Breaking News
Home / TRENDING / রথযাত্রা

রথযাত্রা

 

কমলেন্দু সরকার    :

কে যে কবে শুরু করেছিলেন রথ মানেই পাপড়ভাজা আর আড়াই প্যাঁচের জিলিপি, গবেষণা করে জানা গেছে কিনা জানি না। তবে বৃষ্টি হওয়া প্যাচপেচে রাস্তায় দু’বার হোঁচট খেয়ে একবার পাপড়ে একবার জিলিপিতে কামড় দিতে বেশ লাগে। তারপর ভেঁপু বাজিয়ে কাউকে কাউকে চমকে দেওয়া, কিংবা চলন্ত রথে একটু দড়ি ধরে টান মারা, একেবারে রথের মেলার বহুকালের ঐতিহ্য। শহর মফসসল সব জায়গারই একই ছবি।
কলকাতার রথযাত্রার ঐতিহ্যও সেই কোন কালের! জানা যায়, কলকাতা গড়ে ওঠার আগেই নাকি রথযাত্রার শুরু। তখন গোবিন্দপুর, সুতানুটি আর কলকাতা নামে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম ছিল। এমনকী কলকাতায় পা দেওয়া প্রথম ইংরেজ জোব চার্নক নেমেও ছিলেন রথতলার ঘাটে। এ প্রসঙ্গে হরিসাধন মুখোপাধ্যায় তাঁর কলিকাতা সেকালের ও একালের বইয়ে লিখেছিলেন, ‘আজকাল যে স্থানকে লোকে ‘হাটখোলা’ বলে, সেই অঞ্চলেই জোব চার্নক কলিকাতার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। কেহ কেহ অনুমান করেন, বেনিয়াটোলা ঘাটের সমীপবর্তী রথতলা ঘাটই জোব চার্নকের কলিকাতার প্রাণ-প্রতিষ্ঠার প্রথম স্থান।’
তাহলে অনুমান করা যেতেই পারে সেই কাল থেকেই বাঙালি রথযাত্রায়য় শামিল হতেন। রথ না থাকলে রথতলা ঘাটই তো থাকে না। হুতোম বলছেন তাঁর নকশায়, ‘রথের দিন চিৎপুর রোড লোকারণ্য হয়ে উঠল, ছোট ছোট ছেলেরা বার্নিস করা জুতো ও সেপাইপেড়ে ঢাকাই ধুতি পরে, কোমরে রুমাল বেঁধে, চুল ফিরিয়ে, চাকর চাকরাণীদের হাত ধরে, পয়নালার ওপর পোদ্দারের দোকানে ও বাজারের বারান্ডায় রথ দেখতে দাঁড়িয়েচে।
মাটির জগন্নাথ, কাঁঠাল, তালপাতার ভেঁপু, পাখা ও সোলার পাখি বেধড়ক বিক্রি হচ্ছে।’
বোঝাই যাচ্ছে কলকাতায় রথযাত্রার ধুম কেমন ছিল। শোনা যায়, অনেক বাবুই নাকি রথের দিন নৌবিহারে বেরোতেন লালবাতি এলাকাবাসীদের সঙ্গে।
রথযাত্রা একটি পুরনো উৎসব। মুঘল আমলেও রাজস্থানে জয়পুরের রাজা রামসিংহ নাকি রথযাত্রার আয়োজন করতেন বলে শোনা যায়। ওডিশার ময়ূরভঞ্জের রাজাও করতেন। তবে পুরীর রথযাত্রা হল বিখ্যাত। জানা যায়, পুরীর গঙ্গবংশীয় রাজা ১১৫০-এ জগন্নাথ দেবের মন্দিরের কাজ সমাপ্ত করে আয়োজন করেছিলেন রথযাত্রার। সেই থেকে এখনও চলে মহা সমারোহে পুরীর রথযাত্রা।
রথযাত্রা উৎসব নিয়ে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনিও। অক্রুকে রথ দিয়ে কংস বললেন কৃষ্ণ-বলরাম আনতে। কংসের উদ্দেশ্য ওঁদের হত্যা করা। কংসের পাঠানো রথে উঠলেন কৃষ্ণ-বলরাম। পাশাপাশি তাঁরা যাত্রা করলেন মথুরার উদ্দেশে। কংসের উদ্দেশ্য সফল হল না। কৃষ্ণ বধ করলেন কংসকে। কৃষ্ণ-বলরাম লড়াইয়ে জিতে ফিরলেন রথে চেপে। তাঁদের এই দিনটি পালনের জন্য শুরু হল রথযাত্রা উৎসব।
একটি মিষ্টি কাহিনিও রয়েছে। একদিন বলরামের মায়ের কাছে কৃষ্ণের স্ত্রীরা শুনতে চাইলেন, গোপিনীসঙ্গে কৃষ্ণের রাসলীলা। বলরাম মাতা রোহিণী গল্প শুরু করার আগেভাগে সুভদ্রাকে চলে যেতে বললেন সেখান থেকে। দাদার প্রেমলীলা ভগিনীর শোনা ঠিক হবে না। কিন্তু কৃষ্ণের লীলা বর্ণনা করতে করতে মোহিত হয়ে উঠেছিলেন তিনি এবং অন্যেরাও। গুটি গুটি পায়ে চলে এসেছেন সুভদ্রা। চলে এসেছেন কৃষ্ণ-বলরাম। এমন সময় নারদ এসে দেখেন তিন ভাইবোন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। ভাল লাগল নারদের। তাই তিনি প্রার্থনা করলেন এইভাবেই তিন ভাইবোন যেন অনন্তকাল ভক্তদের দর্শন দেয়। নারদের প্রার্থনা বিফল হয়নি। তাই আজও পুরীধামে তো বটেই সর্বত্রই তিনজন একইসঙ্গে পূজিত হন।

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *