পার্থসারথি পাণ্ডা :
বাংলার আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে ‘ওঁ ঐ নমো সরস্বত্যৈ নমঃ’ বীজমন্ত্র। হবে নাই বা কেন!দিকে দিকে বাগদেবী সরস্বতীর আবাহন শুরু হয়ে গেছে যে। এই তো আর মাত্র একটা দিন পেরলেই মাঘের শুক্লা পঞ্চমী তিথির মাহেন্দ্রক্ষণ শুরু হবে। সেই ক্ষণেই তো ঘরে ঘরে দেবীর আরাধনা হবে। ছোট শিশুদের হাতেখড়ি হবে। ছোটবড় সকলে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন। তারপর দেবীর কাছে বিদ্যা চেয়ে আকুতি জানাবেন। কারণ, দেবী বিদ্যাদায়িনী।
বেদের যুগে প্রথম দিকে দেবী কিন্তু বিদ্যাদায়িনী ছিলেন না, ছিলেন জলদায়িনী। দেবীর তখন নদীরূপ। তবে নামটি সেই একই, ‘সরস্বতী’। ‘সরস্বতী’ কথার অর্থ ছিল ‘জলবতী’। অবশ্য দেবীর এই নদীরূপের পেছনেও একটি কাহিনী আছে।
বৈকুণ্ঠ অধিপতি বিষ্ণু তাঁর তিন পত্নী গঙ্গা, লক্ষ্মী আর সরস্বতী-কে নিয়ে একবার অবসর যাপন করছিলেন। গঙ্গা পদসেবা করছিলেন, লক্ষ্মী ময়ূরপুচ্ছ দিয়ে বাতাস করছিলেন আর সরস্বতী তাঁর সুললিত কন্ঠে বিষ্ণুর মনোরঞ্জন করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তাল গেল কেটে। মায়াদেবীর মায়ায় সরস্বতীর মনে হল, বিষ্ণু কেবলমাত্র গঙ্গার সেবায় প্রসন্ন হয়ে, শুধুমাত্র তাঁর দিকেই প্রেমপূর্ণ নয়নে তাকাচ্ছেন। তখন সরস্বতীর খুব অভিমান হল, রাগ হল। রাগের বশে তিনি বিষ্ণুকে বেশ দু’কথা শুনিয়ে বসলেন। এতে আবার গঙ্গা রেগে গিয়ে সরস্বতীকে নদী হয়ে যাবার অভিশাপ দিলেন। সরস্বতীও সেই অভিশাপ গঙ্গাকে ফিরিয়ে দিলেন। তখন বৈকুণ্ঠ ছেড়ে গঙ্গা আর সরস্বতী দু’জন দুটি নদী হয়ে পৃথিবীতে প্রবাহিত হতে শুরু করলেন।
ধীরে ধীরে সরস্বতী নদী তীরের তপোবনে গড়ে উঠল ঋষিদের আশ্রম। সরস্বতী তাঁর পবিত্র জল দান করে তপোবনের বাগান, ক্ষেত উর্বর করে তুললেন। ঋষিরা তাঁকে তখন ‘জলের দেবী’ অভিধা দিলেন। তারপর দলে দলে শিষ্যেরা বিদ্যালাভের জন্য ঋষিদের আশ্রমে ভিড় করতে লাগল। সারাদিন সেখানে উচ্চারিত হতে লাগল বেদমন্ত্র। একদিন ঋষিদের মনে হল, এই নদী সরস্বতীই পরোক্ষে ধর্মাচরণে, বিদ্যালাভে সহায়তা করছে। তাই ইনিই আসলে বিদ্যাদেবী। তাছাড়া ‘সরস্বতী’ শব্দের আর একটি অর্থ তো ‘জ্যোতির্ময়ী’। এই দেবী তাঁর ‘জ্যোতি’ দিয়ে মানুষের মনের অজ্ঞানতার অন্ধকার কাটিয়ে বিদ্যার আলো দান করেন। তাই এঁর আরাধনা করা উচিত।
বেদ-ব্রাহ্মণের ঋষিরা নবমী ও পূর্ণিমা তিথিতে এই দেবীর আরাধনার বিধান দিয়েছিলেন। তারপর পুরাণের পথ পেরিয়ে মহাভারতের যুগে এসে সে বিধানের ব্যতিক্রম ঘটল। ব্যতিক্রম ঘটালেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। তিনিই প্রথম শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজোর সূচনা করলেন। সেই শুরু। তারপর সে-ঐতিহ্যের ধারা ভক্তির স্রোত বেয়ে আজও সমানে বয়ে চলেছে।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan
আরও পড়ুনঃ-
https://channelhindustan.com/2018/01/walk-for-sagar-tirtha/