দেবক বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ দিদির জন্মদিন।
জন্মদিন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সরকারি খাতায় এটাই দিদির জন্মদিন।
সফিসটিকেটেড রাজনীতির ভক্তরা, কোনোদিনই দিদিকে তেমন নম্বর দেয়নি। তাদের স্নবারি দিদিকে প্রতিনিয়ত অপমান করেছে। TMC কে যারা তিন মাসের কংগ্রেস বলে একপ্রকার শ্লাঘা বোধ করেছিল, তাদের অনেকের চোখের সামনেই ২৫ পেরিয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক আক্রমণ তো তবু গ্রহনযোগ্য, যারা দিদিকে কদর্য ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে, চুড়ান্ত অপমান করেছে , তাদেরও কেউ কেউ দিদির কৃপায় ক্ষমতার অলিন্দে থেকে জীবনটা দিব্য কাটিয়ে দিলেন।
আজ চারিদিকে খোশামোদ (সন্মান ও হতে পারে) করার লোকের অভাব না থাকলেও, অপমানের সুদীর্ঘ ধারাবাহিকতা জড়িয়ে রয়েছে দিদির জীবনের সঙ্গে।
যে ভদ্রমহিলা আর কয়েকবছর পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন তাঁকে একটি ‘সেরা’ পুরস্কার দিতেও অস্বীকার করেছে, এ রাজ্যেরই একটি শক্তিশালী মহল।
শোনা যায়, এমন কথাও নাকি বলা হয়েছিল, রাস্তায় বসে ধর্না দেওয়া কেউ, আর যাই হোক, তাদের বিচারে সেরা হতে পারে না।
তবে তাদের বিচার বদলেছিল। সম্ভবত পরিস্থিতির বিচার করে এবং তাদের কল্পলোকের সঙ্গে বাস্তবের ফারাক বুঝতে পেরে, সেরা সন্মান দেওয়া হয়েছিল দিদিকে।
বাংলার মননকে শাসন করা সেই প্রাসাদে ‘বস্তির মেয়ে’ সেদিন যে বার্তা দিয়েছিলেন, তার অভিঘাত এখনো বিদ্যমান।
অনেক শহুরে শিক্ষিতদের দেখেছি, তাঁর সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বলতেন, ওই মেয়েছেলেটা! কেন বলতেন বা বলেন? কারন নালার ধারে বস্তিতে বেড়ে ওঠা, হাটের মাঝে কলঘর, সেখানে স্নান করতে হয়। ভুল ইংরেজি বলেন , বাংলাও বলেন অমার্জিত, তৎসম শব্দের তেমন ব্যবহার নেই। এমন মহিলাকে ভদ্রমহিলা বলা যায় কিনা তা বুঝে উঠতেই পারলেন না বড় কলেজের কোনো কোনো প্রাক্তনী।
রবীন্দ্রনাথের একটি পংক্তি মনে পড়ছে, ‘বসনভূষা মলিন হলো ধুলায় অপমানে’… বাস্তবিক দিদির নীলপাড় সাদা শাড়ি শুধুমাত্র ধর্নার ধুলোয় নয়, অসংখ্যবার মলিন হয়েছে অন্তঃসারশূন্য আত্মম্ভরিতার অপমানে।
একদা দিদির সঙ্গে থেকে পরে ছেড়ে না এলে, যাদের কথার কোনো মূল্য থাকত না, তারাও দিদিকে কথায় কথায় অশিক্ষিত বলেছে বা এখনো বলে।
এই ৬৭ বছরে (দিদি হয়তো ৬৭ না মানতেও পারে। কারন, স্কুলে ভর্তি করার সময় তাঁর পিতৃদেব, তাঁর দাদার বয়েসের সঙ্গে ত়াঁর বয়েস ও একই দিয়েছিলেন, এ কথা ঘনিষ্ঠ মহলে দিদি বলেছে। সেই হিসেব ধরলে দিদির বয়েস ৬২)
প্রাপ্তির ঝুলি ভরে উঠলেও বহু বিষজ্বালা দিদির মনে গেঁথে রয়েছে। অপমানের উদাহরণ আরো আছে।
নিরন্তর অপমান দিদিকে উত্তরণ দিয়েছে কিনা দিদিই বলতে পারবে। শেষে এইটুকু বলা যায়, এগারোতে সিপিএম কে পরাস্ত করে দেখিয়ে দিয়েছিল দিদি, একুশে মোদিকে রুখে দিয়ে আরো একবার দেখাল। এবার চব্বিশ।
(ব্যক্তিগত টোনে লেখা, তাই আপনি সম্বোধনে লেখা হয় নি)আজ দিদির জন্মদিন।