চলিক সামাজিক ইতিহাসের খোঁজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তিনি ৬০০ লোকগল্প প্রায় দু’হাজার ছড়া ও গীত সংগ্রহ করেছেন। তার সংগ্রহ করা প্রত্ন সামগ্রী কাটোয়া পুরসভাকে দান করেছেন। কাটোয়া গ্রন্থাগারে ওঁর নামে সংগ্রহশালা রয়েছে। মুহম্মদ আয়ুব হোসেনের কথায়, “বাংলার হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ধারক ও বাহক বাংলার সংস্কৃতির।” তিনি লোকছড়া, বিয়ের গান, লোকগল্প সংগ্রহ করতেন হিন্দু ও মুসলিম মহিলাদের কাছ থেকে। বাংলার সংস্কৃতিকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন হিন্দু ও মুসলিম যৌথ ভাবে। তার বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে রাঢ় বাংলার বিভিন্ন গ্রামে। বর্ধমান জেলার উত্তর পশ্চিমে কৃষ্ণপুর গ্রামে শিব ঠাকুরের গাজন উৎসব হয়। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায় একসঙ্গে এই উৎসব পালন করে। মন্দির বা মসজিদ বলে আলাদা কোনও প্রশ্ন ওঠে না। আগে রাজা বা শাসক অমরত্বের আশায় মন্দির বা মসজিদ তৈরি করতেন।
এই সব কাজের মধ্যে দিয়ে তাঁদের ঐশ্বর্য ও সামাজিক প্রতিপত্তির বিচ্ছুরণ ঘটত। ধর্ম সেখানে বাহুল্য মাত্র। যে কারণে মন্দিরে যে পোড়ামাটির শিল্পকলা দেখা গেছে, মসজিদেও একই ধরনের শিল্পকলা লক্ষ্য করা গেছে। ধর্ম এখানে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার যবগ্রামে ধর্মরাজ ঠাকুরের মন্দির আছে। সেই মন্দিরের মালিক একজন মুসলিম। আবার অন্যভাবে অনেক মসজিদ গড়ে উঠেছে হিন্দু মালিকের জায়গায়। এই সহবাস্থান বর্ধমান জেলার বেশ কিছু স্থানে রয়েছে। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে হিন্দু বা মুসলমান, এভাবে বিভাজন তৈরি করা হয় ওপর থেকে। মুহম্মদ আয়ুব হোসেন গ্রাম বাংলায় ঘুরে ঘুরে গীত-গীতিকা-ছড়া-প্রবাদ নানা ধরনের বিচিত্র লোককথা সংগ্রহ করেছেন। আর এইসব তিনি সংগ্রহ করেছেন মুসলিম মহিলামহল থেকে।
তিনি জানালেন, গ্রাম বাংলার বেশ কিছু মুসলিম মহিলার কণ্ঠে আছে লোক সাহিত্যের নানা উপাদান। হিন্দু মেয়েরা যেমন বিভিন্ন গাজীপীর সম্পর্কে খবর রাখেন তেমনি মুসলিম মেয়েরা শিব-দুর্গা, রাধা-কৃষ্ণর কাহিনী জানে। এই ধারা চলে আসছে।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan