দেবক বন্দ্যোপাধ্যায় ।
প্রশান্ত কিশোর বলেছেন যে ভারতীয় রাজনীতি থেকে সহজে যাওয়ার নয় BJP। আরো কয়েক যুগ জাতীয় রাজনীতি তে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখবে বাজপেয়ী-আদবানি মোদি-শাহের দল।
মূলত রাহুল গাঁধীর একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়াতে গোয়ার মিউজিয়াম হলে আজ, বৃহস্পতিবার এই মন্তব্য করেছেন পিকে।
রাহুল বলেছিলেন রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির শেষ হয়ে যাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাঁর এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশান্ত বলেছেন, রাহুল একটি ভ্রান্তির মধ্যে আছেন।
প্রত্যাশা মতোই দেশের প্রায় সবকটি সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে, ভারতীয় রাজনীতির ক্ষমতার কেন্দ্রে দীর্ঘ দিন থেকে যাবে বিজেপি।
এ হেন শিরোনামে খুব স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহিত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি মহল। দুশো পারের ঘোষণা করে যাঁরা ক্ষয়িঞ্চু সত্তরের ঘরে আটকে গেছেন, সেই একে একে বিধায়ক হারানো রাজ্য-বিজেপি এখন অক্সিজেন নিতে চাইছে পিকের মুখঃনিঃসৃত এই বাণী থেকে।
প্রশ্ন হল, পিকে যা বলেছেন, তার মধ্যে রাজ্য বিজেপির আশান্বিত হওয়ার মত কিছু আছে কি?
পিকে বলেছেন, দীর্ঘদিন দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকবে বিজেপি। যাঁরা এখনই ভাবছেন পিকের এই মন্তব্য মমতার ২৪-এর লক্ষ্যে জল ঢেলে দিল, তাঁরা খেয়াল করে দেখতে পারেন, পিকে কিন্তু বলেন নি দীর্ঘদিন কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকবে বিজেপি। দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা আর কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা যে এক বিষয় নয়, তা বুঝতে বিশেষ বেগ পাবার কথা নয়। পিকে তাঁর বক্তব্যে নির্দিষ্ট করে বলেও দিয়েছেন, বিজেপি জিতুক বা হারুক তারা কয়েক যুগ ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকবে। যেমন স্বাধীনতার পর প্রথম ৪০ বছর ছিল কংগ্রেস।
পিকে পরিসংখ্যানের কারবারী। পরিসংখ্যান দিয়েই বুঝিয়েছেন তাঁর বক্তব্য। তাঁর মতে দেশের মোট ভোটের ৩০% যারা নিশ্চিত করতে পারে তারা একদিন হঠাৎ সকাল বেলা উবে যাবে এটা ভাবা অবাস্তব।
রাহুল যে একটি অবাস্তব ধারণার ওপর দাঁড়িয়ে ২৪-এর লোকসভার ভোটের দিকে তাকিয়ে আছেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন পিকে।
উল্টে মমতা বা তৃণমূল (TMC) বিজেপিকে কেন্দ্রে গদিচ্যুত করতে যে একটি বাস্তবোচিত ও সুপরিকল্পিত বিজ্ঞান নির্ভর পথে এগোচ্ছে, সেটাও বুঝিয়েছেন মমতা-অভিষেকের উপদেষ্টা।
তাঁর পরিকল্পনা টি হল এই রকম: মূল লড়াই টা এক তৃতীয়াংশ বনাম দুই তৃতীয়াংশ। এক তৃতীয়াংশ বিজেপিকে ভোট দিচ্ছে বা বিজেপিকে ক্ষমতায় দেখতে চাইছে। বাকি দুই তৃতীয়াংশ ভোট প্রায় ১৫ টা রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে। কংগ্রেস তার পুরনো গরিমা ধরে রাখতে পারেনি বলেই দেশের ৬৫% ভোট বিভিন্ন দলের মধ্যে ভাগ হয়ে রয়েছে।
আরো একটি কথা পিকে বলেছেন। সম্ভবত রাহুলের উদ্দেশেই। তিনি বলেছেন, মোদি কে পরাস্ত করতে গেলে তাঁর শক্তি কোথায় লুকোনো সেটা জানা দরকার। বোঝা দরকার, কী কারণে পেট্রোল ডিজেলের এত মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও মোদির বিরুদ্ধে তেমন কোনও জনরোষ চোখে পড়ে না!
ফলতঃ প্রশান্ত কিশোরের “বিজেপি থেকে যাবে” বক্তব্যে রাজ্য বিজেপির আহ্লাদিত হবার কোনও কারন নেই। বরং তাঁর বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিজেপির জন্য চিন্তার কারণ থাকলেও থাকতে পারে।
কারণ, এ রাজ্যে সদ্য জয়লাভের পর গোয়ায় নির্বাচন লড়তে গিয়ে হাতের তাস দেখিয়ে খেলছেন তৃণমূলের উপদেষ্টা প্রশান্ত কিশোর।