নীল রায়:
আসানসোলে তৃণমূলের ভোট প্রচারে সুচিত্রা সেন!
অবাস্তব মনে হলেও এমনটাই ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল এলাকার এই লোকসভা কেন্দ্রে। এমনিতে এতদিনে জানা, যে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন অভিনেত্রী মুনমুন সেন। কিন্তু তাঁর প্রচারের সমস্ত ব্যানার, ফ্লেক্স, হোর্ডিঙে প্রয়াত অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের ছবি ব্যবহার করছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রার্থী মুনমুন সেনের সঙ্গে তাঁর মায়ের ছবি দিয়ে কয়েক হাজার ব্যানার তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকরা। তৃণমূলের এক জেলা স্তরের নেতার কথায়, সুচিত্রা সেনের ছবি দেওয়া ব্যানার-পোস্টার ফ্লেক্সগুলি প্রচারের কাজে লাগানো হবে এলাকা জুড়ে। এদিকে প্রবাদপ্রতিম অভিনেত্রীর ছবি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সেখানকার আমজনতার মনেই। অবশ্য আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী মুনমুন সেন ভোট প্রচারে গিয়ে মায়ের কথাই তুলে ধরছেন। অর্থাৎ, বিষয়টি এমন— ভোটে মুনমুন দাঁড়ালেও সুচিত্রা সেনের মরোনোত্তর প্রচারই ভরসা টিএমসির। অতএব, সুচিত্রা সেনের অভিনয় করা বিভিন্ন চরিত্রের মুখ ভোট প্রচারের ব্যানারে স্থান পেয়েছে। সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। আর সবচেয়ে ছোট করে মুনমুনের ফোটো। পোস্টার দেখেই বোঝা যায়, মুনমুনে ভরসা রাখতে পারছে না দল।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে যখন বাঁকুড়া কেন্দ্রে মুনমুন তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন, তখন কিন্তু সদ্য প্রয়াত মা সুচিত্রা সেনের ছবি খুব বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক মহলের মতে, এবারের ভোটে আসানসোল নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত আসানসোলে নিজেদের প্রার্থী ঠিক করতে পারেনি মমতার দল। শেষমেষ বাঁকুড়া থেকে সরিয়ে মুনমুন সেনকে আসানসোলে দাঁড় করিয়ে কোনওরকমের মুখ রক্ষা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কিন্তু, সেই কৌশলও যে কাজে আসবে তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না তৃণমূলের নেতারাই। বাধ্য হয়ে বাঙালির অতিপ্রিয় অভিনেত্রীকে সামনে রেখে পশ্চিম বর্ধমান জেলার এই অংশে ভোট প্রচারে নেমেছে তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বহিরাগত দোলা সেনকে প্রার্থী করেও বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র জয় আটকাতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছিল মলয় ঘটক ও তার গোষ্ঠী অন্তর্ঘাত করেই হারিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীকে। যার জেরে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল মলয়কে। এই ঘটনার পর পশ্চিম বর্ধমানের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কর্মীরা ভাবতে শুরু করেছিল হয়তো এবার কোনও স্থানীয় ব্যক্তিকেই আসানসোলে প্রার্থী করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে মন্ত্রী মলয় ঘটকের পাশাপাশি, শোনা যাচ্ছিল আসানসোলের মেয়র জিতেন তেওয়ারির নামও। কিন্তু, কোনও এক গোষ্ঠীর নেতাকে প্রার্থী করলে অন্য গোষ্ঠীর নেতা অন্তর্ঘাত করতে পারেন, এমন আশঙ্কাও ছিল শীর্ষ নেতৃত্বের মনে। তাই মুনমুন সেনকে প্রার্থী করে গ্ল্যামার দিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়কে হারানোর কথা ভেবেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচারে নেমে প্রার্থী তথা দল হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে আসানসোলের সম্ভাব্য ললাট লিখনের! তাই কালবিলম্ব না করে প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেত্রীর ছবি দিয়েই আসানসোলে শেষরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল।