Breaking News
Home / TRENDING / কবি শঙ্খ ঘোষঃ প্রতিবাদের একক কন্ঠে বহুর স্বর

কবি শঙ্খ ঘোষঃ প্রতিবাদের একক কন্ঠে বহুর স্বর

পার্থসারথি পাণ্ডা :

কবিতায় ‘নিপাত যাও—ধ্বংস হও—ভাঙো’(‘ধ্বংস করো ধ্বজা’ কবিতা)-উচ্চারণে প্রতিবাদের আগুন জ্বেলে দিতে কোন রাজনৈতিক পতাকার নীচে দাঁড়াতে কখনই প্রবৃত্তি হয়নি কবি শঙ্খ ঘোষের। তিনি শুধু মানবতার কাছে দায়বদ্ধ, আর কারও কাছে নন। আপোষহীন এই কবি জানেন—
‘সত্য থেকে সঙ্ঘ হতে পারে
সঙ্ঘ তবু পাবে না সত্যকে।’ (‘সত্য’-কবিতা)।
তাছাড়া চোখের সামনে তো দেখেইছেন, কেমন করে ‘এক দশকে সঙ্ঘ ভেঙে যায়।’ (‘সঙ্ঘ’ কবিতা)। তাই প্রতিবাদের পথে তিনি প্রয়োজনে একা হেঁটেছেন। তাঁর এই পথটি অবশ্য সমকালীন অনেক তরুণ কবিকেই আকৃষ্ট করেছে। তাই এই পথে তিনি একা হলেও যেন একা নন, তাঁর পথের রেখায় অনেকেই আছেন—
‘সঙ্ঘে আমি একলা থাকি বটে
একার পথে সঙ্ঘ টের পাই।’ (‘সত্য’-কবিতা)।

 

তথাকথিত ‘পরিবর্তনের’ কালে অনেকেই যখন আর একটা চল্লিশ বা আর একটা সত্তর আসছে ভেবে উল্লসিত হয়ে ময়দানে নেমে পড়েছিলেন। শুরু হয়েছিল ‘আমরা’ ‘ওরা’-র টানাটানি। তখনও কবি ঋষির মতো স্থির হয়ে ‘তারা’-দের জন্য কলম ধরেছেন। বুঝেছেন, উল্লাস থামলেই শুরু হবে পাওনাগণ্ডার হিসেব! সেটাই একজন শিল্পীর সঙ্কটের সময়, তখন—
‘ঈষৎ মাত্র গিলে নিলে
যা সওয়াবেন তাই সয়।’ (‘পাগল’-কবিতা)।

 

এই ‘সয়ে’ নেওয়াটাকেই তিনি সইতে পারেন না। তাই অবক্ষয়ে ঘুমিয়ে পড়া প্রতিবাদী সত্তাকে খুঁচিয়ে তোলার জন্য আমাদের নিত্যদিনের সয়ে নেওয়া, আপাতসাধারণ লবজও তাঁর কলমে শানিত সায়ক হয়ে ওঠে। বাস থেকে ভিড় ঠেলে নামতে গিয়ে রোজই তো শুনি, ‘ছোট হয়ে নামুন, সরু হয়ে নামুন’, ‘রাস্তা কেউ দেবে না, রাস্তা করে নিন’ কিম্বা ‘ও দাদা, একটু নড়ে চড়ে দাঁড়ান, একটু চাপ দিন’। আমরা শুনি, গা করিনা। কিন্তু এগুলোও তাঁর কলমে কবিতা হয়ে ওঠে, গভীরতা নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। ঐ আপাতনিরীহ কথাগুলোর সূত্র ধরেই তিনি যখন আমাদের প্রতিনিধি হয়ে বলেন ‘আরো কত ছোটো হব ঈশ্বর/ ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ালে!/আমি কি নিত্য আমারও সমান/ সদরে, বাজারে, আড়ালে?’ কিম্বা ‘এক রাস্তা দুই রাস্তা তিন রাস্তা কেউ রাস্তা/ রাস্তা কেউ দেবে না, রাস্তা করে নিন।/তিন রাস্তা চার রাস্তা সব রাস্তা সমান/ রাস্তা করে নিন।’ কিম্বা ‘একটু মশাই নড়ুন/ ভিতর থেকে নড়ুন/ চাপ সৃষ্টি করুন…’; তখন তার অভিঘাতে আমাদের সেই ঘুমন্ত সত্তা জেগে উঠে প্রতিবাদী হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চায়।

আমাদের অলস চৈতন্যের মাটিতে কবি যেন এভাবেই বারে বারে বহুবছর ধরে বুনে যান প্রতিবাদের বীজ। শুনিয়ে যান জেগে ওঠার গান, ঘুরে দাঁড়ানোর গান। কবির জন্মদিনে এটাই আমাদের প্রার্থনা।

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

https://www.youtube.com/channelhindustan

https://www.facebook.com/channelhindustan

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *