Breaking News
Home / TRENDING / রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তসলিমার ও তারপর

রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তসলিমার ও তারপর

 

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়   :

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সমালোচনা করলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। শুক্রবার কলকাতায় এসে রাষ্ট্রপতি মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেন। গণতন্ত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং পরমত সহিষ্ণুতা একে অপরের পরিপূরক। এই দু’টি ধারণাকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের ভিত্তিভূমি বলে থাকেন রাষ্ট্র বিজ্ঞানীরা। প্রণব মুখোপাধ্যায় দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে বহুবার তাঁর লেখায় ও কথায় ভারতের গণতন্ত্রের সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন।
এদিনও রবীন্দ্রসদনে, ‘শত ফুল বিকশিত ‘ হওয়ার কথাই শুনিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। আর এখানেই ফোঁস করে উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে কার্যত বিতাড়িত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তাঁর বক্তব্য বেশ কয়েক বছর আগে শুধুমাত্র স্বাধীন মত প্রকাশের জন্যই তাঁকে এই গণতন্ত্রগর্বী ভারত ছেড়ে যেতে হয়েছিল। পরে তিনি ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বাড়িয়ে দিল্লিতে বসবাস করলেও, যে কলকাতা থেকে তিনি চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, দেশের সেই সাংস্কৃতিক রাজধানীতে ফিরে আসা তো দুরের কথা, কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও তিনি আসতে পারেননি। অনুমতি মেলেনি।

তাঁর কথায় ‘গোটা দেশজুডে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রটা যে ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে তা দেখে প্রণববাবু আতঙ্কিত’ — শুনে ভাল লাগল। আট ন’ বছর আগে অবশ্য তিনি মানুষের মত প্রকাশের অধিকারে বিশ্বাস করতেন না। আমার মত যেহেতু কিছু লোক পছন্দ করছে না, মিছিল করছে, রাজ্য থেকেও তাড়ানো হচ্ছে আমাকে — আমাকে ভারতবর্ষ ত্যাগ করার আদেশ দিয়েছিলেন তিনি। ফেসবুকে একটি পোস্টে মন্তব্য করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে এই শব্দগুলি ব্যবহার করেছেন তিনি। কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হওয়ার দাগা তাঁর মনে যে এখনও দগদগে, এই শব্দগুলি তা বুঝিয়ে দেয়। কলকাতার রাস্তায় সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, রিজওয়ানুর থেকে শুরু করে সাম্প্রতিকতম নট ইন মাই নেম -এও বুদ্ধিজীবীরা পথে নেমেছেন কিন্তু একজন প্রতিবাদী লেখককে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে মোমবাতি খরচ করেননি কেউ। বিশেষত যাঁরা ইদানীং বাঙালিত্বের জয়গান শুরু করেছেন তাঁরাও বাঙালি এই সাহসিকার থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখেছেন। তসলিমাকে যেদিন কলকাতা ছাড়তে হয়েছিল সেদিন প্রণব মুখোপাধ্যায়দের কংগ্রেস, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের সিপিএম আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের তৃণমূল মৌনব্রত পালন করেছিল! ইদ্রিস আলির ঘাড়ে আলগোছে দোষ চাপিয়ে পুরো রচনাটি নিপাতনে সিদ্ধ করতে কে চায়নি? সোমেন মিত্র শুধু বলে ফেলেছিলেন ইদ্রিস তো বলির পাঁঠা।
কেন এরকম ঘটেছিল সেদিন? কেন দেশের রাষ্ট্রপতিকে সমালোচিত হতে হল প্রবীণ বয়সে? কেন পারলেন না প্রণব-মমতা-বুদ্ধ? কেন পারল না কলকাতা? মহাজাতি সদনের একটি অনুষ্ঠানে, ত্বহা সিদ্দিকি এক প্রকার জোর করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তসলিমার বিরোধী বিবৃতি আদায় করেছিলেন। মমতা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারেননি।
একই বৃন্তে দু’টি কুসুমের দেশে দ্বিতীয় কুসুমের এই প্রকার আবদার রাখতে গেলে গণতন্ত্রের শত ফুল বিকশিত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরমত সহিষ্ণুতার দায় যে দ্বিতীয় কুসুমেরও আছে তা তাঁদের কে বোঝাবে? রাজনীতিকরা তাঁদের উন্নয়ন কতটা করেন তা সংখ্যালঘুরা হাড়ে হাড়ে জানেন। তবু উন্নয়নের স্বাদ তোষনে মিটিয়ে নিতেই তাঁরা সম্ভবত বেশি পছন্দ করেন।
সেইজন্য স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও ফুরফুরা শরিফের অনুষ্ঠানে ত্বহা সিদ্দিকিকে ফেস্টুন টাঙাতে হয়, যেখানে লেখা থাকে, সমাজের পিছিয়ে পড়া ও পিছিয়ে রাখা মুসলিম…। আর তসলিমা কলকাতায় আসতে পারেন না।
মাননীয় প্রণববাবু, এ দেশের গণতন্ত্রে কী শতফুল বিকশিত হয়! নাকি নিরানব্বই?

 

লাইক, শেয়ার ও মন্তব্য করুন

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন 

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *