Breaking News
Home / TRENDING / হিন্দু সংষ্কৃতির ওপর বৌদ্ধিক ধর্ষণ বন্ধ হোক

হিন্দু সংষ্কৃতির ওপর বৌদ্ধিক ধর্ষণ বন্ধ হোক

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়  : 

পশ্চিমবঙ্গে কোনও হিন্দু দেবীর অশ্লীল ছবি ছাপার বিরুদ্ধে কোনও সংগঠিত প্রতিবাদ আগে কোনওদিন হয়েছে কী! সম্ভবত না। অন্তত অন্তর্জালের সিধু জ্যাঠা সবজান্তা গুগলেশ্বর এই বিষয়ে কোনও আলো দিতে পারলেন না। মকবুল ফিদা হুসেনের নগ্ন সরস্বতী একসময় হইচই ফেললেও বাঙালিরা সেই হল্লায় কান দেননি। কারন সরস্বতীর মূর্তিতে নারী শরীরের রহস্য খুঁজে পাওয়ার কবিতা শিক্ষিত বাঙালি আগেই পড়ে নিয়েছে। এমনকি কালী মূর্তির সঙ্গে সঙ্গম করার ইচ্ছার কবিতাও বাংলা কবিতার পাঠকদের অজানা নয়। ছবি, কবিতা বা যে কোনও শিল্প মাধ্যমই কোনও রকম শাসনের ধার ধারবে না, এটাই স্বাভাবিক। সে শাসন রাষ্ট্রীয় হোক বা ধর্মীয়। ঠিক সেই কারনেই অশ্লীল শিল্প বলে কিছু হয় না। হয় শিল্প নয় অশ্লীল। কোনও ছবি বা কবিতা কিংবা সিনেমা শিল্প হয়ে উঠলে তার আর অশ্লীল থাকা হয় না।

আজ, বৃহস্পতিবার, দেবী দুর্গার একটি অর্ধনগ্ন ছবি কোনও এক পুজা সংখ্যার প্রচ্ছদে উঠে আসার প্রতিবাদে রাস্তায় নামছেন বজরং দলের কর্মী-সমর্থকরা। ব্যস্ত চাঁদনী চত্বরে এমন প্রতিবাদ কলকাতার জন্য একেবারে হাতে গরম সন্দেহ নেই।
যে দেবীকে কেন্দ্র করে দু’দিন পরেই কলকাতা আলোয় সাজবে। যাঁর জন্যে দোকানীরা পসরা সাজিয়ে বিকিকিনিতে মজেছে এখনই। যাঁর জন্য রেস্তোরায় নতুন আইটেম, প্রেক্ষাগৃহে নতুন সিনেমা, সেরা পুজো, সেরা সাজ, সেরা পুজোসংখ্যা, সেরা প্রতিমা, সেরা পরিবেশ, সেরা থিম, সেরার সেরা…। আবার বেড়ানো, প্রেম, পালানো, পরকীয়া সবই কয়েকদিন আবর্তিত হবে ওই ত্রিনেত্রা, সিংহবাহিনী, দশভুজাকে কেন্দ্র করে।
উৎসবের এই কেন্দ্রীয় চরিত্রটিকে সাধারণ হিন্দু বাঙালি ‘মা’ বলে সম্বোধন করে। এই দেবীর অর্ধনগ্ন মূর্তি একটি পুজো সংখ্যার প্রচ্ছদ হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে।

 (যে ছবি নিয়ে বিতর্ক )

প্রচ্ছদে এমন ছবির নির্বাচন কেন? এই প্রশ্ন তুলে পথে নামছে বজরং দল। তাদের সহযোগী দলগুলিও থাকবে। বাড়ি থেকে বেরেবার সময় মঙ্গল কামনায় যে বাঙালি ‘দুর্গা দুর্গা’ বলে, সেই বাঙালির সম্ভবত কোনও বক্তব্য নেই। নিজের সন্তানকে দুধে ভাতে রাখতে পারলেই এঁদের মোক্ষলাভ। যদিও হিন্দি বলয়ে যেমন শ্রীরামচন্দ্র নিত্য জীবনযাপনের মধ্যে মিশে আছেন, তেমনই হিন্দু বাঙালির বাড়িতে জড়িয়ে আছেন দুর্গা। মাতৃরুপে, দুর্গতিনাশিনী রুপে।
যাঁদের ঘরে দুর্গা এতটা ঈশ্বরিকভাবে নেই তাঁদের ঘরেও পুজোতে বেড়াতে যাওয়া বা পুজোয় বাড়ি ফেরার মধ্যে আছেন। ছুটির মধ্যে আছেন, আড্ডার মধ্যে আছেন আরও নানাবিধ যাপনের মধ্যে আছেন।
এ হেন দেবী, শিল্পীর তুলিতে করুণ মুখে, মুক্ত বুকে, ফিনফিনে ওড়না আলগোছে জড়িয়ে আবির্ভূত হয়েছেন একটি বাণিজ্যিক পুজো সংখ্যার প্রচ্ছদে।
শিল্পীর ভাবনায় মাতৃস্বরুপার এই বিধ্বস্ত ছবি সম্ভবত অস্বাভাবিক নয়। যে সমাজে ষাটোর্ধ মহিলা, সত্তর বছরের ধর্মযাযিকা ধর্ষিত হন, সেই সমাজে মাতৃরুপের এমন করুণ ছবি শিল্পীর তুলিতে আসবে বইকি!
প্রতিবাদকারীরাও শিল্পীর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলেননি। অন্তত এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু শোনা যায়নি। তাঁরা পথে নামছেন এই ছবি যাঁরা ঘটা করে ছেপেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে।
শিল্প আর শিল্প ব্যবসা যে এক নয় তা সম্ভবত শিক্ষিত, প্রগতিশীল বাঙালি মানবেন। হিন্দু সংষ্কৃতির ভাবাবেগকে আঘাত করতে শিল্পের কারবারীদের দু’বার ভাবতে হয় না কারণ হিন্দু বা হিন্দু বাঙালি বিবিধ বিষয়ে প্রতিবাদ করলেও এই ধরনের কোনও বিষয়ে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করেন। কারণ কোদালকে কোদাল কিংবা ইস্কাপনকে ইস্কাপন বলার চেয়ে নিজেকে একপ্রকার অসার বুদ্ধিজীবীতার মোড়কে ঢাকতে তাঁরা বেশি পছন্দ করেন। তাঁদের এই প্রকার বৌদ্ধিকতা আর আম বাঙালির নিরবতা হিন্দু সংষ্কৃতিকে সুলভ শৌচালয়ে পরিণত করেছে। অবাধে নোংরা করার ছাড়পত্র দিয়েছে হিন্দু সংস্কৃতির উঠোনকে।
১৯৫০ সালে বাংলাদেশে পরপর গণহত্যা হয়েছিল এবং বহু হিন্দুর প্রাণ গেছিল। দুর্গাপুজোর বিজয়ার দিন প্রায় হাজার খানেক বাড়িতে আগুন লাগান হয়েছিল, লুঠ ও ধর্ষন হয়েছিল। হিন্দু সংস্কৃতির সেই ধর্ষন আজও অব্যাহত। ছবিতে, কবিতায় এই সংস্কৃতির বৌদ্ধিক ধর্ষন চলছে।
এতদিনে সেই ধর্ষনের একটি সংগঠিত প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছে বজরং দল।
হিন্দু বাঙালি কী এবার পাশ ফিরে শোবে!

 

 

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *