অর্কপ্রভ সরকার :
সেনসেক্স এখন ৩০ হাজারের সীমা ছাড়িয়ে ৪০ হাজারের পথে। নিফটি এখন সর্বকালীন উচ্চতায়। ১০ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে। আপনার কাছে যদি বিনিয়োগ যোগ্য টাকা থেকে থাকে তাহলে সেটা আপনি কোথায় লগ্নি করবেন? সেভিংস অ্যাকাউন্টে এখন সুদের হার এখন তলানিতে। তাই সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলে রাখা এখন কার্যত মুর্খামি। কিন্তু কোথায় বিনিয়োগ করতে হবে তা নিয়ে আপনার কোনও স্পষ্ট ধ্যানধারণা নেই। অনেকেই মনে করেন শেয়ার বাজার আসলে ভয়ংকর অনিশ্চয়তায় ভরা এবং ভীষণ ঝুঁকির ব্যাপার! কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন না যে, শেয়ার বাজারে লগ্নি আপনাকে আর্থিকভাবে অনেক বেশি লাভবান করে তুলতে পারে। যদি আপনি লগ্নি করার আগে শেয়ার বাজারের হালচাল সম্পর্কে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেন। ভাল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে বছরখানেকের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লাভ করতে পারেন। নিফটির মধ্যে থাকা কোম্পানির শেয়ারগুলোকে বিনিয়োগ করলে আপনি নিশ্চিতভাবেই লাভবান হবেন। শেয়ার বাজারে লগ্নী করার প্রাথমিক শর্ত হল, বাজার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া। যে কোম্পানির শেয়ারে আপনি বিনিয়োগ করছেন সেই কোম্পানির বিগত দু-তিন বছরের পারফর্মেন্সকে খতিয়ে দেখতে হবে। আর দরকার একটু ধৈর্য।
আমি আপনাকে কতগুলো কোম্পানির শেয়ার সম্পর্কে জানাতে পারি। সেগুলো হল, ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশন, রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন কোম্পানি (আরইসি), পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন (পিএফসি), রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি (আরআইএল), ইউনাইটেড স্পিরিটস (ইউএসএল)। বিনিয়োগ করার আগে কোম্পানির ফান্ডামেন্টাল, টেকনিক্যাল বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি প্রায় ২০ বছর পরে একটি শেয়ার হতে থাকলে, একটি শেয়ার তারা বোনাস হিসেবে দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। সরকার এখন গ্রামীণ বিদ্যুৎয়নের। তাই দুটি রাষ্ট্রত্ব সংস্থা আরইসি এবং পিএফসি প্রচুর কাজের বরাত পাবে। তাই বিনিয়োগকারীদের নজর এখন দুই কোম্পানির শেয়ারের ওপরে। ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনও শীঘ্রই বোনাস ঘোষণা করতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। শেয়ার বাজারের লগ্নীকে কখনও ফাটকার সঙ্গে তুলনা করবেন না। অতিরিক্ত লোভ করবেন না। ছোট বিনিয়োগকারীদের একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে মিডিয়াম এবং লং টার্মে ভাল কোম্পানির শেয়ারের দাম কখনই আপনার কেনা দামের থেকে নিচে যাবে না। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত শুনে বিনিয়োগ করার বদলে আপনি যদি কোম্পানি সম্পর্কে ভালরকম পড়াশোনা করে লগ্নী করেন, তাহলে তার সুফল পেতে আপনি বাধ্য। বছর দু’য়েকের মধ্যে সেনসেক্স ৪০ হাজারের ঘর ছোঁবে। তাই বাজারে বিনিয়োগ করার এটা এখন আদর্শ সময়। বাজার এখন বুলিশ। বিদেশি ফান্ডগুলোর পাশাপাশি এখন দেশের ফান্ডগুলোও শেয়ার বাজারে টাকা ঢালছে। তাই শেয়ার বাজার এখন পুরোপুরি বিদেশি লগ্নিকারীদের মেজাজ মর্জির ওপর নির্ভরশীল নয়। বাজার খুব সংবেদনশীল। দেশ এবং বিদেশের রাজনৈতিক এবং আর্থিক ব্যবস্থার অভিঘাত তার ওপরে পড়ে। একটা ছোট্ট উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন আপনি ৪২২ টাকা শেয়ার প্রতি দাম দিয়ে ১০০ টি ইন্ডিয়ান অয়েলের শেয়ার কিনেছেন। পরের দিন হঠাৎ খবর হল, যে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন বিদেশের একটি অর্ডার শেষ পর্যন্ত পেল না। সকালে উঠে দেখলেন এক ধাক্কায় কোম্পানির শেয়ার দর ১০ শতাংশ পড়ে গিয়েছে। এতে আপনার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার কাছে দুটি অপশন রয়েছে— এক কয়েক মাস একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা, দুই আপনার হাতে যদি উদ্বৃত্ত টাকা থাকে তাহলে ১০ শতাংশ নিচে পড়ে যাওয়া ইন্ডিয়ান অয়লের শেয়ার আপনি আরও কিছু কিনে নিতে পারেন। তাহলে, আপনার বাইং প্রাইস অনেকটা কমে আসবে। বাজার এখন যে উচ্চতায় রয়েছে, যে কোনও মুহূর্তে সূচকের একটা কারেকশন হতে পারে। এতে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সূচক কখনও একটানা উঠতে পারে না। মাঝে মধ্যেই সূচকের নানারকম উত্থান পতন হয়। সূচকের পতনের সুযোগ আপনাকে কিন্তু নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় সুচকের পতন হলে অনেক ব্লুচিপ কোম্পানির শেয়ার জলের দরে কেনার সুযোগ পেতে পারেন। এই সুযোগ হাতছাড়া না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। বাজারের পরিভাষায় একে বলে, ‘বাই ইন এভরি ডিপ’। ঝুঁকি সব ব্যবসাতেই থাকে। যারা একটু বুদ্ধি করে ঝুঁকি নিতে পারেন, মা লক্ষ্মী তাঁদের প্রতি একটু বেশিই সদয় হন। তাই বলব, বাজারে অবশ্যই বিনিয়োগ করুন। কিন্তু জেনে বুঝে করুন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার আগে বিনিয়গকারীদের উচিৎ শেয়ার বাজার সম্পর্কে কিছু পড়াশোনা করে নেওয়া।
লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন