সুমন ভট্টাচার্য্য:
গল্প ১: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরিজিৎ ভট্টাচার্য্য ফেসবুকে একটি পোস্ট করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০০১ সালে ত্রিপুরায় কিভাবে সিপিএমের হাতে আরএসএসের ৪ জন খুন হয়েছিল।
গল্প ২: বিজেপি নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী মুকুল রায় ঘরোয়া আড্ডায় সাংবাদিকদের বলছিলেন, “আরে সবাই বলছে মানিক সরকারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নাকি মাত্র ১৭০০ টাকা থাকে! কিন্তু ভদ্রলোক যে ধুতিটা পরেন তারই তো দাম ২ হাজার টাকার বেশি।”
ত্রিপুরা নির্বাচনে সিপিএমের পরাজয়ের পরে সংবাদপত্রের একাংশে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যে রকম হা-হুতাশ শুরু হয়েছে, তাতে মনে হতে পারে ভারতবর্ষের সবচেয়ে ‘সৎ’ দল নির্বাচনে হেরে গেছে। এবং যাঁরাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সিপিএমের সমালোচনা করছেন, তাঁদের দিকেই বাম সমর্থকরা রে রে করে তেড়ে আসছে।
কিন্তু আমরা যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বামশাসনকে দেখেছি তারা আসলে জানি সিপিএম কি জিনিস। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু বা সিপিএমের অন্য অনেক নেতারা কোনওদিন সিগারেটের প্যাকেট বার করে সিগারেট খেতেন না। তাদের ডানহাত পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকে যেত এবং সেখান থেকে সিগারেট বার করে তাঁরা দেশলাই দিয়ে ধরাতেন। কারণ তাঁরা জানতেন, প্যাকেট বার করলেই লোকে দেখে ফেলবে যে আসলে সিগারেটের প্যাকেটটা ৫৫৫ বা আরও কোনও দামি বিদেশি ব্র্যান্ড! হোলটাইমারের পয়সায় সিপিএমের নেতারা যে কিভাবে এত দামি ব্র্যান্ডেড সিগারেট খেতে পারতেন, সেই রহস্য ৩৪ বছরে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ উদ্ধার করতে পারেননি। চন্দন বসু কত সম্পত্তি করেছিলেন, কিংবা সুভাষ চক্রবর্তী বা অমিতাভ নন্দী কত টাকার মালিক ছিলেন, সেই নিয়েও আজকাল আর আলোচনা হয় না। কিন্তু তাই বলে এটা ভাবা ভুল হবে লোকে এই সব কিছু ভুলে গিয়েছে।
শুধু চন্দন বসুর কথাই বা বলছি কেন, এক মাসও হয়নি সিপিএমের কেরালার রাজ্য সম্পাদকের ছেলেকে দুবাইতে গিয়ে কয়েক কোটি টাকা মিটিয়ে আসতে হয়েছে। কারণ তা না হলে তিনি দুবাইতে ‘প্রতারণা’র মামলায় ফেঁসে যেতেন। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, সর্বহারার মহান দলের রাজ্য সম্পাদকের ছেলে এত টাকা পেলেনই বা কোথা থেকে, আর প্রতারণার মামলায় ফেঁসেছিলেনই বা কেন! যেমন কেউ জানে না, প্রকাশ কারাত এবং বৃন্দা কারাত বছর বছর কাদের টাকায় ইউরোপে বেড়াতে যান। সিপিএমের অভ্যেস হচ্ছে সর্বদা অন্যদের ‘চোর’ এবং নিজেদের ‘সাধু’ প্রমাণ করা। সেই কারণেই তারা ৬০ এর দশকে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনকে ‘চোর’ এবং ডালহৌসির স্টিফেন হাউস কেনার দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। অথচ সেই প্রফুল্ল সেন মারা গিয়েছিলেন কপর্দকশূণ্য অবস্থায়, সহায় সম্বল বলতেও কিছু ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই বলে থাকেন, পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম, বিরোধী রাজনৈতিক দলের ৫০ হাজার মানুষকে খুন করেছে। সংখ্যাটা যে প্রায় একইরকম সেটা প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীও স্বীকার করতেন, আজ মুকুল রায়ও বলেন। সারা ভারতবর্ষে অন্য কোথাও দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষে এতো লোক মারা যায় নি। সেই সিপিএম কে সৎ, আদর্শবাদী দল বলবো কোন যুক্তিতে?
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan