২১ জুলাইয়ের আগে ঘুম নেই রাজ্যের অনেক নেতার
সুমন ভট্টাচার্য :
এই বঙ্গের রাজনীতিতে কি একজন সুশীল মোদীর দরকার? বা এমন একজন রাজনীতিকের, যিনি দুর্নীতির প্রশ্ন তুলে রোজ বিঁধবেন শাসকদলকে? ফর্দাফাই করে দেবেন বিরোধীদের যাবতীয় ডিফেন্সকে। যাঁরা সুশীল মোদীর নাম জানেন না, তাঁদের জেনে রাখা ভাল, বিহারের এই বিজেপি নেতাই লালুপ্রসাদ যাদবের জীবনে সবচেয়ে বড় ‘কাঁটা’। সেই পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে আজকের যাদব পরিবারের যাবতীয় সম্পত্তিঘটিত ঘটনাকে সামনে নিয়ে এসেছেন বিহারের এই নেতা। নীতীশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রীত্বে যখন এর আগে বিজেপি শরিক হয়েছে, তখন সুশীল মোদী উপমুখ্যমন্ত্রী অবধি হয়েছেন। কিন্তু আমরা সুশীল মোদীক চিনি সেই নব্বইয়ের দশক থেকে, যখন সিএজি রিপোর্ট থেকে খুঁজে বার করে তিনি লালুপ্রসাদ যাদব সরকারের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিকে সামনে আনছিলেন। কলকাতা কিংবা পাটনায় যে কয়েকবার সুশীল মোদীর সঙ্গে দেখা হয়েছে, দেখেছি লালুপ্রসাদ যাদবের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সবসময় তাঁর ঠোঁটস্থ।
কেন হঠাৎ সুশীল মোদীর প্রসঙ্গ টানলাম? ঠিক যেসময় বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র এবং বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের ২৭টি সম্পত্তির খুঁটিনাটি তথ্য সুশীল মোদী মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসছেন, সেইসময়ই কলকাতায় আয়কর দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তার বাড়ি থেকে নগদে কোটি কোটি টাকা সিবিআই উদ্ধার করছে। ঝাড়খণ্ডের ওই আয়কর কর্তা তাপস দত্ত আপাতত সিবিআই হেফাজতে। কিন্তু তাঁর দেওয়া সূত্র ধরে ইতিমধ্যেই সিবিআই জেরা করেছে পূর্বভারতের নামী ব্যবসায়ী এবং ‘মণি’ গ্রুপের কর্ণধার সঞ্জয় ঝুনঝুনওয়ালাকে। তাপস দত্ত এবং সঞ্জয় ঝুনঝুনওয়ালাকে জেরা করে আরও যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা পূর্বভারতের রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সিবিআই সূত্র বলছে, ডিমনিটাইজেশনের সময় কোটি কোটি টাকা তাপস দত্ত এবং সঞ্জয় ঝুনঝুনওয়ালার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ‘কালো’ থেকে ‘সাদা’ করা হয়েছে। এবং এরমধ্যে বেশ কিছু টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশেও পাচার হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সন্দেহ। এই টাকায় সিঙ্গাপুর এবং দুবাইতে বেশ কিছু সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে, এমনটাই সিবিআই এর অভিযোগ।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, এই টাকা কাদের ছিল? কারা এই ‘কালো’ টাকাকে ‘সাদা’ করার চেষ্টা করেছেন? তাপস দত্তকে গ্রেফতার করার পর সিবিআই যে ‘মানি ট্রেইল’ বা টাকার গতিপথকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করেছেন, তা কিন্তু চাঞ্চল্যকর ইঙ্গিত দেয়। এমন কিছু রাজনীতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে, যাঁরা শুধু রাজ্য রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নন, জাতীয় রাজনীতিতেও যথেষ্ট পরিচিত মুখ। সিবিআই বা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কি এদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করবে? বিহারে যেমন সিবিআই এর তদন্ত লালুপ্রসাদ যাদবের পরিবারকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে, তদন্ত এগোলে এখানেও কারা কারা অস্বস্তিতে পড়বে? এই প্রশ্ন নিয়েই আপাতত তোলপাড় কলকাতা এবং দিল্লির রাজনৈতিক মহল। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই নিয়ে প্রচুর তর্কবিতর্ক, আলোচনা চলছে। স্বভাবতই সেই আলোচনাই বিভিন্ন জল্পনাও উঠে আসছে। আর সব জল্পনাতেই তো কিছুটা কল্পনাও মিশে থাকে! তাপস দত্তের পিছনে রাজনীতির কোন কোন কেষ্টবিষ্টুরা আছেন, তাই নিয়ে তুমুল জল্পনা শুরু হয়েছে। দিল্লিতে যাঁরা রাজনীতির কারবারী, তাঁরা অবশ্য মুচকি হেসে বলছেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনটা হয়ে গেলেই অনেক জল্পনার উত্তর পাওয়া যাবে। আর অনেক কিছুই সামনেও চলে আসবে’।