Breaking News
Home / TRENDING / উপলক্ষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সিপিএম আর তৃণমূলকে মেলাচ্ছেন মোদী

উপলক্ষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সিপিএম আর তৃণমূলকে মেলাচ্ছেন মোদী

পার্লামেন্ট স্ট্রিট

 

সুমন ভট্টাচার্য  :

যে কোনও যুদ্ধে বা লড়াইতে অপ্রত্যাশিত কোনও সিদ্ধান্ত সব সময় অ্যাডভান্টেজ দেয়। যা প্রতিপক্ষ প্রত্যাশা করেনি, তাই যদি কেউ করে দেখাতে পারে, তাহলে সবসময় একটা চমক থাকে। এবং সেটাই কোনও পক্ষকে লড়াইতে এগিয়ে রাখে। অনেকেই মনে করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল, ‘নরম্যান্ডি ল্যান্ডিং’। কারণ জার্মানদের একেবারে হতচকিত করে দিয়েছিল নরম্যান্ডিতে আচমকাই বিপক্ষের সেনাদের পৌঁছে যাওয়া। এই ধরণের ‘আউট অব দ্য বক্স’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই একজন সেনাপতির জাত চেনায়।

এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এখনও অবধি গেরুয়া শিবিরের সবচেয়ে বড় সাফল্য এটাই যে তারা তাদের হাতের তাসটি কাউকে দেখায়নি। অর্থাৎ এই যে নির্বাচনে ‘আননোন ফ্যাক্টর’টি তারা তৈরি করে রাখতে পেরেছেন, সেটাই শাসকদলের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। বিরোধী জোট এখনও অবধি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে তাদের যাবতীয় তাস টেবিলে ফেলে দিয়েছেন। গান্ধীজীর দৌহিত্র গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী থেকে সংযুক্ত জনতা দলের শরদ যাদব, প্রায় সব নাম নিয়েই আলোচনা হয়ে গিয়েছে। ১৭টি বিরোধী দল মিলে একবার সোনিয়া গান্ধীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছে, একবার তারা চেন্নাইতে উড়ে গেছে ডিএমকে নেতা করুণানিধির জন্মদিন পালন করতে। কিন্তু যেহেতু বিজেপি এখনও তাদের ‘ট্রাম্পকার্ড’টি দেখায়নি, সেহেতু বিরোধীদের যাবতীয় উদ্যোগ আলোচনাতেই থেমে আছে। বরং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলে দিয়েছেন, সরকার সর্বসম্মত প্রার্থী দিতে রাজি হয় কিনা, তারজন্য বিরোধীদের অপেক্ষা করা উচিত। বিজেপি শিবির যেহেতু মনে করে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাদের প্রার্থী অন্তত ৫৪ শতাংশ ভোট পাবেই, সেহেতু তারাও চুপচাপ এগোতে চাইছে। এবং এই অপ্রত্যাশিত কিছু করে দেওয়ার চমকে আবার বাজিমাত করে দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এইসব টানাপোড়েনের মধ্যে সবচেয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে বামপন্থীরা। সোনিয়া গান্ধীর বাড়িতে তো তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে বসে মধ্যাহ্নভোজ খেতে দেখাই গিয়েছিল সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে। ১০নং জনপথে যদিও বা সীতারাম এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে সাতজনের ব্যবধান ছিল, চেন্নাইতে কিন্তু সীতারাম ইয়েচুরি এবং রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ওব্রায়েন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হাত তুলে নিজেদের ঐক্য এবং সম্প্রীতির কথা জানান দিয়েছেন। অতএব পশ্চিমবঙ্গে যতই সিপিএম তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করুক, জাতীয় রাজনীতিতে কিন্তু আপাতত তারা দুজনেই গভীর বন্ধু। এবং এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম আলাদা ভাবছে, এবং কেরালার সিপিএম আলাদা ভাবছে, মিডিয়ার এইসব প্রচারকে বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। কারণ সোনিয়া গান্ধীর বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ খেতে ‘কংগ্রেস বন্ধু’ বলে পরিচিত সীতারাম ইয়েচুরি একা যাননি, তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন লোকসভায় সিপিএমের দলনেতা, যিনি আসলে কেরালায় দলের হেভিওয়েট সাংসদ। অর্থাৎ প্রকাশ কারাত যতই কংগ্রেস বিরোধিতার বা জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের কথা এখনও বলে চলুন, সিপিএমের এখন শুধু কংগ্রেস নয়, তৃণমূলেরও হাত না ধরে উপায় নেই। এটাই রাজনীতির বাস্তব।

বিজেপি বিরোধিতার কারণেই হোক বা বৃহৎ গণতান্ত্রিক জোট গড়ে তোলার লক্ষ্য, এই মুহুর্তে আসলে তৃণমূল এবং সিপিএম হাত ধরাধরি করেই হাঁটছে। পাশের রাজ্য কেরল হলেও, চেন্নাইতে দাঁড়িয়েও বাম নেতারা তাঁদের কংগ্রেস বিরোধী অবস্থান ভুলে গিয়ে আপাতত রাহুল গান্ধীকেই জাপটে ধরেছে।

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *