কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশেষ কলাম:
ভারতবর্ষে যে কেউ নিজের নিজের রুচি ও বিশ্বাসমতো ধর্মপালন করতে পারেন।রাহুল গান্ধীও তার ব্যতিক্রম নন। এটা পাকিস্তান কিংবা মধ্যপ্রাচ্য নয় যে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অন্তর্ভুক্ত না হলে শীর্ষপদে ওঠা তো দূর, প্রাণ নিয়ে টিকে থাকাই মুশকিল।
প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে, পাকিস্তান থেকে, অসংখ্য উদ্বাস্তু শুধু বাঁচবার আশায় ভারতের মাটিতে পা রাখে। কেউ তাদের ফিরিয়ে দেয় না। আর এর মূল নিহিত আছে আমাদের, ‘ বসুধৈব কুটুম্বকম’ মানসিকতায়। এই মানসিকতা বজায় রাখতে গিয়ে ভারতকে কম মূল্য চোকাতে হয় না প্রতিদিন। পাকিস্তান থেকে আসা আজমল কাসভরা মুম্বাইয়ের রাস্তায় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দুশোর কাছে মানুষকে মেরে ফেলে আর তারপরও প্রতিদিন ভারতের ডাক্তাররা প্রাণ বাজি রেখে অসংখ্য পাকিস্তানি পেশেন্টকে জীবনে ফিরিয়ে আনেন, ভারতের মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ চিকিৎসা দরকার এমন পাকিস্তানি শিশুদের যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে ভারতে আসার ভিসার ব্যবস্থা করে দেন।
তার জন্য কোনও কৃতজ্ঞতা পাকিস্তানের কাছ থেকে দাবি করা হচ্ছে না। কিন্তু স্বাভাবিক মানবিকতাটুকুও কি আশা করা যাবে না?
রাহুল গান্ধী যে এসব জানেন না, তা নয়। তার আরও বেশি করে জানা উচিৎ কারণ তার ঠাকুরদা নিজেই তো পার্সি সম্প্রদায়ের একজন মানুষ ছিলেন; হ্যা, সেই সম্প্রদায়ের, যারা নিজেদের ধর্ম ও পরম্পরা রক্ষা করতে ইরান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন ভারতে এবং দুধে চিনির মতো গুলে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
মুম্বাই শহরে সর্বাধিক জমি যাদের হাতে আছে, পার্সি ট্রাস্ট তাদের অন্যতম। এর থেকেই স্পষ্ট, কতটা সম্মান নিয়ে এই উদ্বাস্তুরা ভারতে থাকতে পারেন। হায়, সব উদ্বাস্তুদের কপাল যদি এরকম হতো! কাশ্মীর থেকে তাড়া খেয়ে দিল্লির রাস্তায় পড়ে থাকা পণ্ডিত কিংবা নাসিরনগর অথবা রংপুর থেকে সর্বস্বান্ত হয়ে শিয়ালদা স্টেশনে এসে কাতরানো রিফিউজিরা এসবের কিছুই পায়নি।
তাই বলে পার্সিদের উপর রাগ করার কোনো কারণ নেই। তারা নিজেদের যোগ্যতায় ভারতে নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ভারতের দুই দিকপাল রাজনীতিবিদের কন্যা পার্সি বিয়ে করেছিলেন। এবার মহম্মদ আলি জিন্নাহর মেয়ে দিনা ওয়াদিয়া পার্সি হিসেবেই রয়ে গেলেও, জওহরলাল নেহেরুর মেয়েকে কেন ভায়া ‘গান্ধীজী’ হিন্দু হতে হল, কে জানে!
বম্বে ডাইয়িং’ এর মালিকদের কেউ কোনো অসুবিধেয় ফেলেনি ভারত এমনই দেশ যেখানে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেওয়া লোকটির একমাত্র মেয়ে-জামাই’এর বিরুদ্ধেও অপ্রত্যক্ষ লড়াই করেনি কেউ।
তাহলে নেহেরু কেন জিন্নার পন্থাই অবলম্বন করতে পারলেন না? কেন এই লোক দেখানো ‘ঘর ওয়াপসি’ করাতে হল তাকে?
ভোটের জন্য জিন্না যে আপোষ করেননি, নেহরুকে তাই করতে হলো? গদির ব্যাপারটা আগে থেকেই এত বুঝতেন?
আর নিজের মেয়ের ধর্ম পরিচয় ‘হিন্দু’ রাখার জন্য যাকে এত কসরত করতে হয়, তিনিই আবার সবচেয়ে বড় ধর্মনিরপেক্ষ?
সত্য সেলুকাস!
তবু তারপরও, রাহুল গান্ধী তার ঠাকুর্দার মতো পার্সি হোন বা মায়ের মতো ক্যাথলিক, ভারতে তার রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই।
কিন্তু কংগ্রেস তাকে ‘পৈতেধারী ব্রাহ্মণ’ বলে দাবি করছে কেন?
হিন্দু হতে গেলে ব্রাহ্মণ হওয়ার কোনো দরকার নেই। জওহরলাল নেহেরুর মতো তথাকথিত ব্রাহ্মণরা হিন্দুদের সর্বনাশই করেছে।
নাকি ‘ব্রাহ্মণ্যবাদের’ চূড়ান্ত ধারক-বাহক কংগ্রেস পার্টি, একজন ওবিসি প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেজে-গোবরে হয়ে শেষমেষ কলামুলোর আশায় অঅগ্রদাণী সেজেছে?
তা এই পার্সি এবং ক্যাথলিক রক্তের মিক্সচার বামুনঠাকুরের গায়ত্রী মন্ত্র কি ইতালীয় ভাষায় লেখা?
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan