দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
খুশির ইদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য একটি খবর আছে। খবরটি সম্ভবত তাঁর জন্যে খুশির খবর নয়!
কীরকম!
সাম্প্রতিক বিসর্জন -তাজিয়া বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন একাদশীর দিন বিসর্জন হয় না। তাঁর কথায়, “এমন মুর্খ যে জানেও না একাদশীতে বিসর্জন হয় না।” তাঁর বিসর্জন নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্তের যাঁরা বিরোধিতা করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই শ্লেষ যে তাঁদেরই ইঙ্গিত করছে তা পরিস্কার।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সারা দেশে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি প্রভাবশালী অংশও মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। এরই মধ্যে একটি প্রশ্ন গত কয়েকদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটি হল, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী একাদশীতে বিসর্জন কি সত্যিই হিন্দু শাস্ত্রে নিষিদ্ধ নাকি এটি নেহাতই মুখ্যমন্ত্রীর মনগড়া তত্ত্ব?
মুখ্যমন্ত্রী কি শাস্ত্র ঘেঁটে, রীতিমত রিসার্চ করে এই কথা বলেছেন নাকি এটি নিতান্তই কথার কথা?
বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের অধ্যক্ষ স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানানন্দ মহারাজ বলেন, “হিন্দুশাস্ত্রে একাদশীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন না করার কোনও বিধান নেই।” এক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, রামকৃষ্ণ মিশন কখনওই কোনও রাজনৈতিক বিষয়ে মাথা গলায় না। তাঁদের ধর্ম জীবে সেবা। এক্ষেত্রেও স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানানন্দের বক্তব্য কোনওভাবেই রাজনৈতিক নয়। তাঁকে শুধু শাস্ত্রীয় বিধানের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি শুধু ওই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তাঁর উত্তর একান্তভাবেই আকাদেমিক।
কলকাতারই আর এক বিশিষ্ট শাস্ত্রজ্ঞ শ্রী যুগল কিশোর শাস্ত্রীও গলা মিলিয়েছেন স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানানন্দ মহারাজের সঙ্গে। হিন্দু শাস্ত্রে বিশিষ্ট পণ্ডিত যুগল কিশোর শাস্ত্রী প্রতি বছর একডালিয়া এভারগ্রীনের পুজো করেন। সুচিত্রা সেনের শ্রাদ্ধের কাজও তিনিই করেছিলেন। তাঁর কথায়, “দশমীতে ঘট নড়িয়েই বিসর্জন হয়ে যায়। একাদশীতে প্রতিমা বিসর্জনে কোনও শাস্ত্রীয় নিষেধ নেই।”
এমনিতে রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে সুসম্পর্ক যুগল কিশোর শাস্ত্রীর। একডালিয়ার পুজো করার দরুন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের তিনি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। শাস্ত্রীয় বিধান যে একাদশীতে বিসর্জনের পরিপন্থী নয়, সে কথা বললেও সার্বিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বিসর্জন বিলম্বিত করার সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত। তাঁর কথায়, “পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
পরিস্থিতি যাই হোক, এই দুজন হিন্দু শাস্ত্রে পণ্ডিত ব্যক্তির বক্তব্যের পর একটি মোক্ষম প্রশ্ন উঠছে। সেটি হল মুখ্যমন্ত্রী কিসের ওপর ভিত্তি করে, প্রকাশ্যে, হিন্দুশাস্ত্রের বিধি নিষেধ নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন!
লাইক শেয়ার ও মন্তব্য করুন
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan
আরও পড়ুন :-
গো-রক্ষা নিয়ে আদলতের রায় মানেনি সরকার, নবান্ন ঘেরাওয়ের ডাক গো-রক্ষা কমিটির