রন্তিদেব সেনগুপ্ত।
গতকাল শ্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর একটি লেখায় লিখেছিলাম — আশঙ্কা হয় বাংলার রাজনীতিতে এই ঘরানার নেতারা চলে গেলে কিছু জোকার আর ডোয়ার্ফরাই বিচরণ করবে। সে আশঙ্কা যে ভুল ছিল না চব্বিশ ঘণ্টার ভিতরে তা প্রমাণ করেছেন বিজেপি নেত্রী এবং সাংসদ শ্রীমতী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। রাজনীতিতে যতই মতপার্থক্য থাকুক সকলেই স্বীকার করবেন, ব্যক্তি হিসেবে সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন এক অনন্য চরিত্রের মানুষ। রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠা এই মানুষটি অতি বড় সমালোচককেও আপন করে নিতে জানতেন ( তার প্রমাণ ব্যক্তিগতভাবে আমি পেয়েছি )। ঠিক এ কারণেই তার প্রয়াণের পর দলমত নির্বিশেষে সকলেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এমনকি অহরহ লাগামছাড়া কথা বলার জন্য যিনি সর্বদা সমালোচিত হন, সেই দিলীপ ঘোষও সুব্রত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে কোনো কটু বাক্য ব্যবহার করেননি।
কিন্তু রূপা? সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর এই বিজেপি নেত্রী সামাজিক মাধ্যমে অত্যন্ত কুরুচিকর এবং অশ্লীল একটি পোস্ট করেছেন। রূপা লিখেছেন ” তিস্তাকে নিয়েছ বস। কিছু তো ফেরত নেবে মা কালী। ” বিজেপির প্রাক্তন কাউন্সিলার তিস্তা বিশ্বাসের অকাল মৃত্যু নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। কিন্তু সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর সে প্রসঙ্গ টেনে এনে এধরনের মন্তব্য করা কি শোভনীয়? এতেও থামেননি রূপা। লিখেছেন, ” পুজো ঝকমক করা আর টাকা তোলা ছাড়া যার কোনো অবদান নেই, তার জন্য আমার কোনো সম্মান ( রেসপেক্ট ) নেই।” বাংলার রাজনীতিতে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কী অবদান সেটা রাজনীতি অভিজ্ঞ মানুষ মাত্রেই জানেন। বরং প্রশ্ন উঠতে পারে বাংলার রাজনীতিতে, আরও ছোট করে বললে বিজেপির রাজনীতিতে রূপার কী অবদান? প্রায় ছ ‘ বছর ধরে রাজ্যসভার সাংসদ রয়েছেন রূপা। এই ছ’ বছরে কদিন রাজ্যসভায় এই রাজ্যের প্রসঙ্গ নিয়ে কটা উল্লেখযোগ্য বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে তাকে? বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল ভ্যানিটি ভ্যান নিয়ে যিনি ” পদযাত্রায় ” বেরিয়েছিলেন —- তার রাজনীতিতে কী অবদান সে নিয়ে অনেকেই সন্দিগ্ধ। তথাগত রায়, মোহিত রায় বা স্বরূপপ্রসাদ ঘোষের মতো রাজ্যসভার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে কোন জাদুমন্ত্রে তাকে রাজ্যসভার সদস্য করা হয়েছিল সে নিয়েও অনেক রাজনৈতিক কিসসা শোনা যায়। প্রসঙ্গত এটাও জানাই, জরুরি অবস্থার সময়ে সিদ্ধার্থশংকর রায়ের রক্তচক্ষু এড়িয়ে সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এই সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ইডি সিবিআই সিআইডি বা পুলিশ লেলিয়ে দেওয়ার যে রাজনীতিটিএখন চালু হয়েছে, তার বরাবর বিরোধী ছিলেন এই প্রয়াত নেতা। রূপা তার বামপন্থী বন্ধুদের কাছ থেকে, চাইলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছ থেকে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।
এটা স্বীকার করি একটা সময় আমার ধারণা হয়েছিল রূপা একজন পরিশীলিত এবং সুভদ্র রাজনীতিক। সে ভাবনা যে ভুল ছিল তা রূপাই প্রমাণ করেছেন। পরিশীলিত তো তিনি ননই, উপরন্তু কোনো সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তিনি যে আস্থাবান নন, তা তার এই ধরনের বক্তব্যেই প্রমাণিত। রূপার এই ধরনের মন্তব্যে কিছু অন্ধ এবং হিতাহিত জ্ঞানশূন্য ভক্ত খুশি হতে পারে, রাজ্যের সুস্থ চিন্তার মানুষজন মোটেই খুশি হবেন না।রূপার ওই মন্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে তিনি সমালোচিত হয়েছেন —- সেটাই তার প্রমাণ। বাংলার রাজনীতিতে যে লিলিপুট যুগ সমাসন্ন এসব ঘটনা তারই অশনি সংকেত।