দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় :
রাইসিনা হিলে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি ঠাঁই পাবে। কলকাতায় এসে এমনই জানিয়ে গেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। নিয়ম বা প্রথা বলছে রাইসিনা হিলে কোন ছবি শোভা পাবে তা ঠিক একান্তভাবেই রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভর করে। তিনি যদি চান মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি রাইসিনা হিলে থাকবে, তাহলে থাকবে। তাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর অবশ্য তাঁর ইচ্ছার আর কোনও মূল্য থাকবে না। তখন রাইসিনা হিল আবার নতুন রাষ্ট্রপতির ইচ্ছাধীন হবে। তবে সাধারণত এমনটা হয় না। একজন রাষ্ট্রপতি কোনও কিছু রেখে গেলে সাধারণ সৌজন্য বা পূর্বতনকে সম্মান প্রদর্শনের কারণেই তা সযত্নে রেখে দেন নতুন রাষ্ট্রপতিও। রাইসিনা হলে এটাই দস্তুর।
সুতরাং ধরে নেওয়াই যায় যে কোবিন্দ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা ছবি রাষ্ট্রপতি ভবনের দেওয়ালে টাঙ্গালে তা আর খোলা হবে না। অন্তত খুলে ফেলাটা সৌজন্য নয়।
তবে গোল বেঁধেছে অন্য জায়গায়। মমতার ছবির রাইসিনার দেওয়াল প্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে কলকাতার শিল্পী মহলে।
তবে এক্ষেত্রে যাঁরা মমতার আঁকা ছবির রাষ্ট্রপতি ভবনে স্থান পাওয়ার বিরোধিতা করছেন, তাঁরা মমতা-বিরোধী, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। তাঁদের প্রশ্ন রাষ্ট্রপতির কাছে। তাঁরা জানতে চান, দেশের যে বাড়িতে যামিনী রায় থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, পরবর্তীতে গণেশ পাইন, বিকাশ ভট্টাচার্য, ফিদা হুসেনের মত কালজয়ী ছবির স্রষ্টাদের ছবি রয়েছে সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রাখা কতটা যুক্তিসঙ্গত!
এই প্রজন্মের শিল্পী শুভময় বসুর কথায়,”রাষ্ট্রপতি ভবন তো কোনও ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির নিজস্ব নয়। তাছাড়া তাঁর পদমর্যাদা সাংবিধানিক ভাবে সর্বোচ্চ হলেও, রবীন্দ্রনাথ বা যামিনী রায় কিংবা ফিদা হুসেনের সম্মানের সঙ্গে তো সেই মর্যাদা তুলনীয় নয়।”
বিশিষ্ট চিত্রকর সমীর আইচ এই খবরে অনেকটা হতভম্ব। তাঁর কথায়, “এই ব্যাপারে আমার কোনও বক্তব্য নেই আর এটাই আমার বক্তব্য।” আপনি কি ক্ষুব্ধ? শিল্পীর উত্তর, “ক্ষোভ নয়, আক্ষেপ!”
শিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায় অবশ্য অন্য সুর। তাঁর কথায়, “এখানে ছবি নয়, মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি, আর এটাই বড় কথা। এর একটা গুরুত্ব আছে।” একই সঙ্গে সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য,” ছবিটি আমি দেখেছি। ছবিটি ভাল হয়েছে।”
রাইসিনা হিলে অন্যান্য অনেককিছুর মত ছবি-বিশেষজ্ঞদেরও কমিটি আছে। তাঁরা ঠিক করতে পারেন কোন ছবি কোথায় থাকবে। তবে রাষ্ট্রপতি ভবনের হাল-হকিকত যাঁরা জানেন, তাঁদের মতে, কার্যত সেখানে কর্তার ইচ্ছাতেই কর্ম হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি যেখানে রাখতে বলবেন সেখানেই থাকবে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি।
রসিকজনেরা বলছেন, মনীষীদের তালিকায় ইতিমধ্যেই নাম উঠে গেছে মুখ্যমন্ত্রীর। রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দের সঙ্গে মমতাও এখন মনীষী তালিকায়। এবার তাঁর ছবিও জিনিয়াসদের কালজয়ী কাজের সঙ্গে শোভা পাবে!
কবীর সুমন অনেকদিন আগেই লিখে গেছেন, ‘আবেগের কোনও অভিধান নেই!’ আর রাষ্ট্রপতির ‘আবেগ’ যদি যদি মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবিকে রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির পাশে রাখে তাহলে কী আর করার আছে! এই ভাষাতেই নিজেদের হতাশা, আক্ষেপ আর ক্ষোভ ব্যক্ত করছেন তরুন শিল্পীরা।
বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিয়ো পেতে চ্যানেল হিন্দুস্তানের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
https://www.youtube.com/channelhindustan
https://www.facebook.com/channelhindustan