Breaking News
Home / TRENDING / শুধুমাত্র শুদ্ধিকরন আর বাংলাদেশ নয়, মমতার যে কথায় কান দিল না মেইনস্ট্রিম মিডিয়া

শুধুমাত্র শুদ্ধিকরন আর বাংলাদেশ নয়, মমতার যে কথায় কান দিল না মেইনস্ট্রিম মিডিয়া

“ভর্সা যেন না পায় কোনও দাঙ্গামুখো হতচ্ছাড়া,
সবাই মিলে বেঁচে থাকার ভর্সা তাদের করুক তাড়া’
কবীর সুমন

দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়

একুশে জুলাই মমতা বন্দোপাধ্যায় যা যা বললেন, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় খবর কোনটা? তাঁর কোন কথাটা খবরের মাথা? এই প্রশ্নগুলো একান্ত ভাবেই খবরের আপিসের ভেতরকার গল্প। কে কোন কথাটি তুলে নিয়ে শিরোনাম করবেন বা মাথায় বসাবেন এটা একেবারেই তাদের নিজস্ব ব্যাপার। রবিবার, একুশে জুলাইয়ের সভার পর দেখলাম বিবিধ টিভি চ্যানেলে খবর হিসেবে মান্যতা পেয়েছে দুটি বিষয়। এক, দলের শুদ্ধিকরন; দুই, বাংলাদেশের আক্রান্তদের আশ্রয় দান। পরেরদিন, অর্থাৎ আজ, সোমবারের খবরের কাগজেও দেখা গেল এই দুটি বিষয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়ারই কথা। বাংলাদেশের নাগরিকদের আবার উদ্বাস্তুর লাইনে দাঁড়াতে হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট না হলেও তৃণমূলে জয়ন্তদের মাথা তোলা যে কোনও দলের পক্ষেই মাথাব্যথার কারন। যদিও প্রতি বছর প্রায় নিয়ম করে দিদি সদোপদেশ দেন কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। শরীরে ক্ষতিকর মেদের মতো এইসব জয়ন্তরা রয়েই যায়। এইসব মেদ দলের শরীর থেকে কবে কীভাবে ঝরবে সেটাও এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।

তবে এইসবের চেয়ে আরও একটি বিপজ্জনক ও প্রয়োজনীয় বিষয় এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে উঠে এসেছে। তা হলো ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মাথা তুলতে হবে।’ মমতা এদিন বলেছেন, সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে তাঁর দল আপোষ করবে না। তিনি বলেছেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মাথা তুলতে হবে। লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে খারাপ ফল করার পর বিজেপি শুভেন্দুর মুখ দিয়ে যে অতি সাম্প্রদায়িক কথা বলিয়েছে, সেই কথাকে ছাব্বিশের নির্বাচনের আগে তাদের রণকৌশল বলে ধরে নেওয়াই যায়। যদিও বিজেপির অনেকেই বিষয়টিকে শুভেন্দুর ব্যক্তিগত (শুভেন্দু নিজেও) অভিমত বলে চালাতে চাইছেন, তবে মোদির ‘মন কি বাত’ এর ওপর শুভেন্দু ব্যক্তিগত অভিমত দিয়ে পার পেয়ে যাবেন, বিষয়টা এতটাও সহজ হবার কথা নয়! লোকসভা নির্বাচন ও বিধানসভার উপনির্বাচনে, বিজেপির ফলাফল দেখলে বোঝা যায়, ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে ও ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে যে হিন্দু ভোট বিজেপি নিজের দিকে টেনেছিল, তার অনেকটাই এবার হাতছাড়া হয়েছে। মতুয়া ভোটও মুখ ফিরিয়েছে। এমতাবস্থায় ‘কর্ম’ ছেড়ে ‘ধর্ম’ দিয়েই ছাব্বিশের ভোটে শেষ চেষ্টা করতে চাইছে মোদি-শাহের বিজেপি। ২০১৭ সাল থেকে অমিত শাহ বলে আসছেন তিনি নাকি তৃণমূলকে উৎপাটিত করে ফেলে দেবেন! (উখাড়কে ফেক দুঙ্গা।) উৎপাটন তো হয়ইনি বরং রাজ্যে প্রাসঙ্গিকতা হারাতে বসেছে বিজেপি। এবারের ভোটে একাধিবার মোদি স্বয়ং মিটিং মিছিল করলেও, তিনি জয় এনে দিতে পারেননি। রাজ্যের মুসলিম ভোটাররা বিজেপিকে ভোট দেবার কথা ভাবতেই পারেন না। হিন্দুদের মধ্যে যাঁরা হিন্দু বটে কিন্তু মুসলিম বিদ্বেষী নন, তাঁরাও বিজেপিকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না। বিজেপির ভোটার বলতে মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু আর সেইসব মানুষ যাঁরা তীব্র তৃণমূল বিরোধী, কিন্তু কংগ্রেস-সিপিএম যেহেতু তৃণমূল বিরোধিতায় প্রাসঙ্গিক নয়, তাই বিজেপিকে ভোট দেন!

উনিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে মুকুল রায় মুসলিম সমাজকে বাদ দিয়ে ভোট কৌশল রচনার বিরোধী ছিলেন। তাঁর কথায়, ১০০ নম্বরের পরীক্ষা সেখানে ৩০ নম্বর বাদ দিয়ে পরীক্ষায় বসলে চলে? যদিও এই তত্ত্ব মুকুল প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। ২০২১ এর নির্বাচনে ১৫০ এর বেশি আসনে হিন্দু ভোট ফ্যাক্টর, এই অঙ্কে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ফলাফল সবার জানা। ছাব্বিশে হিন্দুত্বের লাইনে আরও একধাপ এগোতে চাইছে বিজেপি। যার ফলশ্রুতি শুভেন্দুর এ হেন বচন। ভোট দেননি তাই আপনারা বাদ! রাজনীতিতে এর চেয়ে বেশি অগণতান্ত্রিক কথা আর কিছু হতে পারে! মজার কথা এই, এ হেন শুভেন্দুই আবার রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন! বিষয়টা শুধুমাত্র বিজেপির আভ্যন্তরীণ বিষয় হলে হয়তো মুখ্যমন্ত্রীকেও মাথা ঘামাতে হতো না। কিন্তু এই রাজনীতি যে বাংলার সামাজিক চরিত্রকে আঘাত করবে, দলীয় স্বার্থ বা কারও ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থ বাংলার সাংস্কৃতিক পরিবেশ, সম্প্রীতির বাতাবরন নষ্ট করবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী ববি হাকিমও কয়েকদিন আগে অহিন্দুরা দুর্ভাগা বলে মন্তব্য করে দল ও সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলে ছিলেন। মহারাষ্ট্রে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে এই বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। একুশের মঞ্চ থেকে মমতা ববিকে দিয়ে বলিয়ে নিয়েছেন, হিন্দু মুসলিম শিখ ঈসাই… সকলে ভাই ভাই ইত্যাদি।
শেষ পর্যন্ত শুভেন্দুকে সামনে রেখে বিজেপি এমন একটা খেলা খেললে ভোটে সুবিধা করতে পারবে কিনা সময় বলবে। তবে রামপ্রসাদ থেকে রামকৃষ্ণের বাংলায়, রবীন্দ্রনাথ-নরেন্দ্রনাথের বাংলায় এ খেলা ‘ন্যাস্টি গেম’ হিসেবেই পরিগণিত হবে। এই ন্যাস্টি গেমে বিপদ লুকিয়ে থাকে তা কারও অজানা নয়। আর এই বিপদের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচাতেই ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মাথা তুলতে হবে।’

Spread the love

Check Also

চোরেদের মন্ত্রীসভা… কেন বলেছিলেন বাঙালিয়ানার প্রতীক

ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস : আজ বাংলার এবং বাঙালির রাজনীতির এক মহিরুহ চলে গেলেন। শ্রী বুদ্ধদেব …

আদবানি-সখ্যে সংকোচহীন ছিলেন বুদ্ধ

জয়ন্ত ঘোষাল : লালকৃষ্ণ আদবানির বাড়িতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যাহ্ন ভোজে আসবেন। বাঙালি অতিথির আপ্যায়নে আদবানি-জায়া …

নির্মলার কোনও অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা নেই

সুমন ভট্টাচার্য এবারের বাজেটটা না গরিবের না মধ্যবিত্তের না ব্যবসায়ীদের কাউকে খুশি করতে পারলো। দেখে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *