Breaking News
Home / TRENDING / নীলকন্ঠ ঋত্বিক

নীলকন্ঠ ঋত্বিক

পার্থসারথি পাণ্ডা :

ছবিজীবনে আর্থিক দিক থেকে ঋত্বিক ঘটক কোনদিনই স্বস্তি পাননি। ১৯৫১ সাল নাগাদ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’ গল্প নিয়ে ‘অরূপকথা’ নামে একটি ছবির চিত্রনাট্য লেখেন ঋত্বিক। ছবির শুটিংও শুরু হল। কুড়ি দিনের শুটিং শেষে জানা গেল, ক্যামেরার সমস্যার জন্য ছবির ফিল্ম এক্সপোজই হয়নি। সুতরাং, প্রোডিউসারের অনেক লোকসান হল, ছবি বন্ধ হয়ে গেল। ছবিটা শেষ হলে এটাই হত ঋত্বিকের প্রথম ছবি। কিন্তু হল না। অদ্ভূতভাবে এমন অঘটন তাঁর জীবনে বারেবারেই ঘটেছে।

পরের ছবি ‘নাগরিক’ (১৯৫২-৫৩)। বেশ কয়েকজন বন্ধুর সাহায্য ও নিজের সহায়সম্বল লগ্নি করে ঋত্বিক শেষ করলেন ‘নাগরিক’ ছবি। সম্পাদনা হল, সেন্সর হয়ে গেল। তবু ডিস্ট্রিবিউটারের বদমাইশিতে ছবিটা ঋত্বিকের জীবৎকালে হলের মুখ দেখল না। সর্বস্ব হারিয়ে খুব দমে গেলেন ঋত্বিক। কিন্তু সব হারালেও হার মানার লোক তিনি ছিলেন না। ছবির প্রতি অসীম ভালোবাসা আর মানুষের কাছে নিজের বক্তব্য পৌঁছে দেবার আকাঙ্ক্ষা আবার তাঁকে ছবি করতে উৎসাহিত করল। কোনরকমে প্রোডিউসার জোগাড় করে ‘অযান্ত্রিক’(১৯৫৭-৫৮), ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’(১৯৫৯) ছবি দুটো করলেন বটে, কিন্তু যেমন ভেবেছিলেন, ছবিগুলো তেমন চলল না। তারপর আবার একটা অসম্পূর্ণ ছবি! ১৯৫৯ সালে সাহিত্যিক শঙ্করের প্রথম উপন্যাস ‘কত অজানারে’ নিয়ে ছবি করার কথা ভাবলেন। কুড়ি দিনের শুটিং হল। তারপর ছবি আর এগোল না। কারণ, প্রোডিউসার রণে ভঙ্গ দিলেন।

পরের বছর ‘মেঘে ঢাকা তারা’(১৯৬০) তাঁকে একটু স্বস্তি দিল। বেশ ভালো চলল ছবিটি। হাতে কিছু টাকা এলো, জীবনে সামান্য স্বস্তি এলো। কিন্তু পরের ছবি ‘কোমল গান্ধার’(১৯৬১) একেবারেই চলল না। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ তাঁকে যেটুকু স্বস্তি আর স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছিল সব চলে গেল। তারপর ‘সুবর্ণরেখা’(১৯৬২)-র মুক্তির ক্ষেত্রেও আর্থিক দিক দিয়ে কম ঝঞ্ঝাট হয়নি। এরকম অবস্থায় ‘বগলার বঙ্গদর্শন’(১৯৬৪) ও ‘রঙের গোলাম’ (১৯৬৮)-নামের ছবি দুটি শুরু করেও শেষ হল না। আর্থিক কারণেই শুটিং বন্ধ হয়ে গেল। শেষ দুটো সম্পূর্ণ ছবি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’(১৯৭৩)ও ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’(১৯৭৪)। এ-দুটোতেও ব্যবসায়িক সফলতা এলো না।

একদা এরকম অবস্থায়, রাজ কাপুর সহায়সম্বল বাজি রেখে ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ করে ব্যবসায়িক সফলতার মুখ দেখে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিলেন। ঋত্বিকের ক্ষেত্রে এর উল্টোটাই ঘটেছে। তবু নিজের বিশ্বাসের ভিত্তি থেকে একচুল সরে দাঁড়াননি। ঋত্বিক মানুষকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন, ভাবাতে চেয়েছিলেন। জীবনের গরল পান করে নীলকন্ঠ হয়ে বলেছিলেন, ‘ভাবো ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো।’ মানুষকে জাগাতে গিয়ে, ভাবাতে গিয়ে তাই মার্কসের সঙ্গে বাংলার পুরাণপ্রতিমা মিলিয়ে দিতে তাঁর বাধেনি। চলচ্চিত্র ও ভাবাদর্শের ক্ষেত্রে আপোষহীন এই মানুষটি প্রয়াত হয়েছিলেন, ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি।

বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

https://www.youtube.com/channelhindustan

https://www.facebook.com/channelhindustan

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *