Breaking News
Home / TRENDING / ঝুলনের শ্রীক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণের অভিসারঝুলনের শ্রীক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণের অভিসার

ঝুলনের শ্রীক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণের অভিসারঝুলনের শ্রীক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণের অভিসার

পলাশ মহারাজ

শ্যামসুন্দর বড় ব্যাকুল হয়েছেন আজ। শ্রাবণের সজল কালো মেঘ তাঁকে ব্যাকুল করেছে, বৃষ্টি ভেজা স্বর্ণচাঁপার সুবাস তাঁকে ব্যাকুল করেছে, নব ফুলভারে অবনত কেলিকদম্বের বন তাঁকে ব্যাকুল করেছে। হায়, এখন আমার রাধারাণী কোথায়? এ পূর্ণিমায়, মন যে পূর্ণলীলার স্বাদ পেতে চায়। চন্দ্রাবলী বিনে সে লীলা যে বৃথা। আমার লীলানন্দের আধার, আমার হ্লাদিনী কোথায়? ও মুরলী…মুরলী গো, ডাকো না তাঁকে, ডাকো! বিলম্ব যে আর সয় না।   তখন মোহন বাঁশি শ্যামসুন্দরের ঠোঁট ছুঁল, সুরের ধারায় ব্রজ-বৃন্দাবনের আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে দিল শ্যামসুন্দরের ব্যাকুলতা। সেই বাঁশির ব্যাকুল ডাকে মিলন আশে আকুল হলেন রাধারানী। আকুল হলেন শ্যাম-সোহাগী গোপিনীরা। আকুল হল শ্রাবণের সজল কালো মেঘ। তারও অভিসারের সাধ হল। শ্রাবণ বেলা ঝরঝর মুখর হল। তারই মাঝে গোপিনীরা—কি শুনি সুধা, মুরলী রব।না সম্বরে অম্বর, ধায় গোপী সব।।
কিন্তু রাধারানী? একদিকে ঘরে শাশুড়ি-ননদীর প্রহরা, অন্যদিকে বাইরে প্রবল বর্ষাধারা। কেমন করে অভিসারে যাবেন তিনি? কোন ছুতোয়, কোন ছলায়? আকুল প্রাণ দেহে যে আর থাকতে চায় না! ঘরে-দোরে শতবার আসা-যাওয়া চলে, উৎকণ্ঠায়, উচাটনে। দু’নয়ন ভেসে যায় জলে। তাঁর আকুলতা দেখে মায়াদেবীর মায়া হল, শাশুড়ি-ননদী পাহারার দায় ভুলে দোরের সুমুখ থেকে খানিকের তরে ঘরে গেল—যেন সেই ক্ষণের অপেক্ষাতেই রাধারানী প্রাণ রেখেছিলেন হাতে। অমনি দোর পেরিয়ে পা রাখলেন পথে। পিছল পথ বেয়ে ছুটে চললেন শ্যাম-অভিসারে। ভিতর-বাইরের বর্ষা এবার একাকার হল। পিছল পথ থামাতে চাইল, পথের কাঁটা বাধ সাধল। রাধারানীর মন যে এখন আর কোন বাধাই মানেনা। এ বাধা তো সংসারের বাধা, পথে বেরোতে গেলে এমন বাধা আসবেই।  তাই তো কতদিন এ-পথে চলার সাধনা করেছেন তিনি—‘কন্টক গাড়ি, কমলসম পদতল, মঞ্জীর চীরহি ঝাঁপি।গাগরি বারি ঢারি করি পিছল, চলতহি অঙ্গুলি চাপি।।
ছুটতে ছুটতে সব বাধা পেরিয়ে সঙ্কেত স্থানে এসেই রাধারানী হঠাৎ থমকে গেলেন। তাঁর বুকে তখন ঘন শ্বাসের ওঠা পড়া। এ কি দেখছেন তিনি? তাঁকে ছাড়াই শ্যামসুন্দর ফুলের দোলনায় একা বিরাজ করছেন! গোপিনীরা গান গাইতে গাইতে তাঁকে দোল দিচ্ছেন, আর শ্যামসুন্দর কিনা মনের আনন্দে সেই সুরে বাঁশি বাজাচ্ছেন! তাঁর কাছে আজ গোপিনীরাই সব হল! তাঁদেরই আগে সেবাসুখের অধিকার দিলেন! খানিক অপেক্ষা করলেন না!—বড় অভিমান হল তাঁর। কী দোষ করেছি শ্যাম তোমার চরণে, কী ভুল করেছি বলো? বুকের ভেতর হু হু করে উঠল, শ্রাবণ ছাপিয়ে বুক ভাসল নয়ন জলে। দেহ অবশ হয়ে এলো। শরীর এলিয়ে পড়ল সিক্ত পথে।   লীলাময় প্রিয়াকে বড় বেদনা দিয়েছেন। যদিও এ-বেদনা লীলারই অঙ্গ, শেষে তাতেও আনন্দ, তাতেও সুখ। দোলনা ছেড়ে এগিয়ে এলেন শ্যামসুন্দর। সিক্ত ভূমিতে বসলেন তাঁর পাশে। বঁধু, মিছে রাগ করো না। ঐ গোপিনীরা তো তোমারই অংশ, অংশভেদে এই ‘তুমি’ই তো আসলে ঐ ‘তারা’। তাদের অন্তরে যে রাধা জেগেছে। তাই তো আমার বাঁশি তোমার নাম ধরে ডাকলেও তারা ছুটে আসে। তাই তো তারা আমাকে পায়। প্রিয়া আমার, চোখ তোল, মুখ পানে চাও।  তবু রাধারানীর অভিমান যেন যায় না, অশ্রু যেন শুকোয় না।   শ্যামসুন্দর অশ্রু মুছিয়ে, রাধারানীকে হৃদয়ে ধারণ করলেন। ওগো, তোমাকে অন্তরে জাগিয়ে আমার শরণে যারা আসে, তারাও আমার প্রণয়ী, তারাও আমার রাধা। তাদের সঙ্গে চলে আমার নিত্য অভিসার। তোমার সঙ্গে লীলা। সকলের মাঝে থেকেও তুমি আমার, আমি তোমার।  শ্যামের বুকে লগ্ন রাধারানীর এবার যেন মান ভঞ্জন হয়। মুখে ফোটে স্মিত হাসি। গোপিনীরা যুগলকে বরণ করে দোলায় এনে বসান। শ্যাম বাঁশিতে সুর তোলেন। চরাচরে ছড়িয়ে দেন আনন্দময় লীলাধ্বনি।

 

লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *