দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়
উফ্! শুভেন্দুর বক্তৃতা শুনে সেই যে গায়ে কাঁটা দিয়েছে সেই কাঁটা আর যায় না! গতকাল মানে বুধবার থেকে নিজের মধ্যে একটা সজারু সজারু ভাব এসেছে! সে যাই হোক শুভেন্দুর বুধবারের বক্তব্য থেকে জানা গেল অনেক কিছু। প্রথমেই জানা গেল, দলের বড় সাংগঠনিক নেতা আলোচনার জন্য শুভেন্দুকে ৪৫ মিনিট সময় দিয়েছিলেন। আবার দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দলের প্রাক্তন সভাপতিও ওই একই কারনে তাঁকে ওই ৪৫ মিনিট সময় দিয়েছেন। যেটা জানা গেল না তা হলো, ৪৫ কেন? কেন এক ঘন্টা নয়, কেন নয় আধ ঘন্টা? মাঝামাঝি ৪৫ মিনিট কেন? এই রকম একটা আনতাবড়ি প্রশ্ন শুনে বিজেপির কেউ কেউ রসিকতা করে বলছেন, ওনার সময় এখন বড় কাঁটাতে বাঁধা। বড় কাঁটা বলতে তাঁরা কি দিল্লির বড় নেতাদের বলছেন? তা অবশ্য স্পষ্ট নয়!
শুভেন্দুর কথা থেকে আরও জানা গেল, তাঁর আঙুল থেকে ভোটের কালির দাগ এখনও যায়নি। তবে জানা যায়নি, হাত ধোবার জন্য কোন সাবান ব্যবহার করেন শুভেন্দু!
শুভেন্দু বলেছেন, সংগঠনের দায়িত্ব তাঁর হাতে ছিল না। থাকলে কী করতেন শুভেন্দু? একুশ থেকে তিনি ও তাঁর দল চেষ্টা করে যাচ্ছে শুধুমাত্র হিন্দু ভোট দিয়ে বাজিমাত করতে। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। একুশেও শুভেন্দু ও একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পণ্ডিত অধ্যাপক (সম্ভবত শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ ও তাঁর উপদেষ্টা) হিসেব করে ছিলেন ১৫০ এর কিছু বেশি আসনে হিন্দু ভোটেই কামাল করা যায়, এবং তাই দিয়েই তাঁরা ক্ষমতায় চলে আসবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। একুশের পরেও খুব চড়া সুরে ‘সনাতন সনাতন’ করে গিয়েছেন শুভেন্দু। এতটাই বাড়াবাড়ি করেছেন যে দিলীপ ঘোষের মতো হিন্দু নেতাও শুভেন্দুর ‘পারফরম্যান্সে’ অবাক হয়েছেন। সবুজ প্রধান, বছর দুয়েক আগেও যিনি মেদিনীপুরের বিজেপি নেতা (এখন তৃণমূলে), তিনি বলতেন, হিন্দুদের মিছিল আটকাতে মুসলিমদের জন্য বিরিয়ানির চড়ুইভাতি করতেন শুভেন্দু!
সে যাই হোক বাংলার মাটিতে হিন্দু ভোট এখনও সেই ভাবে একত্রিত করা গেল না যাতে শুভেন্দুর সনাতনী কপালে জয়তিলক অঙ্কিত হয়! তবে হাল ছাড়েন নি শুভেন্দু। বুধবারও বলেছেন, হিন্দু ভোট সংহত করার কাজ তিনি ‘কনটিনিউ’ করে যাবেন। এই কাজ করতে শুভেন্দু এতটাই মরিয়া যে দলের ঘোষিত অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান দিয়ে বসলেন তিনি। হিন্দিতে বললেন, সব কা সাথ সবকা বিকাশ বনধ করো! মোদির কাছে আবেদন জানালেন নাকি? দিলীপ-মুকুলের আমলের ১৮ আসন থেকে নেমে ১২ টায় পৌঁছে এখন কি দোষ চাপাবার জন্য ঘাড় খুঁজছেন তিনি? ব্যক্তিগত আলাপে এই প্রশ্ন অনেক নেতাই তুলছেন। অন্যথায় গোটা ভোট প্রক্রিয়ায় চুপ করে থেকে এখন ‘জেহাদীরা ডোট দিতে দেয়নি’ মার্কা অভিযোগ ঠারেঠোরে করে কাদের কী বোঝাতে চাইছেন শুভেন্দু? এই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
শোনা যায় তৃণমূলে যাঁরা কোনও বড় নেতার সাগরেদ ছিল (চামচা লিখলাম না) সেই রকম দু-একটা খুচরো কে সরকারি টাকায় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁরা ছাড়া বিজেপির কোনও সিরিয়াস নেতা শুভেন্দুর এই দলের লাইনের বাইরে গিয়ে অতি-সাম্প্রদায়িক বক্তব্য সমর্থন করেছেন বলে শোনা যায়নি।
শুভেন্দু এখন যতোই বলুন তিনি সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন না, গোটা বিজেপি জানে তৃণমূলকে হারাতে শুভেন্দুর ওপরেই ভরসা করেছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রার্থী নির্বাচনেও তাঁর কথা অগ্রাধিকার পেয়েছিল বলেই খবর।
তাহলে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে আবার হিন্দু-মুসলিম উস্কানি দিচ্ছেন শুভেন্দু? এই প্রশ্ন উঠছে সমাজের বিভিন্ন স্তরে। বিজেপির স্পষ্ট অবস্থান, সবার সঙ্গে থেকে সবার উন্নয়ন। এখানে ধর্মের কোনও স্থান নেই। বিজেপি সম্পর্কে হাজারো সমালোচনা থাকতেই পারে, কিন্তু এই ঘোষিত অবস্থানে কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ নেই। একটি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হয়ে কোন যাদুতে এবং কোন উদ্দেশ্যে দলের স্লোগান কে চ্যালেঞ্জ করলেন শুভেন্দু? সাবেক বিজেপির সিংহভাগ এই নিয়ে চিন্তিত। তার ওপর সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেওয়ার ডাক! সঙ্ঘেরও মুসলিম সংগঠন আছে। বিজেপির মতো তথাকথিত ডিসপ্লিন্ড দলে এতটা ‘দুঃসাহস’ কী করে দেখালেন শুভেন্দু? কী তাঁর উদ্দেশ্য? কে তাঁর পিছনে? ভাবছে বিজেপি। ভাবছে সঙ্ঘ।